৭২ শতাংশ নারী স্বামীর নির্যাতনের কথা গোপন রাখেন
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০১৭, ১১:২০
সর্বশেষ সরকারের জরিপ থেকে জানা যায়, স্বামীর নির্যাতনের শিকার হলেও ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তাঁদের ওপর নির্যাতনের কথা কখনোই অন্যদের জানাননি। শহর ও গ্রামে প্রায় একই চিত্র। নির্যাতনের কথা নারীরা নিজের পরিবার, শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীদের কাছে জানান। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ, চিকিৎসক, ধর্মীয় বা এলাকার মুরব্বিদের কাছে তা জানানোর সংখ্যা খুব কম।
নির্যাতনের পর মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী আইনি সহায়তা নিয়েছেন। এর মধ্যেও সালিসব্যবস্থাই প্রাধান্য পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন সার্ভে ২০১৫’ শীর্ষক দ্বিতীয় জরিপের ফলাফলে এ চিত্র তুলে ধরা হয়। জরিপ বলছে, নির্যাতনের কথা গোপন করার দিক থেকে বরিশাল এগিয়ে। এখানকার প্রায় ৭৬ শতাংশ নারী কাউকে জানাননি নির্যাতনের কথা।
ওই জরিপেই বলা হয়, বর্তমানে বিবাহিত নারীদের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় স্বামীর হাতে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার। ২০১১ সালে প্রথম জরিপে এ সংখ্যা ছিল ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ।
জরিপ বলছে, ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ নারী নির্যাতনের কথা কাউকে জানানোরই প্রয়োজন মনে করেননি। এ ক্ষেত্রেও শহর ও গ্রামের চিত্র প্রায় একই। নির্যাতনের পর পুলিশের কাছে যান ১ দশমিক ১ শতাংশ নারী। স্থানীয় নেতাদের কাছে যান ২ দশমিক ১ শতাংশ আর এনজিওর সহায়তা চেয়েছেন মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ নারী। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে সহায়তা চাওয়ার সংখ্যাও কম।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত জরিপে নির্যাতনের কথা গোপন করার কারণগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। নির্যাতনের পর পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, স্বামীর কাছে আরও বেশি নির্যাতনের ভয়ে ১২ শতাংশ, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং লজ্জায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী প্রকাশ করেননি নির্যাতনের কথা। স্বামীর ভয়ে নির্যাতনের কথা গোপন করার বিষয়টি মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রংপুর ও রাজশাহীতে। চট্টগ্রামে পরিবারের সুনাম নষ্ট হওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
দেশের সাতটি বিভাগের শহর, গ্রাম, সিটি করপোরেশন এবং সিটি করপোরেশনের বাইরের শহরকে এ জরিপের আওতায় আনা হয়েছে। শারীরিক, যৌন, অর্থনৈতিক, স্বামীর নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ বা মনোভাব এবং আবেগজনিত নির্যাতনকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে ১৫ বছরের বেশি বয়সী ২১ হাজার ৬৮৮ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ২০১৫ সালের ১৩ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সরকারের সর্বশেষ জরিপমতে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন নম্বর ১০৯২১ (বর্তমানে ১০৯) সম্পর্কে জানেন মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১২ সালের জুন মাসে সরকার এ সেবা চালু করে। নির্যাতনের শিকার বা নির্যাতনের আশঙ্কায় থাকা যে কেউ এ নম্বরে ফোন করে সহায়তা নিতে পারেন। চলতি বছরের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৬১টি পাঠ্যবইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় নম্বরটি দেওয়া হয়। তবে ১ মার্চ থেকে হেল্পলাইন নম্বরটি (১০৯) পরিবর্তন হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী হেল্পলাইন নম্বরটি যাতে মানুষ সহজে মনে রাখতে পারে, সেভাবে করা হয়। এ চিন্তা থেকেই বিটিআরসির কাছ থেকে বিশেষ বিবেচনায় নতুন নম্বরটি পাওয়া গেছে।
জরিপের বিষয়ে আবুল হোসেন সরকার বলেন, হয়তো হেল্পলাইন নম্বরটি প্রতিটি ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। তাই নম্বরটির প্রচার বাড়িয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। যে নারীরা আর কারও কাছেই নির্যাতনের কথা প্রকাশ করতে পারেন না, তাঁরা একটি ফোন করেই নির্যাতনের তথ্য জানিয়ে সহায়তা পেতে পারেন।