অক্সিজেনের দেশ ভূটানে ভ্রমণ
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:২৭
ভারত ঘেঁষা দেশ ভূটান৷ ভূটান মানেই বৌদ্ধ মনাস্ট্রি ও গুম্ফা৷ সারা দেশজুড়েই রয়েছে অনেক বৌদ্ধ গুম্ফা ও জং৷ তাছাড়াও রয়েছে নয়নাভিরাম নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য৷ সারা দেশটি পাহাড়ে ঘেরা৷ পাহাড়ি চু নদী যেন কটিবন্ধের মতো বেষ্টন করে রেখেছে এই সুন্দরী দেশকে৷ ভ্রমণের ফাঁকে ফাঁকে কখনও দূরে বা কখনও কাছে এসে ধরা দেবে চু নদী৷
গন্তব্য থিম্পু
থিম্পু ভূটানের রাজধানী৷ ফুন্টসেলিংয়ে প্রবেশের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দেখে নিন বৌদ্ধ গুম্ফা৷ অপূর্ব সুন্দর, শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশের সাক্ষী হতে পারেন এ স্থানে এসে৷ ফুন্টসেলিং থেকে থিম্পুর দূরত্ব প্রায় ২৭২ কিলোমিটার, ছ’ঘণ্টার যাত্রাপথ৷ পাহাড়ের কোলে সাজানো এই সুন্দর শহর থিম্পুতে দেখে নিন নরজিন ল্যম, টিভি টাওয়ার ভিউ পয়েন্ট, চিড়িয়াখানা, থিম্পু গুম্ফা, হস্তশিল্পকেন্দ্র এবং সিমতোখা জং৷ এই জংয়ে সূর্যাস্তের আগে পৌঁছতে পারলে শোনা যাবে সমবেত লামা ও দ্রাপাদের মন্ত্রোচ্চারণ ও গ্রন্থপাঠ এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের গম্ভীর শব্দ৷ নির্জন এই পর্বতের উপর এই ঘটনার স্মৃতি মনের মণিকোঠায় অক্ষয় হয়ে থাকবে৷ জংয়ের বাইরে বেরিয়েই বৌদ্ধ লামারা পরিবেশন করেন গরম চা ও বিস্কুট৷ নির্জন পাহাড়ে, ঠান্ডায় সেই চায়েও যেন পাওয়া যায় অমৃতের স্বাদ৷ এছাড়াও শহরের মধ্যেই রয়েছে মেমোরিয়াল চোর্তেন, এটি রাজা জিগমে দোরজি ওয়াংচুর স্মৃতিমন্দির৷ নদীর ধারে রয়েছে দেশের প্রধান জং তাশি চো জং তার বিপরীতেই রয়েছে সার্ক বিল্ডিং৷ তারপর চলুন নবনির্মিত বৌদ্ধমন্দির৷ এখানে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি, থিম্পু ভ্রমণপথে প্রত্যক্ষ করা যায় এই মূর্তিটি৷
এবার পুনাখা
থিম্পু থেকে চলুন পুনাখা৷ প্রায় ৮৬ কিমি এই পথ যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা৷ এই যাত্রাপথে রয়েছে দোচুলা পাস৷ এই পাসের উপর রয়েছে শতাধিক চোর্তেন ও বৌদ্ধমন্দির৷ এই পাসের সর্বোচ্চ স্থানটি থেকে বিভিন্ন হিমশৃঙ্গ দৃশ্যমান৷ ঝলমলে রোদ থাকলে পরিষ্কার দেখা যায় শৃঙ্গগুলি৷ এই পাসের বৌদ্ধমন্দিরটির বাইরে দাঁড়িয়ে পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা ভাগ্যের বিষয়। পুনাখা পৌঁছতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা৷ পুনাখার মুখ্য দ্রষ্টব্য পুনাখা জং৷ ভুটানের অন্যতম পবিত্র এই জং৷ জংয়ের দু’পাশ দিয়ে বইছে ফচু এবং মচু নদী৷ সে এক অপূর্ব দৃশ্য৷ পুনাখা আপাত নির্জন ছোট উপত্যকা৷ এছাড়াও এখানে দেখুন গঞ্জের মধ্যে নামগিয়াল চোর্তেন৷ পুনাখা থেকেই দেখে নিন ওয়াং দি ফোদরং জং৷ এটিও বেশ প্রাচীন জং৷ থিম্পু থেকে সারাদিনের টুরেও ঘুরে আসা যায় এই জং৷
পারোর পথে
থিম্পু থেকে চলুন পারো উপত্যকায়৷ যাত্রাপথ ৫১ কিলোমিটার, সময় দেড় ঘণ্টা৷ যেতে যেতেই পথে দেখা হয়ে যাবে পারো বিমানবন্দর৷ এই স্থাপত্যটি যেন পটে আঁকা ছবি৷ পাহাড়ের গায়েই রয়েছে সিটি ভিউ পয়েন্ট, রিভারসাইড পাহাড়ে ঘেরা এই উপত্যকায় রয়েছে প্রধান জং- রিংপুং জং৷ এই জংয়ের গঠনশৈলী অসাধারণ৷ জংয়ের দেওয়ালের চিত্রকলা ও ভেতরের বৌদ্ধমন্দিরটি সযত্নে সুসজ্জিত৷ এই জংয়ের পেছনের অংশ থেকে পাহাড়ি উপত্যকা ও নদীর দৃশ্য অপূর্ব৷ পারো থেকে সারাদিন ট্রেকিং করে দেখে নিতে পারেন পাহাড়ের গায়ে নির্মিত টাকসাং বা টাইগার মনাস্ট্রি অথবা টাইগার নেস্ট৷ ট্রেকিং করে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা৷ সাত কিলোমিটারের যাত্রাপথ৷ এই গুম্ফা থেকে উপত্যকার সৌন্দর্য সত্যিই অপূর্ব৷
চেলেলার সৌন্দর্য
পারো থেকেই চলুন চেলেলা পাস৷ পাহাড়ের পাকদণ্ডির পথ পেরিয়ে ঘণ্টা দু’য়েকের এই যাত্রাপথে উপভোগ করুন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য৷ বিভিন্ন পাখ-পাখালির কলকাকলি মুখরিত করেছে সমস্ত পথটি৷ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য ভুটান ভ্রমণ আদর্শ৷ ভুটানে প্রবেশের পর চমকিত হতে হয় দেশের পরিচ্ছন্নতা দেখে৷ বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান, গাড়ি চালকদের ব্যবহার মুগ্ধ করে পর্যটকদের৷ যান চলাচল ব্যবস্থা যেন প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলে৷
প্রত্যেক স্থানের হোটেল ভাড়া ১৫০০ থেকে শুরু৷ হোটেল ও সুবিধা অনুযায়ী, পর্যটনের সময় অনুসারে ভাড়া ওঠানামা করে৷ গাড়িভাড়া গাড়ি অনুসারে ৩০০০-৫০০০ পর্যন্ত (দিনপ্রতি)৷
ইনারলাইন পারমিট
ভূটান বেড়ানোর জন্য পারমিট লাগবে৷ বিনামূল্যে এই পারমিট পাবেন ফুন্টসেলিংয়ের ভুটান গেট ও পারো বিমানবন্দরে৷ সঙ্গে রাখবেন ছ’কপি ছবি আর বোংরাদেশী নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ সচিত্র সরকারি আইডেন্টিটি কার্ড৷ এই পারমিট সবসময় সঙ্গে রাখবেন৷ ভুটানে যে ক’দিন থাকবেন, তার থেকে বেশিদিনের পারমিট করিয়ে রাখবেন৷ পারমিট হারালে জেল-জরিমানা হতে পারে৷ সঙ্গে ছবি ও ভোটার কার্ডও রাখবেন৷