ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা

প্রকাশ : ১৮ মে ২০১৭, ০৩:৫৮

খুশি

আমাদের আশেপাশে কত কিছুই আছে যা আমাদের অজানা। সুন্দর দেখতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আমরা কত কিছুই না করে থাকি। বর্তমান যুগের বাজারের বেশিরভাগ পণ্য রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর, যা ব্যবহারে সাময়িকের জন্য হয়তো আমাদের ত্বক সুন্দর দেখাচ্ছে কিন্তু তার পর্যায়ক্রমিক ব্যবহার অনেক সময় ডেকে আনছে বিপর্যয়। অথচ আমাদের হাতের কাছেই আছে অনেক প্রাকৃতিক উপাদান যার ব্যবহারে যেমন হয়ে উঠা যায় দীপ্তিময় ঠিক তেমনই সেই দীপ্তি আর লাবণ্য থেকে যায় বছরের পর বছর। তেমনই একটি প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

‘অ্যালোভেরা’ এই নামটির সাথে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত। বাগানের সৌন্দর্য বর্ধনের সাথে সাথে এটির রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাস জাতীয় গুল্ম। চলুন জেনে নেয়া যাক ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার কিছু যাদুকরী ব্যবহার। 

মুখের কালো দাগ দূরীকরণে
অনেকের মুখেই কালো ছোপছোপ দাগ হতে দেখা যায়। আবার মুখে কোনো ব্রণ উঠলে দেখা যায় হাত দিয়ে সেটা খোটানোর ফলে কালো দাগ হয়ে থাকে। এইসব দাগ দূরীকরণে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। এক্ষেত্রে যা করতে হবে তা হলো রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ খুব ভালো করে ধুয়ে (ডাল/চালের গুড়া দিয়ে) মুখ পুরোপুরি শুকিয়ে নিয়ে অ্যালোভেরার জেল পুরো মুখে ভালো করে ম্যাসেজ করে লাগাতে হবে। কালো জায়গাগুলোতে একটু বেশি করে লাগাতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে শুকিয়ে যাবে। সারারাত এভাবে রেখে দেয়ার পর সকালে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। কিছুদিনের মধ্যেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। প্রথমে কিছুদিন রোজ লাগাতে হবে। দাগ কমে এলে সপ্তাহে দুইদিন এবং তারপর একদিন করে লাগালেই হবে।

বলিরেখা দূরীকরণে 
বয়স বাড়ছে। আমরা বুঝার আগেই আমাদের চেহারা তা আমাদের জানান দেয়। বয়সের বলিরেখা আমাদেরকে বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক বানিয়ে দেয়। অ্যালোভেরার সাহায্যে আমরা আমাদের বলিরেখাগুলোকে ছুটি জানাতে পারি আর ধরে রাখতে পারি তারুণ্য। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরার শরবত খুবই কার্যকরী। অ্যালোভেরার জেল বের করে তার সাথে সামান্য পুদিনাপাতা, গুলমরিচের গুড়া, হাল্কা লবণ ও পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে খেতে হবে। মাস্ক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মসুরের ডালের সাথে অ্যালোভেরার জেল দিয়ে পেস্ট তৈরী করে মুখে মেখে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে হাল্কা পানি দিয়ে নরম করে ম্যাসেজ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনার ত্বক শুষ্ক হলে অ্যালোভেরার জেলের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে হাতে ঘসে নিয়ে মুখে ৫ মিনিট ম্যাসেজ করুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। 

মেকাপ রিমুভার হিসেবে
আমাদের মুখের ত্বক অনেক নরম এবং সংবেদনশীল। বাজারে যেসব মেকাপ রিমুভার পাওয়া যায় সেগুলো ত্বকের নানাবিধ ক্ষতি করে থাকে। ত্বকের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয়, রুক্ষ করে তোলে ত্বক। হতে পারে অনেক সমস্যাও। অ্যালোভেরার জেলের সাহায্যে অনায়াসে আমরা মেকাপ তুলতে পারি। এতে ত্বকের ক্ষতিও হলো না বরং সারাদিনের মেকাপের কারণে যে ক্ষতিটা হয়েছে তা অনেকাংশেই পুষিয়ে নেয়া যাবে এর মাধ্যমে। তুলোর বলে অ্যালোভেরার জেল নিয়ে আস্তে আস্তে চোখ-মুখের ভারি মেকাপ তুলে ফেলুন। আরেকটি বলে জেল নিয়ে সম্পূর্ণ মুখে জেল লাগিয়ে কয়েক মিনিট রেখে দিন। স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখুন কত ফ্রেশ লাগছে।

ফেসওয়াস হিসেবে
বাজারে প্রাপ্ত ফেসওয়াস মুখকে রুক্ষ করে দেয়, শুষে নেয় ত্বকের নমনীয়তা। এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে এক টেবিল চামচ আমন্ড তেল (কাঠবাদাম এর তেল) এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। অ্যালোভেরার জেলে রয়েছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টিভাইরাস উপাদান যা আপনার ত্বকের ক্ষতিকর জীবাণু ধবংসে সহায়ক। 

স্ক্রাব হিসেবে
ত্বকের মরা কোষ দূরীকরণেও এটি অনেক কার্যকর। আধা কাপ অ্যালোভেরার জেল এর সাথে বেকিং সোডা বা লাল চিনি মিশিয়ে গাঢ় মিশ্রণ তৈরী করে নিতে হবে। আঙুলের ডগায় নিয়ে মুখে হাল্কা করে ম্যাসেজ করতে হবে। মুখে ছাড়াও হাতে পায়ে এটি ব্যবহার করা যায়। 

আজ এ পর্যন্তই। চুলের যত্নে অ্যালোভেরার গুণাগুণ নিয়ে শীঘ্রই আসছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত