লন্ডনে ‘সন্ত্রাসী’ হামলা: নিহত ৫, আহত ৪০ (ভিডিও)
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০১৭, ১২:২৪
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ছুরি নিয়ে হামলা ও লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার সেতুতে গাড়ি দিয়ে পথচারীদের আঘাত এর ঘটনায় মোট ৫ জন নিহত ও প্রায় ৪০ জন আহত হয়েছেন। হামলার এ ঘটনাকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করছে।
বুধবার বিকালে ওয়েস্টমিনিস্টার সেতুতে পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার মধ্যদিয়ে হামলাটি শুরু হয়। এখানে গাড়ি চাপায় তিনজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন।
এরপর পার্লামেন্ট ভবনের কাছে একটি গাড়ি পথচারীদের আঘাত করে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণের রেলিংয়ে ধাক্কা দেয়। এ পর্যায়ে একজন হামলাকারী ছুরি হাতে দৌড়ে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে, নিরস্ত্র এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বাধা দিলে সে ছুরিকাঘাত করে, এতে ঘটনাস্থলেই ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।
এসময় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সের অধিবেশন চলছিল এবং প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে পার্লামেন্টের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। গোলাগুলির শব্দের পর অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
পরে সশস্ত্র নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের গুলিতে ঐ হামলাকারী নিহত হয়।
এদিকে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সংসদের কাছে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে বুধবার বিকালের দিকে গোলাগুলি হয়। সেখানে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।
রয়টার্সের আলোকচিত্রী জানিয়েছেন, তিনি ব্রিজের উপর আহত লোকদের পড়ে থাকতে দেখেছেন। তাদের শরীর থেকে প্রচণ্ড রক্তপাত হচ্ছিল।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার রাজনৈতিক সম্পাদক টম পিক এক টুইটে বলেছেন, ‘বিকট শব্দ। চিৎকার। বিপর্যয়। এরপর গুলির শব্দ শোনা যায়। সবখানে সশস্ত্র পুলিশ।’
প্রেস এসোসিয়েশনের রাজনৈতিক সম্পাদক এন্ড্রু উডকক ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, "গুলির শব্দ ও লোকজনের চিৎকার শুনে আমি অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। সম্ভবত ৪০/৫০ জন লোক ব্রিজের রাস্তা থেকে সংসদ চত্বরের দিকে দৌঁড়ে আসছিল। তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছিল, কোনো কিছুর তাড়া খেয়ে তারা ছুটছে। মানুষের ভীড়টা যখন ক্যারিজ গেটস-এ এসে পৌঁছল, যেখানে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে, হঠাৎ সেখানে ভীড়ের দিকে একজন মানুষ দৌড়ে এল। এবং ভেতরে ঢুকে গেল। তার হাতে লম্বা একটি ছুরি ধরা ছিল। সে সময় গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। মনে হয় তিনটি। আমি দেখলাম সেখানে দুজন লোক মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। অন্যরা তাদেরকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেল। সশস্ত্র পুলিশ খুব দ্রুত সেখানে উপস্থিত হল। আর তারা সেখানে থাকা লোকদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য চিৎকার করছিল"।
হামলার নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যায় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজের কার্যালয়ের সামনে এক বিবৃতিতে মে বলেন, “যেখানে হামলা চালানো হয়েছে তা কোনো দুর্ঘটনা নয়। সন্ত্রাসীরা আঘাত করার জন্য আমাদের রাজধানীর মর্মস্থল বেছে নিয়েছে, যেখানে সব জাতীর, ধর্মের ও সংস্কৃতির মানুষজন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও অবাধ মত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধা উৎযাপন করতে সমবেত হয়।”
সহিংসতা দিয়ে এই মূল্যবোধকে পরাজিত করার যে কোনো উদ্যোগ ‘ব্যর্থ’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন মে।
ব্রিটেনের কাউন্টার-টেরোরিজমের শীর্ষ কর্মকর্তা মার্ক রাওলি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, "ওয়েস্টমিনিস্টার সেতুতে একটি গাড়ি পথচারীদের ওপর তুলে দেওয়ার মাধ্যমে হামলাটি শুরু হয়। এখানে গাড়ির ধাক্কায় বহু সাধারণ মানুষ ও তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। এরপর পার্লামেন্টের কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে এবং অন্তত এক ব্যক্তি, ছুরি হাতে হামলাটি অব্যাহত রাখে এবং পার্লামেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করে”।
হামলাটিকে ‘ইসলাম সম্পর্কিত সন্ত্রাস’ হিসেবে ধরে নিয়ে পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, পুলিশের বিশ্বাস তারা হামলাকারীর পরিচয় জানে, কিন্তু এই মূহুর্তে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
ঘটনাটিকে ‘বেপরোয়া সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে অভিহিত করেছে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে হামলাকারী নিজে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তাকে সে ছুরিকাঘাত করেছিল তিনি রয়েছেন। নিহত অন্য তিনজন ওয়েস্টমিনিস্টার সেতুতে গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয়েছেন।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তারা নাম কিথ পামার। ৪৮ বছর বয়সী পামার ১৫ বছর ধরে পুলিশের চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। ঘটনার সময় পার্লামেন্ট সদস্য টোবিয়াস এলউডকে দেখা যায় মুখে মুখ লাগিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে ছুরিকাহত পুলিশ সদস্য কিথ পামারকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ওই পুলিশ সদস্যের।
টেমস নদী থেকে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তবে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে লন্ডন বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে কোন পরিস্থিতিতে তিনি নদীতে পড়ে গেছেন তা জানা যায়নি।
ফরাসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী তিন ফরাসি স্কুল শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান জানিয়েছেন, লন্ডনের বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শহরের সড়কগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে কট্টর ইসলামপন্থি জঙ্গিদের হামলায় ৩২ জন নিহত হওয়ার প্রথম বছর পূর্তির দিনে লন্ডনে এ হামলাটি চালানো হল। ২০০৫ সালের জুলাইয়ে লন্ডনে কট্টর ইসলামপন্থি চার সন্ত্রাসীর হামলায় ৫২ জন নিহত হয়েছিল। ওই হামলার পর এটিই শহরটিতে চালানো সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা।