পা দিয়ে লিখেই জান্নাত এর কৃতিত্ব
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:২৭
নরসিংদীর মেঘলা জান্নাত, জন্ম থেকে দুটো হাত নেই। তবে মনের জোর প্রবল। পায়ে লিখে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জীবনের প্রায় সব পরীক্ষাতেই কৃতিত্বপূর্ণ ফল করেছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়ও (পিইসি)। জান্নাতের এই ফলাফলে খুশি তার পরিবারও।
জান্নাত এবার ঘোড়াশাল সার কারখানা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পিইসি পরীক্ষা দেয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও তার নিজের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক আলাদা করে বসার জন্য বিশেষ চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন। তবে জান্নাত সেই সুযোগ নেয়নি।
কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের বিষয়ে জান্নাত বলে, আমি খুব খুশি। আমার বাবা, মা আর বোনরাও ভীষণ খুশি। তিনি আরও বলে, আমার কাছে প্রতিবন্ধী শব্দটা ভালো লাগে না। কেউ যখন আমাকে এ রকম বলে তখন খুব কষ্ট লাগে। আমি ক্লাসে প্রথম হতে পারি, আবৃত্তিতে প্রথম হতে পারি, চিত্রাঙ্কনে প্রথম হতে পারি, তবে আমি কেন প্রতিবন্ধী হব। বড় হয়ে কী হতে চায় এমন প্রশ্নের জবাবে জান্নাত বলে, আমি আমার বড় বোনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। ভবিষ্যতে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাই।
জান্নাতকে দেখে-শুনে রাখা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সেলিনা আখতার জাহান বলেন, মেঘলা খুব জেদি, হার মানতে রাজি নয়। ক্লাসে সব সময় প্রথম হতো সে। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি নেই।
মেঘলার বাবা রুহুল আমীন নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানার হিসাব সহকারী। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ৩০ বছর ধরে কর্মরত। সেখানকার কোয়ার্টারে তাদের বসবাস। মেঘলার মা আফিয়া খান গৃহিনী। মেঘলার বড় দুই বোনের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌসী লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজে এবং জান্নাত আরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পড়ছেন।
রুহুল আমীন জানান, জান্নাত নিয়মিত দু–তিন ঘণ্টা পড়ে। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলাও করে। গল্পের বই পড়তে ও ছবি আঁকতে ভালোবাসে। প্রচুর পুরস্কার পেয়েছে সে। তিনি আরও জানান, জান্নাত নিজেকে কখনও প্রতিবন্ধী ভাবে না। তার আত্মসম্মান বোধ প্রবল।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন ভূঞা বলেন, জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় মেঘলা জিপিএ-৫ পাওয়ায় খুব আনন্দ লাগছে। পরীক্ষার হলে আমি অনেকবার তাকে দেখতে গিয়েছি। তার মধ্যে প্রতিভা আছে, হার না মানা ভাব আছে। তার অদম্য জেদ আর ইচ্ছা দেখে মনে হয়, মানুষ চাইলে সব পারে।