দুই আসামির জবানবন্দি: সিরাজের নির্দেশেই নুসরাতকে আগুন

প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৫৬

জাগরণীয়া ডেস্ক

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম প্রধান আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন। ১৪ এপ্রিল (রবিবার) রাতে প্রায় ১০ ঘন্টা ধরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা।

পিবিআই জানায়, আসামি নূর উদ্দিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত জবানবন্দি দেন। এরপর রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত জবানবন্দি দেন আরেক আসামি শাহাদাত হোসেন। এসময় ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন দুই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ১০ ঘন্টার জবানবন্দিতে দুই আসামি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন। কারাগারে আটক সিরাজের নির্দেশেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন তারা। 

পিবিআই আরও জানায়, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে এসে অগ্নিদগ্ধ হন ঐ ছাত্রী। পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকার পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। কিন্তু রাফি এ ব্যাপারে সম্মতি না দেয়ায় তিনজন শিক্ষার্থী মিলে তার হাত ধরে রেখে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এসময় তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ছুটে এসে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা বিবেচনায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। 

ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তার নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে শ্লীলতাহানি করেন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় এখনো কারাগারে আছেন ঐ অধ্যক্ষ। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ও অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের দু'টি অংশ আলাদা আলাদাভাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। পরিবারের অভিযোগ, এ বিষয়ে স্বজনদের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের চাপ দিয়েও প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। 

শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া নুসরাত ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিল। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঐ ছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা থাকলেও মেয়েটির শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় শেষ মুহুর্তে তা সম্ভব হয়নি। 

গত ১০ এপ্রিল (বুধবার) রাতে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদী নুসরাত জাহান রাফি। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত