সুন্দরবন রক্ষার হরতাল
টিয়ারশেল, রাবার বুলেট উপেক্ষা করেই চলছে আন্দোলন
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৩৮
পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেল ও মুহুর্মুহু রাবার বুলেট উপেক্ষা করেই ঢাকা শহরে চলছে সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আধাবেলা হরতাল। সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে জাতীয় কমিটির পাশাপাশি বাম সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে এই হরতাল পালিত হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় এই হরতাল শুরুর পর শাহবাগ থানার সামনে ব্যারিকেড দিয়ে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের উপর কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তারসহ বিক্ষোভে থাকা অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান তারা। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার রাবার বুলেটে আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগরের সভাপতি অনিক রায়।
আন্দোলনকারীরা জানান, সকাল ৬টার দিকে বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা টিএসসি মোড় থেকে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তায় গিয়েই তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আবার তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছোড়ে। বাধা পেয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা চারুকলা অনুষদের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন এবং সেখানে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এরপর সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যতবারই বিক্ষোভকারীরা শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, ততবারই পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের হটিয়ে দিয়েছে। কয়েক দফা ব্যবহার করা হয়েছে জল কামানও। জাদুঘর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকার মধ্যে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার টিয়ারশেল ছোঁড়া হয়। কয়েকটি টিয়ারশেল চারুকলা অনুষদের ভেতরে এসে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।
এই ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক কয়েক দফা টিয়ারশেল ছোড়া হয়েছে স্বীকার করলেও রাবার বুলেটের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
তিনি বলেন, “বিক্ষোভকারীদের শাহবাগ মোড়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আশপাশে কয়েকটি হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এ কারণেই পুলিশ বাধা দিয়েছে।
এদিকে কাঁদুনে গ্যাস থেকে বাঁচতে আন্দোলনকারীরা চারুকলা অনুষদের ভেতরে অবস্থান নিলে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সেখানেও টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ।
চারুকলার ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী জয় প্রকাশ বলেন, “অন্তত ৬টা শেল মেরেছে ভেতরে। শিক্ষার্থীরা ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে গ্যাস থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।”
এ সময় চারুকলার লাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের একটি ঘরের ওপর একটি টিয়ারশেল এসে পড়লে ওই ঘরে থাকা দেড় বছরের একটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শিশুটির বাবা মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, “ঘরের ভেতরে আমার বউ ছিল আর বাচ্চা ছিল। গ্যাসে বাচ্চার অবস্থা খারাপ।”
তবে চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা শিশুটিকে শুশ্রূষা দিচ্ছেন বলে জানান সোলায়মান।
এদিকে হরতালের সমর্থনে পল্টন, প্রেসক্লাব, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায় সকাল থেকে মিছিল চললেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও গোলাযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
হরতালের মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর পল্টন মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় পল্টন থেকে দৈনিক বাংলা পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।