সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ১৮:৫১
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বিশেষজ্ঞ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে আসা জন কেরি সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে বৈঠকে এসব বলেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান।
ইহসানুল করিম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। টেরোরিজমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-ইউএস একসঙ্গে লড়াই করবে। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তাদের যথেষ্ট এক্সাপার্টিজ আছে। তারা এ বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন।”
ইহসানুল করিম বলেন, “প্রযুক্তি সুবিধায় এগিয়ে থাকায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক তথ্য আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেসব তথ্য তারা আমাদের দিলে জঙ্গি ধরতে সুবিধা হবে।”
আইএস ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে পড়ায় তাদের বিদেশি যোদ্ধারা (যারা সিরীয় নন) নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন বলে জন কেরি জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার কাছে জানতে চান, আইএসের অর্থ ও অস্ত্র কোথা থেকে আসছে। জবাবে কেরি বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস এর দখল করা খনি থেকে তেল বিক্রি করে অর্থ পাচ্ছে তারা।
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদকে একটি ‘বৈশ্বিক সমস্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে এর বিরুদ্ধে সচেতনা তৈরিতে বাংলাদেশে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বলে প্রেস সচিব জানান।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করে কেরিকে বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’- এই নীতি নিয়ে তার সরকার কাজ করছে।
খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দারিদ্রের হার কমিয়ে আনার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে মত দেন জন কেরি।
“বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা দুর্দান্ত কাজ করছ’।”
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদাত্বের বিষয়েও কেরি কথা বলেন বলে ইহসানুল করিম জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রেস সচিব বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জন কেরি বলেছেন, হি ইজ ইমপ্রেসড।”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় কেরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সিনেটর এডওয়ার্ড মুর কেনেডির (টেড কেনেডি) সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ঘিরে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলেনের ঘটনাবলী তাকে বলেন।
প্রেস সচিব জানান, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেন বৈঠকে।
“জবাবে জন কেরি বলেন, আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইওর সেনসিটিভিটি। দিস ইস্যু ইজ আন্ডার রিভিউ।”
উল্লেখ্য, এক দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে সোওবার সকালে ঢাকা পৌঁছান জন কেরি। ২০১২ সালে হিলারি ক্লিনটনের সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বেলা ১২টা ১০ মিনিটে কেরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে কেরির সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।