বন-পাহাড়ের মায়াবী সুন্দরী মপ্পুর ঝর্ণা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ০১:৪৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

তবলছড়ি ঘাট-কাপ্তাই লেকে ভাসতে না ভাসতেই চোখে ধরা পড়লো ভৌগলিক সত্যটা। লেকের দু’পাড়ে বিস্তর এলাকা জুড়ে পাহাড়। লেকের সামনে পেছনে পাহাড়ের শেকল। যেনো ছোট থেকে বড় ধারাক্রমে সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি।

আর সেই পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে দেখা যায় মেঘের পুঞ্জ। গাছগাছালিতে ছাওয়া সবুজ পাহাড়ের চূড়াগুলোও ছুঁয়ে আছে অলস মেঘের দল। যেনো সবুজ পাহাড়ের ওপর মেঘ পাহাড়ের আলপনা। আর লেকের পানি কিছু দূর পরপরই ছোট ছোট দ্বীপের মতো সবুজ গ্রাম।

লেকের নিস্তরঙ্গ জলে ঢেউ তুলে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে একটানা ছুটে চলেছে ইঞ্জিন বোট। এখনও একটু একটু বর্ষার রেশ কাটেনি বলে লেক ভর্তি পানি। তাই লেকের পানিতে ডুবে যাওয়া কর্ণফুলির কোর্স ধরতে হলে  আপনাকে বোটে চেপে বসতে হবে। কখনো পাহাড়ের ফাঁকে, কখনো বা ডুবে যাওয়া চাষের জমির ওপর দিয়ে বোট ছুটলো দুর্গম বিলাইছড়ির দিকে।

একেএকে একটা দু’টা পাহাড়ি বাজার, পাহাড়ি চূড়ার নিঃসঙ্গ জুমঘর আর পাহাড়ের শরীরে ঝুলে থাকা টিন-চালার বাড়ি-ঘর পেছনে ফেলে সোয়া দু’ঘণ্টার মাথায় বোট ভিড়লো বিআউডব্লিউটিএ’র নৌঘাটে। ঘাট থেকে ক্রমশ ওপরে উঠে গেছে ইট বিছানো রাস্তা। পাহাড়ের মাথায় বসা দু’পাশে দোকানপাটে চলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিকিকিনি। 

গন্তব্য পৌঁছাতে আপনকে একটু কষ্ট করতে হবে কেননা আশেপাশে ঘুরেও কোনো পরিবহন পাওয়া যাবে। এমনকি রিকসাও না। ইট বিছানো পথে আরো এগিয়ে থানাটাকে বাঁয়ে রেখে কয়েক মিনিটেই নলছড়ি ঘাট। 

নৌকায় চেপে ন’কাটা ছেড়ে দেওহাটায়। জলঘেরা ধানক্ষেত পেরিয়ে এবার শুরু হবে ছড়া ধরে হাঁটা। কখনো তীর কখনো ছড়া ধরে হাঁটার পর পুরোপুরি পাথর বিছানো ছড়ার বুক বেয়েই চলতে হয়। 

এরই মধ্যে ছড়ার দু’পাশের বন আরও ঘন হয়ে উঠছে। ছড়ার বুকে সেগুন, গামারি আর বুনো ঝোপের শীতল ছায়া। কোথাও কোথাও ঝুলে থাকা মোটা মোটা লতায় আপনাকে টারজানের কথা মনে করে দেবে। সামনে ছড়ার ঢাল উপরে উঠছে তো উঠছেই। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে কুলকুল করে বইছে শীতল স্রোত।

টানা আধা ঘণ্টা হাঁটার পর ন’কাটা ঝরনার পাদদেশে পৌঁছে নিমিষে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে আপনার। অনেক উঁচু থেকে আছড়ে পড়ছে জলরাশি। পানির ছটার ঝরনার কাছে সঁপে দিতে পারেন নিজেকে। 

এবার ঝরণার পাশ দিয়ে খাড়া উঠে যাওয়া পিচ্ছিল ট্রেইলটায় তরতরিয়ে উঠে গেলো মানেন্দ্র। এবার শুরু হলো গর্জনরত ঝর্নাকে নিচে রেখে পিচ্ছিল পাহাড় বাওয়া। তারপর আর একটা প্রপাত গহীন অরণ্যের ভেতরে সৌন্দর্য্য এর আরেক রূপ। কখনো ডানে, কখনো বাঁয়ে বেঁকে আর একটা ঝরনা এসে মিশেছে ন’কাটায়। মপ্পু নামে এক মারমা এখানে জুম চাষ করতো বলে তার নামেই এ ঝরনার নাম।

ন’কাটা আর মপ্পুর মোহনা পেরুনোর পর  সামনের পথ আরো দুর্গম। কয়েক দফা ছড়া ছেড়ে পিচ্ছিল পাহাড় বাওয়ার পর আপেনি পাবেন আরও ছোট ছোট অনেকগুলো প্রপাত।

সবশেষে আপনি মপ্পু ঝরনার দেখা পাবেন। অনেক উঁচু থেকে আছড়ে পড়ছে পানি। পাথরে পড়ে গর্জন তুলছে যেনো। ঝরনার গোড়াটা দেখতে  মাথা উঁচু করে আকাশ পানে তাকাতে হচ্ছে। এ স্থানের উচ্চতা সাতশ’ ফুটের সমাান বলে জানালেন স্থানীয় এক চাকমা।

এমন সুন্দর ঝরনা ছেড়ে ফিরে যেতে আপনার মন চাইবে না। তবুও আপনাকে দুপুর ২টার মধ্যে রাঙামাটি থেকে আপনাকে ফিরতি লঞ্চ ধরতে হবে।ওটা মিস করলে পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য দেকার অপেক্ষা করছে মপ্পুর ঝর্ণা। একবার হলেও ঘুরে আসুন স্থানটি। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত