জন্মের পরই হাত বদল হলো নবজাতকের
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:০১
মা অসহায়, কন্যাশিশু লালন-পালনের ক্ষমতা নেই। তাই সচ্ছল কারো হাতে সন্তানকে দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে হারিয়ে গেলেন এক মা।
গত ১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বেলা তিনটায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন সন্তানসম্ভবা জেসমিন আকতার (১৮)। রাত সাড়ে আটটায় তিনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি সুস্থ কন্যাসন্তান প্রসব করেন। পরে নবজাতক সন্তানকে বাঁশখালী পৌরসভার এক ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান তিনি। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালে গাইনি বিভাগে ভর্তি থাকা আরেক প্রসূতি শিরিনা আকতার বলেন, জেসমিন আকতার তাকে বলেছিলেন, জেসমিনের মা নেই, বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছেন। এরপর তিনি তার বাবার বড় ভাইয়ের কাছে থাকতেন। বছরখানেক আগে নোয়াখালীর আবুল খালেক নামের এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় এবং বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনপর তার স্বামীও তাকে ছেড়ে চলে যান। সন্তান প্রসবের সময় হলে জেসমিন আকতার একাই হাসপাতালে ভর্তি হন।
সন্তান প্রসবের পর জেসমিন আকতার বলেছিলেন, আমি খুব অসহায়। দুনিয়াতে আপনজন বলতে কেউ নেই। এই সন্তান লালন-পালনের ক্ষমতাও আমার নেই। আপনারা দয়া করে এমন কোনো পরিবারকে খবর দেন, যারা আমার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স জয়তুন আরা বেগম বলেন, জেসমিনের করুণ কাহিনি শুনে আমি তার নবজাতককে আমার এক আত্মীয়ের হাতে তুলে দিয়েছি। আর্থিকভাবে তারা সচ্ছল।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা জুবুরিয়া শারমিন বলেন, স্বাভাবিক প্রসবের সময় হাসপাতালে আমি উপস্থিত ছিলাম। নবজাতকটিকে বিক্রি করা হয়নি। মেয়েটি কোনোভাবেই তার নবজাতককে নিয়ে যেতে চাইছিল না। হাসপাতালের নার্সের এক আত্মীয় ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখানোয় তাদের হাতে নবজাতকটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
নবজাতকটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া আজিজ আহমদ বলেন, আমার দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। মেয়েসন্তান না থাকায় নবজাতকটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগের নিবন্ধন বইয়ে তার ঠিকানা বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়ন এবং স্বামীর নাম আবুল খালেক ছাড়া আর কোনো তথ্য তিনি দেননি। শেখেরখীল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও কেউ তার পরিচয় কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।