শিক্ষকের নির্যাতনে বিছানায় কাতরাচ্ছে রুবি
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০১৬, ২২:১৬
শিক্ষার্থীদের কাছে সাক্ষাৎ আতঙ্ক রামগঞ্জের চৌমুহনী ফয়েজে-আম আলীম মাদ্রাসার আরবী শিক্ষক মাওলানা আমিনুল ইসলাম। সামান্য ভুলেই হিংস্রভাবে নির্যাতন করেন ছাত্রছাত্রীদের। এ শিক্ষকের মারধরের শিকার হয়েছে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। সর্বশেষ তার বেধড়ক মারপিট আর লাথি থাপ্পড় খেয়ে ৫ দিন ধরে বিছানায় কাতরাচ্ছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রুবি আক্তার।
জানা যায়, রামগঞ্জ উপজেলার পৈতপুর এলাকার মোল্লা বাড়ির নুর আহম্মেদের মেয়ে রুবি আক্তার। সে চৌমুহনী ফয়েজে-আম আলীম মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৫ জুলাই শ্রেণিকক্ষে পড়া না পারায় রুবি আক্তারকে পিটিয়ে ও লাথি থাপ্পড় মেরে গুরুতর আহত করেন শিক্ষক মাওলানা আমিনুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানায়, ২৫ জুলাই শ্রেণি কক্ষের আরবি পড়া পারেনি রুবি। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হন শ্রেণি শিক্ষক মাওলানা আমিনুল ইসলাম। প্রথমে রুবির দু’গালে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তবে তাতে দমে যাননি শিক্ষক আমিনুল। এবার শুরু করেন এলোপাতাড়ি লাথি। এ পর্যায়ে মেয়েটি শারিরীকভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে রুবিকে দ্রুত স্থানীয় ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেন এক পল্লী চিকিৎসক। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিলেও রুবির পরিবার অস্বচ্ছল হওয়ায় তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে বাড়িতে শুয়ে সে ব্যথায় কাতরাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, এর আগে ওই শিক্ষক পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষার্থীকে একইভাবে অমানবিক নির্যাতন করেছেন। এ ঘটনা নিয়ে বার বার তাকে মাদ্রাসা থেকে সতর্ক করাও হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভও বিরাজ করছে।
রুবির অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে এলাকার ছাত্র-ছাত্রী আর অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকরা রুবিকে দেখতে বাড়িতে যান। অবশেষে শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে অভিযুক্ত আমিনুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষক।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রীটি ক্লাসে পড়াশুনায় অমনোযোগী হওয়ায় শাসন করেছি। সে অসুস্থ হওয়ায় তার অভিভাবককে ৫০০ টাকা ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রামগঞ্জ শহরের আধুনিক হাসপাতালে অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলেছি।’
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মাসুদ আলম পাটোওয়ারী জানান, আরবি শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এর আগে দরবেশপুর পন্ডিতবাড়ির ছাত্র সাইফুল ইসলামকে রক্তাক্ত করে। জগৎপুর কাজী বাড়ির আলমগীরের ভাতিজি আমেনার কান ছিঁড়ে রক্তাক্ত করা ছাড়াও মোরশেদের মেয়েকে থাপ্পড় দিলে তার কানের পর্দা ফেটে যায়। এভাবে অতীতে অনেক শিক্ষার্থীকে অতিমাত্রায় বেত্রাঘাত করায় মাদরাসার সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এসব কারণে সব শিক্ষক মিলে কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এই ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ভূমি) আহম্মদ হোসেন ভূইয়া বলেন, "বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে"।