'এ দেশের একটি নারীও নিরাপদ নয়'

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:১৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

এই দেশে কোন নারীই এখন নিরাপদ নয়, ঘরে বাইরে সব জায়গায় তারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে, এমনটাই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যৌথ উদ্যোগে এই নারী নির্যাতন বিরোধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বক্তারা। মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘পরিবার ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারী ও কন্যার প্রতি উত্ত্যক্তকরণ, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নির্মূল কর’ স্লোগানে পালন করা হয় এবারের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইনজীবী দীপ্তি সিকদার এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য আবুল ফারাহ্ পলাশ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রস্তাব পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সদস্য হালিমাতুস সাদিয়া। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী পথনাটক, গান, কবিতা আবৃত্তি পরিবেশনা করা হয়।

সমাবেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কদ্দুস বলেন, “সমাজে শুধু নারী ও শিশুই নয়, সংখ্যালঘু, আদিবাসী, নানা শ্রেণি পেশার মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে আমরা এদেশকে স্বাধীন করেছিলাম, স্বপ্ন দেখেছিলাম এমন একটি রাষ্ট্রের যেখানে সকলে সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে।”

তিনি বলেন, “দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন আমরা বন্ধ করতে চাচ্ছি। এর জন্য প্রচলিত অনেক আইন আছে, কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নেই। কারণ যারা আইন প্রয়োগ করবে তারা সৎ নয়। আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে আমাদের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। তাই আইন দিয়ে নয়, নীতি নৈতিকতার যে স্খলন সমাজে ঘটছে তা দূর করার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে।”

পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে একসাথে কাজ করে মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলারও আহ্বান জানান সাংস্কৃতিক জোটের এই সভাপতি।

জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, “নারীরা দুর্যোগ সামাল দেওয়ার যোগ্যতা রাখে, কিন্তু তাদের দুর্যোগ সামাল দিতে দেওয়া হয় না। কারণ এই সমাজে নারীরা নিরাপদ নয়। একটি কলেজ ছুটি হলে বিভিন্ন বয়সের পুরুষরা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকে, যা দেখে মনে হয় এ দেশের একটি নারীও নিরাপদ নয়।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও বহমানতা কখনও নারীকে বাদ দিয়ে হবে না। কাজেই নারীকে নিয়েই দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে হবে।”

মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, “তনু, রিষা, পূজা, খাদিজাদের মত শত শত মুখ আজ আমাদের সামনে ভিড় করে, যা দেখে মনে হয় নারী হয়ে জন্মানোর কারণেই তাদের এই পরিণতি। এর কারণ হচ্ছে আমরা নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। নারীর প্রতি যে বৈষম্য সমাজে বিরাজমান, তারই একটি ফলাফল হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা।”

সিডও সনদের সংরক্ষিত ধারা দুটি থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার এবং শর্তহীন ভাবে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে নারী-পুরুষের সমতা রক্ষার কাজকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” 

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আয়শা খানম বলেন, “আমরা এই শহীদ মিনারে আসি সাহস যোগাতে, প্রতিজ্ঞা করতে। আজ দেখি কারো বোন, কারো কন্যা, কারো সন্তান নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছে, অনেক সময় খুব কাছের মানুষগুলো দিয়ে। আড়াই থেকে ষাট বছরের নারীরা আজ নিরাপদ নয়।

“যার গর্ভে আমরা জন্ম নেই, যার সাথে জীবন যাপন করি, যে শিশু আমরা বড় করি, যার সাথে আমরা বন্ধুত্ব করি তারা প্রত্যেকেই মানব সন্তান। নারীকে যে মানব সন্তান হিসেবে দেখা হয় না, এটাই হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ। আজ আসুন, প্রতিজ্ঞা করি, আজকে থেকে ঘরে ফিরে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখব।”

পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নারীরা সমাজের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারী আজ এই অবস্থার শিকার। পারিবারিক এবং প্রাকৃতিক ভাবে আমরা ভিন্ন দায়িত্ব পালন করি কিন্তু আমরা মানব সন্তান।”

তনু হত্যা সহ সকল নারী নির্যাতনের বিচারের দাবি জানিয়ে যে কোনো স্থানে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান আয়েশা খানম।

তিনি বলেন, “মানব ধর্মের উপর কোনো ধর্ম নেই। নারী শিশুর নির্যাতন প্রতিরোধ করতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার জন্য যার যার জায়গা থেকে সকলে একসাথে কাজ করব।”

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত