বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে বিশেষ বিধান বাতিলের দাবি
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০১৭, ০০:০৯
২০১৪ সাল থেকেই সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন- এ বিশেষ বিধান বাতিল করে কন্যাশিশুর ন্যুনতম বিয়ের বয়স শর্তহীনভাবে ১৮ করার দাবিতে বিভিন্ন প্রতিবাদ, কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু জাতীয় সংসদে বিশেষ বিধান বহাল রেখেই বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ পাশ হয়েছে। সরকারের এ হেন সিদ্ধান্তে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি, গার্লস নট ব্রাইডস বাংলাদেশ, চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন এবং জাগো ফাউন্ডেশন 'গভীর উদ্বেগ, বিষ্ময় ও ক্ষোভ' প্রকাশ করে এবং তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ১ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন করে। একই সাথে এই আইনটি পরিবর্তনের দাবিও জানানো হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম বলেন, "১৯২৯ সালে যে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে সেই আইনটিকে যুগোপযোগী করার জন্য ২০১৪ সালে পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই আইনটি কিভাবে যুগোপযোগি করা যায় তার জন্য সরকারের সাথে বিভিন্ন সময় আমরা বসেছি সুপারিশ দিয়েছি। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ যখন এই আইনটি পাশ হল তা দেখে আমরা বিষ্মিত। যে বিশেষ বিধান রেখে এই আইনটি পাশ হয়েছে তা আইনটির মূল গতিকে নষ্ট করে ফেলবে। যারা নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী নয়, যারা ধর্ষক তারা এই আইনের সুযোগ নিবে যার ফলে নারীরা আরো নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হবে। একই সাথে এই আইনটি সকল আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক হবে"।
তিনি আরো বলেন, "এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চের যে স্লোগান তার সাথেও সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাঘর্ষিক। মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয় কাজেই আইন যেন মানুষের জন্য হুমকি না হয় সেই বিষয়টি বিবেচনার জন্য আবারো সরকারের কাছে দাবি জানাই"।
সব শেষে আয়শা খানম বলেন, "আমাদের এখনো প্রত্যাশার জায়গা আছে। আমরা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিবো। তিনি যেন এই আইনে স্বাক্ষর না করেন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সকল নারী সংগঠনগুলো একত্রিত হবে"।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, "এই সরকারের মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু ভাল ভাল আইন পেয়েছি কিন্তু সব আইনের প্রয়োগ দেখিনি। আইন তৈরি হয় অপরাধ কমিয়ে আনার জন্য। কিন্তু সেই আইন যখন নতুন কোন অপরাধের জন্ম দিবে তা আমরা মেনে নিবো না। কাজেই এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা এই আইন পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি"।
চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে লায়লা খন্দকার বলেন, "১৮ এর নিচে যে কেউ শিশু। এই আইনে বেশ কিছু বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট নয় যেগুলো আমাদের সামনে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে হবে। এই বিষয়গুলো হল অপ্রাপ্ত বয়স্কের এখানে বয়স কত হবে তা উল্লেখ নেই, এই আইনে অভিবাবকের কথা বলা হয়েছে কিন্তু অভিভাবক পিতা-মাতা ছাড়া আর কে হবে সেই বিষয়ে উল্লেখ নেই, এই আইনে শিশুর মতামতের কথা বলা হয়নি, এই আইনে বিশেষ বিধান কি সেই বিষয়েও কোন কিছু উল্লেখ নেই। কাজেই এই বিষয়গুলো সম্পূর্ণরূপে আমাদের কাছে পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন"।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক রোকেয়া কবির, গার্লস নট ব্রইডসের পক্ষ থেকে হাবিবুর রহমান, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভলপমেন্টের রঞ্জন কর্মকার, কন্যাশিশু অ্যডভোকেসি ফোরামের নাছিমা আক্তার জলি, আইন ও শালিস কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর রওশন জাহান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের বনশ্রী মিত্র, অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের সেলিনা আহমদ, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রেহানা বেগম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের তাহমিনা হক প্রমুখ।
বক্তারা সকলে এই আইনের পরিবর্তনের দাবিতে একমত পোষণ করেন। তারা বলেন আন্তর্জাতক বিভিন্ন সনদ ও নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক এই আইন আমাদের সমাজকে আরো পিছিয়ে নিয়ে যাবে। নারী যতটুকু অগ্রসর হয়েছে এই আইন তাকে আরো পিছিয়ে নিয়ে যাবে। নারী আন্দোলনের এতদিনে যে অর্জন সেই অজর্নগুলোকে যেন ধরে রেখে নারী আন্দোলন নারীর ক্ষমতায়নের পথকে সুগম করতে পারে তার জন্য সরকারের কাছে আবারো এই আইনের পরিবর্তনের দাবি রাখেন বক্তারা।