ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বর্বরতম পাঁচ নৃশংসতা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ২১:০৩
১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষ
ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদেরকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সত্যিকার গল্প বলেনি। বিশ্বব্যাপী লুটপাট চালিয়েই যে ব্রিটেন নিজ দেশের শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিয়েছিল এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছিল; এবং অন্যদিকে উপনিবেশগুলোকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছিল সে সম্পর্কে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো সচেতনতা সৃষ্টিরও চেষ্টা করা হয়নি।
এমনকি ইউগভ ডটকমের এক জরিপে দেখা গেছে ব্রিটিশরা সাধারণত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং নিজেদের ঔপনিবেশিক অতীত নিয়ে গর্ব বোধ করেন। জরিপে দেখা গেছে, ৪৪% ব্রিটিশ তাদের ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে গর্ব বোধ করেন। আর মাত্র ২১% ব্রিটিশ বিশ্বব্যাপী তাদের সাম্রাজ্য স্থাপনের বিষয়ে আক্ষেপ করেন।
একই জরিপে দেখা গেছে, ৪৩% ব্রিটিশ বিশ্বাস করেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য একটি ভালো ব্যাপার ছিল। যেখানে মাত্র ১৯% ব্রিটিশ মনে করেন তা খারাপ ছিল। আর ২৫% বলেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভালোও ছিল না আবার খারাপও ছিল না।
১৯২২ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যখন এর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির চূড়ায় ছিল তখন ব্রিটিশরা বিশ্ব জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশের ওপর কর্তৃত্ব করত এবং বিশ্বের এক চতুর্থাংশ ভূমি তাদের দখলে ছিল।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমর্থক ও অনুরাগীরা বলে আসছেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্বব্যাপী দখলকৃত উপনিবেশগুলোতে নানা ধরনের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করেছে। অন্যদিকে সমালোচকদের দাবি ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশগুলোতে গণহত্যা, দুর্ভিক্ষ এবং নির্যাতন-নিপীড়নের মতো ঘৃণ্য সব ঘটনা ঘটিয়েছে।
এখানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পাঁচটি বর্বরতম নৃশংসতা তুলে ধরা হলো-
১. আফ্রিকায় বোয়ের বন্দিশালা
দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেয়াজিল্যান্ডে সংঘটিত দ্বিতীয় বোয়ের যুদ্ধ (১৮৯৯-১৯০২) চলাকালে ব্রিটিশরা বোয়ের জনসংখ্যার প্রায় এক ষষ্ঠাংশকে একটি বন্দিশালায় আটকে রাখে। বন্দিদের বেশির ভাগই ছিল নারী ও শিশু। ওই বন্দিশালায় ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি মানুষকে আটকে রাখা হয়েছিল। প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার মানুষকে বন্দি করা রাখা হয়েছিল এতে।
খাদ্যের অভাব ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণে প্রায় ২৭ হাজার ৯২৭ জন বোয়ের বন্দি মারা যায়। আর অজানা সংখ্যক কালো আফ্রিকানেরও মৃত্যু হয়।
২. অমৃতসর গণহত্যা
১৯১৯ সালের ১৩ এ্রপ্রিল ভারতের অমৃতসরে ব্রিটিশ সরকারের একটি আদেশ এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হচ্ছিল। কিন্তু বিক্ষোভকারীদেরকে জালিয়ানওয়ালা বাগানের দেয়ালের ভেতরে আটকে ফেলা হয়। এবং ব্রিটিশদের অনুগত গুর্খা সেনারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে প্রায় এক হাজার মানুষকে হত্যা করে। মাত্র ১০ মিনিটের এই বর্বর হামলায় আহত হন আরও অন্তত ১১০০ মানুষ।
এই হামলার নেতৃত্ব দানকারী ব্রিগেডিয়ার ডায়ারকে ব্রিটিশ জনগণ একজন মহানায়ক বলে আখ্যায়িত করেছিল। এবং তার জন্য একটি পুরস্কার তহবিলে গঠন করে ২৬ হাজার পাউন্ড দান করেছিল।
৩. ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি
১৯৪৭ সালে মাত্র একবেলা দুপুরের খাবার খেতে যতক্ষণ সময় লাগে সেই সময়কালের মধ্যেই ব্রিটিশ কর্মকর্তা সিরিল রেডক্লিফ ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সীমানা ভাগ করেছিলেন। এর পর হিন্দু ও মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আর ওই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
৪. মাউ মাউ বিদ্রোহ
১৯৫১-১৯৬০ সালে কেনিয়ার মাউ মাউ বিদ্রোহ দমনের সময় ব্রিটিশরা কেনিয়ার অন্তত ২০ হাজার থেকে ১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে হত্যা করে। এ সময় ধর্ষণ ও বন্দিশালায় নির্যাতন চালিয়েও অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে ব্রিটিশরা। কেনিয়া পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ওই ঘটনার ক্ষতিপূরণে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড দাবি করেছিল।
৫. ভারতবর্ষে দুর্ভিক্ষ
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনে থাকাকালে ভারতে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ থেকে ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ মারা যায় দুর্ভিক্ষে। অথচ একই সময়ে ভারত থেকে বছরে লাখ লাখ টন গম পাচার হতো ব্রিটেনে।
১৯৪৩ সালে বাংলায় যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাতেই শুধু মারা যায় ৪০ লাখ মানুষ। অথচ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল সে সময় বাংলায় উৎপাদিত খাদ্যশস্য ব্রিটিশ সেনা ও গ্রিকদের জন্য সরবরাহ করতে আদেশ দিয়েছিলেন।
উইনস্টন চার্চিল বাংলার ওই দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি ভারতীয়দের ঘৃণা করি। কারণ তারা মানুষ নয়, পশুর মতো। আর তাদের ধর্মও পাশবিক। এই দুর্ভিক্ষের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। কারণ খরগোশের মতো অসংখ্য সন্তান জন্ম দিয়ে দ্রুত জনসংখ্যা বাড়ানোর ফলেই খাদ্যের অভাবে এই দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।’