নিজের পাচারকারীদের ধরিয়ে দিল নাবালিকাই

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:২১

জাগরণীয়া ডেস্ক

কাজ দেওয়ার নাম করে ভিন রাজ্যে মেয়েটিকে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ৮ মাস পরে বহু কষ্টে বাড়ি ফিরেছিল সেই নাবালিকা মেয়েটি। কিন্তু বাড়িতে ফিরে দেখে, তারই পাচারকারীরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরপরই পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে চিনিয়ে দেয় অপরাধীদেরকে।

গত ২২ অক্টোবর (রবিবার) দুপুরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার ব্রুক লেনের ঘটনা। ওইদিন দুপুরে ওই মেয়েটির অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ। আটককৃতরা হলো শেখ সেলিম এবং জিকু মোল্লা। তারা পশ্চিমবঙ্গের বন্দর এলাকার বাসিন্দা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতন বিরোধী আইন, নাবালিকাকে পাচার করাসহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

২৩ অক্টোবর (সোমবার) অভিযুক্তদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। অভিযোগকারী মেয়েটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্যের শিশু কমিশন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দাবি, আটককৃতরা আন্তঃরাজ্য নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ জানায়, অভিযোগকারী তেরো বছরের মেয়েটি পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার বাসিন্দা। এক বছর আগে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যায় শেখ সেলিম এবং জিকু মোল্লা নামের দুই যুবক।

পুলিশকে মেয়েটি জানায়, এলাকার পরিচিত মুখ হওয়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো আপত্তি করা হয়নি। কিন্তু অপরাধীরা প্রথমে তাকে নিয়ে গিয়ে বেঙ্গালুরুর আন্দ্রাহালি নামক স্থানের একটি বহুতল ভবনে আটকে রাখে। পরে তাকে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হয়।

শিশুটির অভিযোগ, প্রায় ৮ মাস আটকে থাকার পর এক ব্যক্তির সাহায্যে কলকাতায় পালিয়ে আসে। রবিবার ওই এলাকায় আবারও সে শেখ সেলিম এবং জিকু মোল্লাকে ঘুরে বেড়াতে দেখে। তারপরেই মেয়েটি পুলিশের কাছে যায়। তদন্তে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে ওই শিশুকে পাচারের পরে কোন অভিযোগ করেনি তার পরিবার। এমনকি, সে ফিরে আসার পরেও পুলিশের খাতায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

কেন শিশুটির অভিভাবক সেই সময়ে অভিযোগ করেনি, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারীরা। এদিকে রবিবার অভিযোগ পাওয়ার পরেই ব্রুক লেনে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে শেখ সেলিম এবং জিকু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, ওই এলাকার বেশ কয়েক জন মেয়েকে মোটা টাকায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে তারা জড়িত। সেই উদ্দেশ্যে আবারও তারা এলাকায় এসেছিল। অভিযোগকারী ওই শিশুটি ছাড়াও আরও ৫ জন নারীকে তারা গত কয়েক বছরে পাচার করেছে বলেও জেনেছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, ওই এলাকার আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের মেয়ে শিশুদের নিশানা বানাত পাচারকারীরা। তাদের পরিচারিকার কাজ দেওয়া হবে বলে অন্য রাজ্যে নিয়ে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করতো।

তদন্তে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই চক্রের আরও কয়েক জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তারাই মূলত শেখ সেলিম এবং জিকু মোল্লাকে এই কাজে সাহায্য করত।

সূত্র: আনন্দবাজার

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত