ভোটার নিবন্ধনে পিছিয়ে নারীরা
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:২৪
সর্বশেষ আদমশুমারিতে বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা কয়েক লাখ বেশি হলেও নারী ভোটারের সংখ্যা এখনো অনেক কম। নারী ভোটার কম হওয়ার কারণ হিসেবে প্রত্যন্ত এলাকায় রক্ষণশীলতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতার ঘাটতির কথা বলছেন বিশ্লেষকরা।
সোমবার দেশজুড়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে স্থানীয় নির্বাচন অফিস। হালনাগাদে সব মিলিয়ে এবার ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ জন ভোটার হয়েছেন। হালনাগাদে নিবন্ধিতদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ৩১ জানুয়ারি। দাবি, আপত্তি-নিষ্পত্তি শেষে নতুনরা যুক্ত হবেন ভোটার তালিকায়।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, বিদ্যমান ভোটার তালিকায় মোট ভোটার ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ১২ লাখ ৬ হাজার ৪১৮ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৩ জন।
নতুনদের নিয়ে বছরের শুরুতে দেশের মোট ভোটার ১০ কোটি ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ছাড়াবে বলে মনে করছেন আসাদুজ্জামান।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের কিছু বেশি। সে হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ২৭ লাখের মতো নাগরিক ভোটার হয়েছেন।
নতুন ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজারের বেশি এবং নারী ৫ কোটি ৮ লাখের সামান্য বেশি হবে বলে জানান আসাদুজ্জামান। সে হিসাবে নারীর তুলনায় পুরুষ ভোটার ১৩ লাখের মতো বেশি হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তা।
তবে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন ২০১১ অনুযায়ী, ১৫ ও তার বেশি বয়সীদের সংখ্যা (বয়স, লিঙ্গ ও আবাসন) ৯ কোটি ১৭ লাখ ৫ হাজার ৯৯২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৮ এবং নারী ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৪। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারী প্রায় ১১ লাখ বেশি।
নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, হালনাগাদে ৯ লাখ ২ হাজার ৮১২ জন পুরুষ এবং ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬০ জন নারী ভোটার হতে নিবন্ধিত হয়েছেন। শতকরা হিসাবে পুরুষ ৬০ এবং নারী ৪০ জন।
তিনি বলেন, আদমশুমারিতে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হলেও ভোটার তালিকায় উল্টো ব্যবধান কমানো যায়নি। অনেক প্রচারণা করার পরও নারীদের ভোটার হতে অনাগ্রহ রয়েছে দেখা যাচ্ছে। তবে হালনাগাদে নারীদের পুরুষের চেয়ে কম ভোটার হওয়ার প্রবণতা সাধারণত প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় দেখা গেছে। আগামীতে প্রচারণা আরও বাড়াতে হবে।”
তবে এজন্য নির্বাচন কমিশনের প্রচারণার অভাবকে দুষছেন নারীদের ভোটার হতে আগ্রহী করতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম।
তিনি বলেন, “নারীদের ভোটার করতে ব্যাপক প্রচারণা নেয় না ইসি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ভোটার করতেও কিছুটা উদাসীনতা রয়েছে। সেই সঙ্গে রক্ষণশীল নারীদের একটি অংশ এখনও নিজেদের দূরে রাখে।”
এ বছর হালনাগাদ কাজের দুর্বলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ হওয়ায় সোয়া ১১ লাখ ভোটার হয়েছে। সেখানে এবার তা করা হয়েছে মাত্র তিন সপ্তাহের জন্য, ভোটার হয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ৭১ হাজার জন। এবার বাড়ি বাড়ি যায়নি তথ্য সংগ্রহকারীরা। আগ্রহীদেরই আসতে হয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিসে। এ কারণে নারী ভোটারও কম হয়েছে।”
ভোটার হতে উদ্বুদ্ধকরণে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “প্রয়োজনে ভোটার দিবস নামে বিশেষ কর্মসূচিও পালন করা যেতে পারে। অনেক দেশে ইসির জন্মদিনকে ভোটার দিবস পালন করা হয়। এটা করলে মানুষ জানবে, ভোটার হতে আগ্রহী হবে।”
তার মতে, বর্তমানে স্মার্টকার্ড প্রকল্প এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকে নিজের প্রয়োজনে ভোটার হচ্ছেন। স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়ে এ কার্যক্রম চালু হলে জনগণ সেবা পাওয়ার পাশাপাশি ভোটার হওয়ার যোগ্যরাও সাড়া দেবে।
ভোটার বাড়াতে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্ত না করতে ইসির কঠোর পদক্ষেপ বজায় রাখার পরামর্শ দেন আলীম।