তবুও আশাবাদী হই

প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৭, ১৪:১৪

বাংলা ভাষায় কমিউনিটি ব্লগিং থেকে শুরু করে ফেসবুক পর্ব অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া যুগের পুরোটাই দেখার সুযোগ হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা, সেই প্রত্যশার ছিটোফোঁটা পূরণ হওয়া তারপর স্বপ্নভঙ্গ- এর সবই বাস্তব। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের প্রত্যাশার বেলুন ফুটো করে দিতে প্রথম আবির্ভূত হয় এস্টাবলিশমেন্টের অর্থায়নে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটগুলো, যারা ফরমুলেটেড মতগুলোকে ভাইরাল করতে ম্যানিপুলেশন করতো। এরপর থেকে এই পুরো সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে প্রত্যশা, প্রেম, রাগ, মান-অভিমান, ক্রোধ-ক্ষোভ যুগপৎ অস্তিত্বশীল থেকেছে।

ফেসবুকে আমরা যতদূর দেখতে পাই তার বাইরেও খোদ বাংলাদেশেই বিরাটাকায় এক ফেসবুক দুনিয়া আছে। তারপরেও নিজের দেখা ফেসবুক পরিসরের মধ্যে যে তাৎপর্যপূর্ণ বদল দেখতে পাচ্ছি, তার গুরুত্ব কম নয়। গত দুইদিন ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছি- এর মধ্যে আমার ফেসবুক হোমপেজে এমন একটা পোস্টও দেখতে পাইনি যাতে বনানীর ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিম দুই নারীর পার্টিতে যাওয়া নিয়ে বা তাদের জীবন-যাপন বা পোশাক নিয়ে কোনো দোষারোপ করা হয়েছে। সরাসরি তো নয়ই, সূক্ষ্ম ইঙ্গিতেও নয়। এর বিপরীতে কয়েক হাজার পোস্ট এসেছে, ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে। বন্ধু তালিকায় তুলনামূলক রক্ষণশীল মানুষও আছেন; যারা ইসলামিক মূল্যবোধের প্রতি নমনীয়, প্রগতিশীলদের উপর প্রায়শই খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন এবং র‌্যাডিকাল নারীবাদ যাদের দুই চোখের বিষ- এরকম কয়েকজনকেও দেখলাম, সরাসরি ধর্ষকদের বিচার দাবি করছেন। দেখলাম, তারাও নারীর পোশাককে দোষারোপ করায় বন্ধুদের আনফ্রেন্ড করার ঘোষণা দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতি দারুণ উৎসাহব্যাঞ্জক। অনেকদিন পরে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে পুনরায় আশাবাদী হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পাচ্ছি। 

ব্যাপারটা মোটেও এমন নয় শুধু এটুকুতেই নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে। এই রাষ্ট্র ও সমাজ, তার রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি আপাদমস্তক ধর্ষকামিতায় আক্রান্ত। ধর্ষণকে এখন আর শুধু নারীর উপর পুরুষের যৌন আক্রমণ হিসেবে দেখতে পারি না। ধর্ষণের শত সহস্র রূপ চোখের সামনে ভাসে। সেই হিসেবে দিল্লী দূর অস্ত! কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির ছোট্ট যে বাঁকবদলটুকু দৃশ্যমান হয়ে উঠছে তাকে পাথেয় করতে দোষ কী?

আমি যেভাবে ভাবছি, আসলেই যেদি সেরকম কোনো অগ্রগতি হয়ে থাকে তার পুরোটুকুর কৃতিত্ব এই সময়ের একদল সাহসী নারীর। যারা বাংলা ভাষায় সাহসী স্বরে নিজেদের কথা বলতে শুরু করেছিলেন। বাংলা ভাষায় কমিউনিটি ব্লগের যখন শুরু হলো, তখন মেয়েদের উপস্থিতি ছিলো একেবারেই নগন্য। মিথস্ক্রিয়াটা হতো মূলত পুরুষের সাথে পুরুষের। ফলে দেখা গেল, রক্ষণশীলতো বটেই এমনকি কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বা প্রগতিশীলরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলায় যোগাযোগের যেই নতুন ভাষা কাঠামো তৈরি করলো তা ঘোরতর পুরুষতান্ত্রিক, মাচোনির্ভর। কিন্তু নারীরা যখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্রাইক করা শুরু করলেন- তখন কিছু পরিসরের মধ্যে ট্যাবু ভেঙ্গে পড়তে লাগলো, পুরুষতান্ত্রিক ভাষাকাঠামো চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়লো-ঠিক তখনই শুরু হলো বদলটা।

পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, বদলাবে। ধর্ষকের বিচার হবে। তবে সমাজের কোণে কোণে স্ট্রাইক করার মত শক্তি গড়ে উঠলে বদলটা অনেক তরান্বিত হবে।

বাকী বিল্লাহ'র ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত