'কোটা পদ্ধতিরই দরকার নাই'
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০১৮, ২০:১৯
কোটা থাকলেই সংস্কার। আর কোটা না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই- আজ ১১ এপ্রিল (বুধবার) জাতীয় সংসদে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "কয়েক দিন ধরে ইউনিভার্সিটিগুলোতে ক্লাস বন্ধ। পড়াশোনা বন্ধ। এরপর আবার ভিসির বাড়ি আক্রমণ। রাস্তাঘাটে যানজট। মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষ বারবার কষ্ট পাবে কেন? এই বারবার কষ্ট বন্ধ করার জন্য, আর বারবার এই আন্দোলনের ঝামেলা মেটাবার জন্য কোটাপদ্ধতি বাতিল। পরিষ্কার কথা। আমি এটাই মনে করি, সেটা হলো বাতিল"।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "খুব দুঃখ লাগে যখন দেখলাম, হঠাৎ কোটা চাই না। কোট সংস্কারের আন্দোলন। আন্দোলনটা কী? লেখা পড়া বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় বসে থাকা। রাস্তায় চলাচল বন্ধ করা। এমনকি হাসপাতালে রোগী যেতে পারছে না। কর্মস্থলে মানুষ যেতে পারছে না। লেখাপড়া-পরীক্ষা বন্ধ করে বসে আছে। এ ঘটনা যেন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমিই গড়ে তুলেছিলাম। আজকে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, যা কিছুই ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো তো আমাদেরই করা। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা দেব, সে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু গঠনমূলক কাজে ব্যবহৃত না হয়ে সেটা গুজব ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটা ছেলের মাথায় আঘাত লেগেছে। হঠাৎ একজন স্ট্যাটাস দিয়ে দিল যে সে মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়ে সব বেরিয়ে গেল। রাত একটার সময় হলের গেট ভেঙে মেয়েরা বেরিয়ে এল। শুধু একটি গুজবের ওপর। সে ছেলে যখন বলল আমি মরি নাই, বেঁচে আছে, তখন তাদের মুখটা থাকে কোথায়। এই স্ট্যাটাসটা কে দিল? কেন দেওয়া হলো। এই যে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছে, অঘটন ঘটলে কে দায় নিত?"
ঢাবিতে ভিসির বাড়িতে আক্রমণের প্রসঙ্গ এনে শেখ হাসিনা বলেন, "সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হলো ভিসির বাড়িতে আক্রমণ। আমরা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। সব আন্দোলনে সেখানে ছিলাম। স্কুল–কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি আন্দোলন করতে। কখনো ভিসির বাড়িতে গিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাঙচুর করতে পারে, সে ভাঙচুরটা কী? ছবি দেখে মনে পড়ছিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে আমাদের ৩২ নম্বরে ভাঙচুর করেছিল, ঠিক একই কায়দায়। এমনকি লকার ভেঙে গয়নাগাটি চুরি করা, টাকাপয়সা চুরি করা থেকে শুরু করে বাথরুমের কমোড খুলে রাখা, ভেঙে চুরমার করে দেওয়া। ভিসি তার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও ভিসির ওপর আঘাত পর্যন্ত করতে গিয়েছিল। যদিও অন্য ছেলেরা তাকে বাঁচিয়েছে। ছেলেমেয়েদের ভয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। একতলা–দোতলা সব তছনছ। শুধু তা–ই নয়, তারা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সিসি ক্যামের ভেঙেছে। রেকর্ডিং বক্সটা পর্যন্ত সরিয়ে নিয়ে গেছে। কত পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না বা ছাত্র বলে আমি মনে করি না। কারণ কোনো শিক্ষার্থী তার শিক্ষককে এভাবে অপমান করতে পারে না, আঘাত করতে পারে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সব থেকে জঘন্য ঘটন ঘটিয়েছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটা কী ধরনের কথা?"
