সেই ‘অশ্বারোহী তাসমিনা’ এবার গ্রিসে (ভিডিও)
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:৫৭
দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এবার সুদূর গ্রিসে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তোলা বাংলাদেশি প্রামান্যচিত্র ‘অশ্বরোহী তাসমিনা’। এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন নামি দামি উৎসবে সুনাম কুড়ানো এ প্রামাণ্যচিত্রটি এবার প্রদর্শিত হবে অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভাল ফর চিল্ড্রেন এ্যান্ড ইয়ং পিপল-এ।
অলিম্পাস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত পিরগোস শহরে শিশু কিশোর ও তরুণদের জন্য ইওরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই চলচ্চিত্র উৎসব এর মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘চলচ্চিত্রে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও শিশুদের সহনশীলতা’। মূল প্রতিযোগিতা পর্বে থাকছে ৩৪ টি দেশের ১৯ টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪৫ টি মধ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, এ্যানিমেশন ছবি ও প্রামাণ্যচিত্র। প্রায় দেড় হাজার ছবির ভেতর থেকে ৪২১টি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র এ উৎসবে প্রদর্শিত হবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি এই উৎসবে তরুণ নির্মাতাদের জন্য ২১ টি পাঁচদিন ব্যাপি চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা, ৬ টি ফিল্ম এ্যাপ্রিসিয়েশন ওয়ার্কশপ এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ১৮টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও পিরগোস, অলিম্পিয়া এবং আমালিয়াদাসহ গ্রিসের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন শহরের স্কুলগুলোতে ছবি প্রদর্শনীর পাশাপাশি অনুষ্ঠেয় সেমিনারে বিদেশি অতিথিসহ গ্রিসের চলচ্চিত্র নির্মাতারা অংশগ্রহণ করবেন।
তার মধ্যেই প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে এ স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রটি। ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা দশ দিন ব্যাপি এই চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে শনিবার গ্রিসের রাজধানী এথেন্স পৌঁছেছেন এর নির্মাতা ফরিদুর রহমান।
নির্মাতা ফরিদুর রহমান বলেন, “বর্তমান বিশ্বে মানুষের মধ্যে ভিন্ন দেশ ও ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মীতার মনোভাব হ্রাস পাবার ফলে দেশে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ ছড়িয়ে পড়ছে, বাড়ছে সীমান্ত অতিক্রম করে আসা শরণার্থীর ভিড়। পরস্পরের সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে জন্ম নিচ্ছে অসহিষ্ণুতা ও বৈরীতা। শিশুদের জন্য নির্মিত ছবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিচিত্র মানুষ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরা হলে শিশুদের মধ্যে অল্প বয়স থেকে ভিন্ন দেশ ও জাতি গোষ্ঠির মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ জন্মাবার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। চলচ্চিত্রের মতো শক্তিশালী মাধ্যম ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে হলেও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগ স্বাগত জানাই।”
প্রায় আঠারো মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্রটিতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নওগাঁ জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের এগার বছর বয়সী এক বালিকা তাসমিনার গল্প। যে গ্রামে তাসমিনার বাস, সেখানে পনের বছর বয়স হবার আগেই বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু ঘোড়া চালনায় বিশেষ পারদর্শী তাসমিনা। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নেয়া তার শখ। প্রতিযোগিতায় তাসমিনা যখন তারচেয়ে বেশি বয়সের পুরুষ প্রতিযোগিদের পেছনে ফেলে প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নেয়, তখন দর্শকদের অভিনন্দন বা প্রশংসা জোটে ঠিকই- কিন্তু পুরস্কারের নগদ অর্থ কিংবা দামী পুরস্কারগুলো নিয়ে যান ঘোড়ার মালিক। তাসমিনার মনে নতুন স্বপ্ন বাসা বাঁধে এবার নিজেই একটি ঘোড়া কিনবে সে।
নির্মাতার ভাষ্যে, “পুরুষ শাসিত সমাজে তাসমিনার মতো ছোট্ট মেয়েটি সাহসী প্রতিবাদের প্রতীক। অনেক রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সে এগিয়ে চলেছে একটি কষ্টসাধ্য, প্রায় অবিশ্বাস্য দৌড়ের শেষ প্রান্তে। মেয়েটির সাথে সাথে যারা তাকে সার্বক্ষণিক সমর্থন দিয়ে চলেছেন- তাসমিনার মা ও বাবা, এ কারণে প্রশংসার দাবি রাখেন তারাও।”
প্রামাণ্যচিত্রটি এরইমধ্যে সেরার পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে ওমেনস ইন্টারন্যাশনাল এন্টারটেইনমেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল-এ। প্রদর্শীত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এলএ সিনে ফেস্ট-এ। এছাড়াও, রোমানিয়ার ট্রান্সসিলভানিয়া শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল, জার্মানির কন্ট্রাভিশন ফিল্ম ফেস্টিভাল ও প্রিজনেস ইন্টারন্যশনাল চিল্ড্রেন্স ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন ফেস্টিভালে দেখানোর জন্য মনোনীত হয়েছে সিনেমাটি। এছাড়াও সম্প্রতি চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ফিল্ম ফেস্টিভাল রাকায়েত-এ।