প্রতিবাদ করলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন: সৌদিফেরত নারীরা
প্রকাশ : ৩১ মে ২০১৮, ১৬:৩০
ভাগ্য বদলাতে নারীরা বিদেশে যাচ্ছেন একটু সুখের আশায়। সেখানে তাদের কপালে জুটছে ভয়াবহ শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতন। সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা এই নারীদের সংখ্যা বাড়ছেই। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত নির্যাতিত হয়ে প্রায় হাজার খানেক নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার অপেক্ষায় সেখানে সেফ হাউজ ও বিভিন্ন জেলে আছেন আরও অনেকে।
৩১ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে সৌদিফেরত নারীরা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন তাদের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা। সৌদি ফেরত শতাধিক নারীকে নিয়ে কয়েকটি এনজিও ‘সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে’ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেশন (বিসিএসএম) এর পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশে ফিরে আসা নারী কর্মীরা তাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছেন। তাতে অধিক সময় ধরে কাজ করানো, সময় মতো ঘুমাতে না দেওয়া, ঠিক মতো খাবার না দেওয়া, মাস শেষে নির্ধারিত বেতন না দেওয়া, গৃহকর্তা এবং বাড়ির অন্যদের দ্বারা ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ যৌন নির্যাতনের ফলে গর্ভবতী হয়ে দেশে ফেরত আসার মতো ঘটনাও ঘটছে। ফেরত আসা নারীরা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ করলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে। গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাথায় গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়। চুল টেনে তুলে ফেলা হয়। গরম আয়রন মেশিন দিয়ে শরীরে ছ্যাকা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সৌদিফেরত শারমিন, মৌসুমী, কুলসুম, লতারা তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
তারা বলেন, সকাল ৬টা থেকে রাত ১টা দেড়টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। কিন্তু ঠিক মতো খাবার পাওয়া যায় না। এক হাজার রিয়াল বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো বেতন দেওয়া হয় না। মালিকের কাছে টাকা চাইলেই মারধর করে। দেশে ফিরে আসার কথা বললে টাকা চায়। বলে তোদের টাকা দিয়ে কিনে এনেছি। টাকা ফেরত দে, নইলে দেশে যেতে পারবি না। বাংলাদেশের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, তোমরা ওখানে যাওয়ার পরে আমাদের আর দায়-দায়িত্ব নাই। মালিকদের ম্যানেজ করে চলতে হবে।
এখনো সেখানে অনেক নারী সমস্যায় আছে, তাদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করেন। সেখানে নারীদের ওপর কি ধরনের নির্যাতন হয় তা শুধু যে গেছে সেই বলতে পারবে। যারা না গেছে তারা বুঝবে না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্স ইউনিট (রামরুর) প্রোগ্রাম পরিচালক মেরিনা সুলতানা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রীনা রায়, ব্র্যাকের শরীফুল হাসান, ওকাবের ওমর ফারুক চৌধুরী প্রমুখ।