‘৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর কোনো অধিকার ছিল না’
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০১৮, ১৮:১১
দেশে ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর কোনো অধিকার ছিল না। যেখানেই বাজানো হতো সেখানেই বাধা দেওয়া হতো-বললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সকল বাধা উপেক্ষা করেই ৭ মার্চে ভাষণ বাজাতে আমি বলেছি। এ ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেকে নির্যাতিত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। তবুও এ ভাষণ বাজানো থেমে থাকেনি।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আজ যেখানে শিশুপার্ক ঠিক সেখানে সেদিনের মঞ্চ ছিল। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেখানে উপস্থিত থাকার। জাতির পিতা সেখানে দাঁড়িয়েই ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন জাতির পিতার সে ঘোষণা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে যায়। সত্যি প্রতিটি ঘর দুর্গ গড়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানিরা যখন গণহত্যা শুরু করলো তখন বঙ্গবন্ধু ইপিআরের ওয়ারলেস ব্যবহার করে স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলছিলেন। একাত্তর সালের যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ সে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর একশ্রেণির মানুষ হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, মা-বোনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল।
কিন্তু আমাদের দুভ্যাগ্য মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়েছিল জাতির পিতা। এ অল্প সময়ে একটা দেশকে অনেকদূর নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জাতির পিতা সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে (১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট) চরম আঘাত আসে, কি অন্যায় তিনি করেছিলেন। দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশে যখন কোনো খুন হয়, তখন সবাই চিৎকার করে বিচার চায়। ৭৫-রে যখন আমি মা হারিয়েছি, বাবা হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি তখন কোথাও বিচার চাইতে পারিনি। ১৯৮১ সালে ফিরে এসে মামলা করতে গেছি, তখনও মামলা নেবে না। একটি স্বাধীন দেশে এটা কখনও হতে পারে না।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একটা ভাষা ভিত্তিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করিয়েছিল জাতির পিতা। এদেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, রাজনৈতিক মুক্তির জন্যই ছিল জাতির পিতার আন্দোলন সংগ্রাম। ফলাফল- তিনি গ্রেপ্তার, নির্যাতিত হয়েছেন, বারবার বন্দি হয়েছেন। আমাদের যুব সমাজ এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছেন।
আওয়ামী লীগ প্রধান আরও বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলার মানুষকে ২১ বছর অন্দোলন সংগ্রামের পর আমরা ক্ষমতায় যেতে পেরেছিলাম। এর জন্য দলের অনেক নেতাকর্মীকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণ যুগ। যে কাজগুলো জাতির পিতা শুরু করেছিলেন সেগুলো আমরা শেষ করি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ এ আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কারণ গ্যাস তুলবে আমেরিকান কোম্পানি। বিক্রি করবে ভারতে। আমি তো সেটা হতে দিতে পারি না। আমরা সরকারে আসতে পারিনি। এরপর আমরা কি দেখেছি। বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।
তিনি বলেন, আইয়ুব খান তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, যখন কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিচারের জন্য নিয়ে আসা হতো তখন তিনি এসে বসার সময় বলতেন ‘জয় বাংলাদেশ’। তোমরা আমার বিচার করে কী করবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। যদি আমাকে হত্যা করো, আমার লাশটা বাংলাদেশে পৌঁছে দিয়ে এসো।