সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে মুক্তামনি
প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ১১:১২
দীর্ঘদিনের সব ডাক্তারি প্রচেষ্টা এবং অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা ও আশীর্বাদকে পরাস্ত করে চলে গেলো বিরল রোগ হেমানজিওমায় আক্রান্ত শিশু মুক্তামনি। শরীরের যে যন্ত্রণার ভার সইতে পারছিল না ছোট্ট মেয়েটি সেই যন্ত্রণা থেকে এবার চিরতরে নিস্তার পেয়েছে সে। আজ ২৩ মে (বুধবার) সকাল ৬টা ৫৯ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে নিজ বাড়িতে বাবা-মায়ের সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাত্র ১২ বছরের মুক্তামনি।
মেয়ের এমন অকাল মৃত্যুতে শোকে পাথর বাবা মা। পুরো বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। সান্ত্বনার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গত কয়দিন ধরেই মুক্তামনির শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। বুধবার ভোর থেকে তার বমি শুরু হয়।
ইব্রাহিম হোসেন জানান, সম্প্রতি মেয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তিনি ঢাকা মেডিকেলে যোগাযোগ করেছিলেন, চিকিৎসকরা ঈদের পর মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেলো।
ইব্রাহিম হোসেন বলেন, "শেষ একবার পানি খেতে চাইলো। ওর দাদি গেল পানি আনতে। কিন্তু পানি আনতে আনতেই সব শেষ। আমার মেয়েটা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলো"।
উল্লেখ্য, ছয় মাস বয়সে মুক্তামনির ডান হাতে একটি গোটা দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সেটি তার হাত থেকে বড় হয়ে যায়। ফলে চলাফেরা করতে সমস্যা দেখা দেয়। গত প্রায় তিন বছর ধরে সে বিছানায় ছিল। গণমাধ্যমে এ খবর আসার পর সবাই মুক্তামনির রোগটির ব্যাপারে জানতে পারে। হাতে বিকট আকৃতির ফোলা নিয়ে গত ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয় মুক্তামনি। চিকিৎসকরা তার রক্তনালীতে টিউমার আবিষ্কার করেন চিকিৎসার ভাষায় যাকে বলা হয় হেমানজিওমা।
এরপর মুক্তামনির হাতে ছয় দফা জটিল অস্ত্রোপচার করেন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকের একটি দল। কিছুটা ভালো বোধ করলে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর তাকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু গত কিছুদিনে মুক্তামনির হাতের ক্ষতস্থানে আবারও পচনের লক্ষণ দেখা যায়, ফলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।