মামলা প্রত্যাহারে রাকায়েতকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৮, ০২:২৫
নাট্য ব্যক্তিত্ব গাজী রাকায়েত এর ফেসবুক আইডি থেকে এক নারীকে মেসেঞ্জারে আপত্তিকর প্রস্তাব দেয়া সংস্ক্রান্ত স্ক্রিনশট প্রকাশের ঘটনায় গাজী রাকায়েত এর ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছেন ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মী সহ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টবৃন্দ। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে গাজী রাকায়েত এর বাড়ি ঘেরাও করারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
২১ মার্চ (বুধবার) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘#সংহতিসংগীতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন বক্তারা। এছাড়া গাজী রাকায়েতের বিভিন্ন নাটক ও ছবি বয়কট করার আহ্বান জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, গাজী রাকায়েত এক নারীকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে আপত্তিকর মেসেজ দেন। কিন্তু তা প্রকাশ হওয়ার পর এর জন্য দুঃখ প্রকাশ না করে উল্টো যিনি প্রকাশ করেছেন তার বিরুদ্ধে তিনি ৫৭ ধারায় মামলা করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে রাকায়েত আরও একটি অপরাধ করেছেন।
মানববন্ধনে কলামিস্ট সাদিয়া নাসরিন বলেন, "গাজী রাকায়েত বলেছেন তার ফেসবুক আইডি না কি হ্যাক হয়ে গেছে৷ কিন্তু হ্যাক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ওনার এতো সময় লাগলো কেন? এই ধরণের মানুষেরা নারীকে অপমান করে হ্যাক হিসেবে চালিয়ে দিবেন, এটা কেউ মানবে না"৷
মানবাধিকার কর্মী জাকিয়া শিশির বলেন, "৫৭ ধারা একটি কালো আইন৷ কিন্তু গাজী রাকায়েতের মতো একজন ব্যক্তি এ আইনটি ব্যবহার করেছেন, এটা ভাবতে কষ্ট হয়৷ তিনি যদি এ অপকর্মের জন্য দায়ী না থাকেন, তাহলে কেন তিনি এ আইনটির সাহায্য নিলেন?"
সমাবেশে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম বলেন, "আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ৫৭ ধারা বাতিলে আন্দোলন করছি। আর সেই ৫৭ ধারাতেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো একজন নারীর বিরুদ্ধে। যিনি মামলা দিলেন তিনি একজন শিল্পী। একজন শিল্পী হিসেবে এটা আমার কাছে লজ্জাকর"।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও গণজাগরণ আন্দোলনের নেত্রী লাকী আক্তার বলেন, " গাজী রাকায়েত এর মতো মুখোশধারী প্রগতিশীলদের অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি গাজী রাকায়েত মামলা প্রত্যাহার না করে তাহলে তিনি পালানোর জায়গা পাবেন না"।
বিবার্তা২৪ডটনেট এর সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি বলেন, "গাজী রাকায়েতের কুরুচিপূর্ণ কথা প্রকাশ পেলে তিনি একসময় বলেন তার ফেসবুক কাজের ছেলে চালায়, আর এক সময় বলেন হ্যাক হয়েছে। আমাদের সময় হয়েছে গাজী রাকায়েতের মতো ভদ্রলোকের লেবাস পরা মুখোশধারী মানুষের মুখোশ উন্মোচন করার"।
ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, বলেন, "গাজী রাকায়েত যদি অপরাধী না হতেন, তাহলে তিনি কেন ৫৭ ধারা মামলা করেছেন? এতে প্রমাণিত হয় যে তিনি এ ধরনের কাজ করেছেন"।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক সংহতি জানিয়ে বলেন, "৫৭ ধারা একটি কালো আইন৷ ৫৭ ধারা ব্যবহার করে মামলা করে গাজী রাকায়েত একই সাথে দুটি অপরাধ করেছেন"।
ব্লগার ও একটিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, "ঘটনা ঘটার পর রাকায়েত বলেছিলেন তার মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে। আবার কখনও বলেছেন তার স্টুডেন্টরা এটি করেছে। সেটাই যদি হয় তাহলে কেন আপনার স্টুডেন্টকে হাজির করছেন না? উল্টো ভিকটিমের বিরুদ্ধে মামলা করে রাকায়েতের আসল চরিত্র ফুটে উঠেছে যে, তিনিই সেই কাজটি করেছিলেন"।
সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক অঞ্জন রায় বলেন, "৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে গাজী রাকায়েতকে। তা না হলে আমরা তার বাড়ি ঘেরাও করব"।
রাকায়েতের উদ্দেশে এডভোকেট হাসনাত কাইউম বলেন, "এখনো সময় আছে, অবশিষ্ট সম্মান নিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার। তা না হলে এটুকুও থাকবে না। আমরাও আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করবেন না"।
মানববন্ধন থেকে আরও কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে #সংহতিসঙ্গীতা হ্যাশট্যাগে শত অ্যাক্টিভিস্টের আইডি থেকে আলোচিত সেই স্ক্রিনশটগুলো প্রচার করে একসঙ্গে গাজী রাকায়েতের দায়েরকৃত মামলার আসামী হওয়া, গাজী রাকায়েতের স্পনসর প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম উল্লেখ করে তালিকা প্রকাশ ও সেগুলো বর্জন এবং ৩১ মার্চ বিকালে শাহবাগে বৃহত্তর সমাবেশ।
গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন প্রকাশক রবিন আহসান, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, সাংবাদিক ইশরাত জাহান উর্মি, তরুণ নির্মাতা শাহাদাত রাসেল, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক কামাল পাশা, সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক প্রমুখ৷
উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ অ্যাক্টিভিস্ট অপরাজিতা সঙ্গীতা ফেসবুক মেসেঞ্জারে এক নারীর প্রতি গাজী রাকায়েতের আপত্তিকর প্রস্তাব ও কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন। সঙ্গীতা জানান, তার এক ফেসবুক বন্ধুর কথোপকথন এটি। ওই নারী বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যায় এই স্ক্রিনশট প্রকাশ না করায় তিনি সেটি প্রকাশ করেন।
এরপর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। গাজী রাকায়েত প্রথমে দাবি করেন, তার ফেসবুক আইডি পরিচিত আরও কয়েকজন ব্যবহার করেন, তাদেরই কেউ এই কাজ করে থাকতে পারেন। পরবর্তী সময়ে 'উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথোপকথনের' স্ক্রিনশট প্রকাশ করার অভিযোগে গত ১৬ মার্চ ওই তরুণীর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন তিনি।
মামলার এজাহারে গাজী রাকায়েত বলেন, "এই সংলাপের ছবি সংবলিত অ্যালবাম অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমার অর্জিত সম্মানকে বিনষ্ট করার লক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। এ ছাড়া এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ভাবমূর্তির জন্য হুমকিস্বরূপ"।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) মাইকেল বনিক জানান, "গাজী রাকায়েতের করা মামলার নম্বর ১৮। ১৬ তারিখ রাতে নাট্যকার গাজী রাকায়েত ৫৭ (২) ধারায় একটি ফেসবুক লিংকের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি"।