'মামলা গুনাগুনের ভিত্তিতে নিস্পত্তি করা প্রয়োজন'
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০১৮, ২১:৩৮
আজ ৩০ জুলাই, ২০১৮ সোমবার বিকালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটরিয়াম, ঢাকাতে ‘আসুন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি, নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মাননীয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বাংলাদেশের মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাড. মাহবুবে আলম এবং বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এ. এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) মো. জাফরোল হাছান। উক্ত মতবিনিম সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিচালক, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লবি অ্যাড. মাকছুদা আক্তার এবং সভাটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।
মাননীয় প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নারী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যা সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য নিরোধের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। সরকারী ও বেসরকারী সকলের উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে কিন্তু তারপরও নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের লক্ষ্য সকল নারী-পুরুষের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, মামলা দায়ের ও নিস্পত্তি নয়, মামলা গুনাগুনের ভিত্তিতে নিস্পত্তি করা প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন মামলার সাক্ষী , মেডিকেল রিপোর্টসহ সকলের সহযোগিতা। মামলায় যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয় তাও দেখা আমাদের দায়িত্ব। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম বলেন, যারা মানবাধিকারের রক্ষক, আইনের রক্ষক, যাদের দ্বারা আমরা নারী-পুরুষ সকলেই সমাজের আইনের আশ্রয়, আইনের সহায়তা পেয়ে থাকি তারা আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে নারীর মানবাধিকারের পক্ষে যতগুলো নতুন আইন হয়েছে তার মূল লক্ষ্য আমাদের শাসনতন্ত্রে যে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে তা প্রতিষ্ঠা করা। জাতীয় সকল আন্দোলনের সাথে যুক্ত নারী আন্দোলন প্রতিরোধের ভিতর দিয়ে প্রতিকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই সাফল্য আজ বাংলাদেশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু তারপরও সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতা বিরাজমান।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যতগুলো ইতিবাচক আইন হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে কিভাবে আইনজীবীদের সাহায্য, সহযোগিতা ও অগ্রণী ভূমিকার মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমতার দেশ গড়তে পারবো, কিভাবে জাতিসংঘের সিডও সনদে সমতার যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে সেটাকে আমরা কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো সেগুলো জানার জন্যই আজ আমরা আপনাদের কাছে এসেছি এবং তার জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। বৈশ্বিক স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি আজ সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার বিষয় চলে এসছে। কিভাবে শাসনতন্ত্রের নীতিমালা বাস্তবায়ন করা যাবে, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ মানবিক যুক্তিবাদি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারোব সেই বিষয় নিয়েই মহিলা পরিষদ কাজ করে থাকে। সমাজে নারীর যে অধস্তন অবস্থা তা থেকে কিভাবে নারীর বিকাশের সুযোগ করে দেয়া যায়, তার নাগরিক অধিকার এবং পূর্ণ সুরক্ষা দেয়া যায় তা নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করে আসছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কি করে আমরা নারী-পুরুষের সমাতা আনায়নের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে কিভাবে ইতবাচক ভূমিকা রাখার মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি সেই লক্ষে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মাননীয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, একদিকে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় এবং আরেক দিকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির বিষয়, দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং তা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আদালতের।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে নারীর অধিকার রক্ষার জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে কিন্তু সামাজিক বাস্তবতায় নারীর অধিকার সুরক্ষা হতে পারে নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে নারীর ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে। তিনি আরো বলেন আমরা নারীর ক্ষমতায়ন সহ বিভিন্ন দিক দিয়ে অনেক ইতিবাচক ভাবে এগিয়েছি যা নারীর ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রণীত বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা আইনে নারী আন্দোলনের অবদান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাক্ষী উপস্থাপন না করতে পারা, সময়মত মামলা শেষ করতে না পারা সহ আরো কিছু জটিলতা। ৭-৮ বছর হয়ে যায় অথচ একটি ধর্ষণের মামলা নিস্পত্তি হয় না। বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ যেখানে সকলের জাবাবদিহিতার কথা বলা আছে। এই আইনের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তিনটি মন্ত্রণালয়ের একটি সমন্বিত মনিটরিং কমিটি থাকা দরকার।