কোটা বাতিলের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তারা দাবি করেছে, খুব ভালো কথা। আমরা তো বসে নেই। সোমবারে কেবিনেটে বসে এ বিষয়টা আলোচনা করলাম। আমাদের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে বসবে, এবং বসল। সে সঙ্গে আমি কেবিনেট সেক্রেটারিকে যার কাজ এটা, নির্দেশ দিলাম এটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন। যাকে যাকে দরকার তাদের নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন। যে দাবিটা করেছে তা কতটুকু কী করা যায়। আর মন্ত্রী গেল তাদের সঙ্গে বসল। সমঝোতা হলো। অনেকে মেনে নিল, অনেকে মানল না। মানি না, মানব না বলে তারা যখন বসে গেল, আস্তে আস্তে সব তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো। সারা রাত বেশ অনেক ছাত্রছাত্রী টিএসসিতে থেকে গেল। কেন? আলোচনা হচ্ছে, আন্দোলন চালানোর কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে। তা ছাড়া ভিসির বাড়ি ভাঙা, রাস্তায় আগুন দেওয়া। এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রার জিনিস পুড়িয়ে তছনছ। খুব ভালো কথা, সংস্কার সংস্কার বলে...সংস্কার করতে গেলে আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। কোটা থাকলেই সংস্কার। আর কোটা না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই। আর যদি দরকার হয় আমাদের কেবিনেট সেক্রেটারি তো আছেন। আমি তো তাকে বলেই দিয়েছি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বসে তারা কাজ করবেন। সেটা তারা দেখবেন। আমি মনে করি, এ রকম আন্দোলন বারবার হবে। বারবার শিক্ষার সময় নষ্ট হবে"।
তিনি আরো বলেন, "আমরা একটি নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আমাদের ছেলে মেয়ে যারা করছে আমাদের ছেলে মেয়ে কেন অনেকে আমার নাতির বয়সী। তাদের কীসে মঙ্গল হবে না হবে আমরা কি বুঝি না? ১৯৭২ সাল থেকে এ কোটা পদ্ধতি চলছে। সময়-সময় সংস্কার করা হয়েছে। কোটা যাই থাক, আমরা সব সময় যে কোটা পূরণ না হয়, যে তালিকা থাকে সেখান থেকে তাদের চাকরি দিয়ে দিই"।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "৩৩ তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ৭৭.৪০ নিয়োগ পেয়েছে। ৩৫তম ৬৭.৪৯, ৩৬ তম ৭০. ৩৮ ভাগ। মেধাবীরা বাদ যায়নি। চলছে। মানছে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার থেকে পূরণ করা হচ্ছে। সবাই মেধাবী। রিটেনে পাশ করতে হয়। বিসিএস যারা দেয় তারা সবাই মেধাবী। কোটায় যারা তারাও একসঙ্গে পরীক্ষা দেয়। রিটেনে তাদের পাশ করতে হয়। সেখানে কোথায় সংস্কার একটা দাবিতে বলা আছে, যেখানে কোটায় পাওয়া যাবে না মেধা থেকে দেওয়া হবে। এটা তো হচ্ছে। আমার দু:খ লাগে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো প্রফেসর, বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তারা আবার একই সুরে কথা বলছেন। তারা দেখেনই নাই আমরা মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দিচ্ছি। না হলে ৭৭ ভাগ কোথা থেকে। কোটায় যারা পাচ্ছে তারাও মেধাবী। তার মানে শতভাগ মেধাবী। তারপরও আন্দোলন"।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তারা চায় না, তাহলে দরকারটা কী। কোটা পদ্ধতিরই দরকার নই। যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী তাদের অন্যভাবে চাকরি ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। এই আন্দোলন যারা করেছে যথেষ্ট, এখন তারা ক্লাসে ফিরে যাক। ভিসির বাড়ি যারা ভেঙেছে, লুটপাট করেছে, লুটের মাল কোথায় আছে, কার কাছে আছে ছাত্রদেরই তো বের করে দিতে হবে। যারা ভাঙচুরে জড়িত তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ছাত্র শিক্ষকের সহযোগিতা চাই। এত বড় অন্যায় আমরা মেনে নিতে পারি না"।