সৌদি অবরোধে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ৪ লাখ ইয়েমেনি শিশু
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৫
বিমান থেকে বোমা ফেলে মানুষ মারা বন্ধ হয়নি এখনও। ইতোমধ্যে অবরোধ এসেছে নতুন অস্ত্র হয়ে। ক্ষুধাকাতর ১ কোটি শিশুর বিপন্নতার কথা জানিয়ে জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, এক্ষুণি অবরোধ না উঠলে সেখানে মৃত্যু হতে পারে চার লাখ শিশুর।
মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ পর্যবেক্ষণের ব্রিটিশ সংস্থা মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি একটি যুক্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে যে সময়মতো মানবিক সহায়তা না পৌঁছালে দেশটির চার লাখ শিশু মারা যেতে পারে। তারা জানায়, ২ কোটিরও বেশি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। যাদের প্রায় এক কোটি শিশু।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, খাদ্যাভাব ও অসুস্থতায় ইয়েমেনের ৫০ হাজার শিশু মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ত্রাণ কার্যক্রম বারবার ব্যহত হওয়ার কারণে হাজার হাজার শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।
২০১৫ সাল থেকেই ইয়েমেন সামরিক অভিযান চালাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। ১৮ নভেম্বর (শনিবার) রাজধানী রিয়াদে ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ঘটনায় ১৯ নভেম্বর (রবিবার) অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব। স্থল, পানি ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ায় সীমান্তে আটকা পড়েছে অনেক জরুরি ত্রাণ সামগ্রী। সৌদি আরবের যুক্তি, ইরান যেন অস্ত্র সরবরাহ করতে না পারে সেজন্যই এই অবরোধ আরোপ করেছে তারা। ইরান অবশ্য এই অভিযাগ অস্বীকার করেছে। এই অবরোধে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলো আটকা পড়েছে অক্সফাম, ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স এর মতো আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ইয়েমেনে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস অবরোধ তুলে নিতে সৌদি জোটের অস্বীকৃতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধের কারণে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
এর আগে অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেস, নরওয়ে রিফিউজি কাউন্সিলসহ ১৯টি ত্রাণ সংস্থা এক যুক্ত বিবৃতিতে জানিয়েছিলো, ইয়েমেন মজুদ করা ওষুধ মাত্র এক মাস থাকবে। যদি নতুন ওষুধ না আসে তবে মহামারী আকারে অসুখ ছড়িয়ে পড়বে। পোলিওর মতো রোগও খুবই মারাত্মক হয়ে যাবে। অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের জন্য পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ।
২২টি মানবাধিকার সংস্থার এই জোট আরও জানায়, ৭০ লাখ দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের খাবার রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইয়েমেনে মানবেতর পরিস্থিতি খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। খাবার, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহ করা না হলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে।
জাতিসংঘের এপ্রিলের পরিসংখ্যানেই ইয়েমেনে অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২১ লাখ। ৫ বছরের নিচের ৪ লাখ ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মোট নাগরিকের ৫৫ শতাংশই ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ইয়েমেন হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। এই ঘটনায় ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদি পালাতে বাধ্য হন। জাতিসংঘের মতে, এই অভিযানে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। ঘরহীন হয়েছেন ৭০ লাখ মানুষ। তাদের অনেকেরই খাবার, স্বাস্থ্য সুবিধা ও বিশুদ্ধ পানি নেই। এর মধ্যে এপ্রিলে কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন নয় লাখ ইয়েমেনি।