নুসরাতকে হত্যা: পপি-জোবায়ের রিমাণ্ডে

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:৫৭

জাগরণীয়া ডেস্ক

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার নুসরাতের সহপাঠী ও অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি এবং মামলার এজহারভুক্ত আসামি মাদ্রাসাছাত্র জোবায়ের আহমেদকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

১১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে দুই জনকে ফেনী জেলা জজ আদালতে তুলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল পপি ও যোবায়েরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে সাত দিনের এবং ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে এসে অগ্নিদগ্ধ হন ঐ ছাত্রী।

ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তার নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে শ্লীলতাহানি করেন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় এখনো কারাগারে আছেন ঐ অধ্যক্ষ। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ও অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের দু'টি অংশ আলাদা আলাদাভাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।

বোনের বরাত দিয়ে নোমান বলেন, রাফি এ বছর আলিম পরীক্ষা দিচ্ছেন। শনিবার সকালে রাফির আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা থাকায় বোনকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। সেসময় কয়েকজন ছাত্র ও অফিস সহকারী মো. মোস্তফা তাকে মাদ্রাসায় ঢুকতে বাধা দিলে তিনি বোনকে কেন্দ্রে দিয়ে চলে যান। পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকার পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। কিন্তু রাফি এ ব্যাপারে সম্মতি না দেয়ায় তিনজন শিক্ষার্থী মিলে তার হাত ধরে রেখে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এসময় তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ছুটে এসে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা বিবেচনায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া ওই ছাত্রী ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিল সে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঐ ছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা থাকলেও মেয়েটির শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় শেষ মুহুর্তে তা সম্ভব হয়নি। 

গত ১০ এপ্রিল (বুধবার) রাতে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদী নুসরাত জাহান রাফি। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত