‘আইনজীবীদের জন্য যা যা করণীয় সরকার তা করবে’
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৬, ০১:৪৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেছেন, আমরা চেষ্টা করছি যেন আমাদের বিচার বিভাগ এবং আইনজীবীরা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব কর্মস্থলে ভালভাবে একটি সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে পারেন। তার জন্য যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলোও চলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে গতি অব্যাহত রাখার জন্য সকলের দোয়া কামনা করে বলেছেন, ‘আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই, দোয়া করবেন। এই রমজান মাসে যেন আমাদের উন্নয়নের গতিটা অব্যাহত থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী ১৪ জুন মঙ্গলবার সুপ্রীম কোর্ট চত্বরে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ভোট ও ভাতের আন্দোলনসহ সকল গণআন্দোলনেই আমরা দেখেছি, আপনাদের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। যার ফলে আজকে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। সুসংহত করতে পেরেছি এবং উন্নয়নের গতিধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমি আশা করি এই গতিধারা অব্যাহত থাকবে যাতে কখনও কেউ আমাদের হেয় চোখে দেখতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ডিজিটাল পদ্ধতি এসে গেছে। পুরনো আইনগুলোকে আমরা যুগোপযোগী করে পার্লামেন্টে পাস করে যাচ্ছি। যুগোপযোগী আইন ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সুপ্রীম কোর্ট বারের সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। ইফতারির পূর্বে দেশ-জাতি এবং সমগ্র মুসলিম উন্মাহর শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী আইনজীবিদের জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে বলেন, সুপ্রীম কোর্টের অ্যানেক্স ভবন থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশে বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে সব ধরনের উদ্যোগের পাশাপাশি আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু যেহেতু এরপর আমরা পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাদের অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনার মত এটির কাজও বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়। আবার আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
সুপ্রীম কোর্ট চত্বরে বহুবার তিনি এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন এখানে এসেছি। মামলার আসামী হিসেবে তো আসতেই হয়েছে। আর তাছাড়া বিভিন্ন সময় দেখেছি, আমাদের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তাদের একটি বিরাট ভূমিকা সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রয়েছে। এমনকি আমার মনে পড়ে ১৯৮৮ সালে ২১ জানুয়ারি যখন আমার ওপর তুমুল গুলি চলছিল চট্টগ্রামে তখন সেখানকার আইনজীবীরা আমাকে বার ভবনে নিয়ে গিয়ে শেল্টার প্রদান করেছিল।
তিনি আইনজীবীদের দাবির প্রেক্ষিতে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, বহুতল ভবন তো আমরা বহুই নির্মাণ করেছি। তবে আমাকে বলা হয়েছে বহুতল ভবনের কথা। কিন্তু এটা কিসের জন্য সেটা পরিষ্কার বলা হয়নি। এটাকে প্রধানমন্ত্রী ওকালতির মারপ্যাচ বলে উল্লেখ করে ভবন নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা বারসহ সারাদেশেই আমরা বহু জায়গায় প্রয়োজনের তাগিদে বহুতল ভবন করে দিয়েছি। এখানেও করে দেব। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য তিনি বারের সভাপতির কাছ থেকে জেনে নেবেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অতীত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, বহির্বিশ্বে আগে বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের দেশ হিসেবে অবহেলার চোখে দেখা হত। আমার খুব কষ্ট হত।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগ তীতিক্ষার মধ্যদিয়ে অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কাজেই কেউ আমাদেরকে অবহেলার চোখে দেখবে এটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই ’৯৬ সালে যখন রাষ্ট্রের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি তখন থেকেই দেশের উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহর রহমতে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর ওই ভিক্ষার ঝুলির দেশ নয়। আমাদের বাজেট আমরা বৃদ্ধি করেছি। বাজেটের শতকরা ৯০ ভাগ আমরা উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি, রিজার্ভ বৃদ্ধি করেছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত মে মাসে আমরা এই মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে আনতে এবং প্রবৃদ্ধি আমরা ৭ দশমিক শূন্য ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে যাচ্ছি। আর এটিই বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। আজকে বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে এবং সমগ্র বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
তিনি এ সময় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে- ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু আমি সব সময় বিশ্বাস করি আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি। কাজেই আমরা কখনও নিম্ন থাকতে পারি না, আমাদের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে এবং এই চিন্তা-চেতনা নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
সূত্র: বাসস