তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিযোগিতায় জয়ী পুত্রবধূ, উচ্ছ্বসিত শ্বশুরালয়
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০১৯, ১৭:৫২
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবনে পদে পদে নানা বিড়ম্বনা ও অবহেলার গল্প নতুন কিছু নয়। কিন্তু এসব গল্পের মাঝে যেন নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অ্যানি দত্ত চক্রবর্তী। সেই সঙ্গে ভালোবাসার নজির গড়লেন অ্যানির শ্বশুরালয়ের সবাইও।
অনীক দত্ত থেকে অ্যানি দত্ত চক্রবর্তী হয়ে উঠার গল্পটা আরও অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো অ্যানির জন্যও খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু আত্মবিশ্বাস আর সাহসের জোরে সব বাধা পেরিয়েছেন তিনি। বিয়েও করেছেন নিজের পছন্দের মানুষ সাগ্নিক চক্রবর্তীকে। আর এবার তো ‘মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯’-র খেতাব জয় করে ঘরে ফিরেছেন অ্যানি। ‘মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯’-এর প্রায় সব লেভেলেই নিজের সৌন্দর্য ও বিচক্ষণতা দিয়ে বিচারকদের মন জয় করেছেন অ্যানি।
সর্বশেষ 'এই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা জিতলে ভবিষ্যতে কী করতে চান?' বিচারকদের এমন প্রশ্নের জবাবে যখন অ্যানি বলেন, “আমি যদি ভবিষ্যতে প্রচুর টাকার মালিক হই, তাহলে সবার প্রথমে বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল খুলবো, যেখানে আমার মতো তৃতীয় লিঙ্গের পাশাপাশি সাধারণ বাচ্চাদেরও বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকবে। সমাজের সঙ্গে লড়াইটা যাতে তাদের কাছে সহজ হয়ে যায়, সেই চেষ্টাই করবো” সেদিনই যেন অলিখিতভাবে প্রতিযোগিতা সেরার শিরোপা ওঠে তার মাথায়।
৫ জুন (বুধবার) জয়ের মুকুট নিয়ে শ্বশুরালয় জলপাইগুড়ির নয়াবস্তিতে ফেরেন অ্যানি। সন্তান তৃতীয় লিঙ্গের হলে যেখানে মা বাবাও অনেক সময় চক্ষুলজ্জ্বায় সন্তানকে সমাজ থেকে আড়ালে রাখেন সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের সুন্দরীর মুকুট মাথায় বউমাকে বরণ করে নিতে স্টেশনে চলে এলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা। অ্যানির এমন অর্জনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ তার শাশুড়ি এমনকি প্রতিবেশীরাও।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকার বাসিন্দা অ্যানি পেশায় একজন শিক্ষক। পাশাপাশি একজন সুদক্ষ মেক-আপ আর্টিস্ট এবং নৃত্যশিল্পীও বটে! র্যাম্পের প্রতি ভালোবাসা থেকে মধুচন্দ্রিমা সেরে সংসার সামলে ফিরেছিলেন র্যাম্পে। এবার ‘মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯’ জয়ের পর অ্যানির স্বপ্ন আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার। সেই লক্ষ্যেই এগুচ্ছেন তিনি। অ্যানির মতো তৃতীয় লিঙ্গের সকল মানুষের পথচলা এমনই সুগম হোক।