গর্ভের সন্তানসহ দগ্ধ হলেন স্বামী-স্ত্রী
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৯
স্ত্রী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা, এছাড়াও শারীরিক আরো নানান জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণেই আগুন লাগার পরেও ভবন থেকে নামতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু স্ত্রীকে একা ফেলে নামতে চাননি স্বামী নিজেও। অতঃপর গর্ভে অনাগত সন্তান সহ দুজনেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডেই মর্মান্তিক সমাপ্তি ঘটেছে এই পরিবারের।
২১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে মরদেহ শনাক্ত করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন রিয়া ও রিফাতের স্বজনরা। চকবাজারের নন্দ কুমার দত্ত রোডের 'ওয়াহিদ ম্যানশন' ভবনের তৃতীয় তলায় থাকতেন গর্ভবতী নারী রিয়া ও তার স্বামী রিফাত। আগুন লাগার পর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন রিফাত। তিনিই জানান, অসুস্থ থাকায় রিয়া নিচে নামতে পারছিলেন না। আর তাই প্রিয়তমা স্ত্রীকে ফেলে নিজেও নিচে নামেননি রিফাত। আগুনে পুড়ে একসঙ্গে মারা যান তারা।
মাত্র দুই বছর আগে বিয়ে করা রিয়া ও রিফাতের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবারের সদস্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে মরদেহ শনাক্তে আসতে হয়েছে নিহতের বন্ধুদের। তবে এখনো মরদেহ শনাক্ত করতে পারেননি তারা।
উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) রাত সাড়ে ১০টার পর চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন ছিল। ওপরে ছিল পারফিউমের গোডাউন।
এলাকাবাসী বলছেন, ওই ভবনের কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়েছে।
খবর পেয়ে এ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম।
বৃহস্পতিবার দুপুর বেলা দেড়টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই অগ্নিাকণ্ডে ৭৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৭ জন নারী ও পাঁচটি শিশু রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। নিহতদের অধিকাংশকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ; খোঁজ নেই অনেকের।