আজ পটুয়াখালী মুক্ত দিবস
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৩৫
আজ ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী মুক্ত দিবস। ২২৬ দিন জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করে এই দিনটি অর্জন করেছিল এ জেলার সূর্য সন্তানরা। জেলাবাসীর কাছে আনন্দ-উদ্বেল ও শোক-বিধুর স্মৃতি বিজড়িত এই দিন অত্যন্ত সম্মানিত।
মুক্তিযোদ্ধা নির্মল কুমার রক্ষিত জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত। দেশব্যাপী পাক সেনারা পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। গভীররাতেই তারবার্তা এসে পৌঁছে পটুয়াখালী জেলা সংগ্রাম কমিটির কাছে। পরের দিন ২৬ মার্চ পটুয়াখালী মহিলা কলেজে কন্ট্রোল রুম খোলে মুক্তিযোদ্ধারা। পাশের জুবিলী স্কুলে শুরু হয় মুক্তি সেনাদের সশস্ত্র ট্রেনিং। স্থানীয় সংগ্রাম কমিটির হাতে হাত মিলায় স্থানীয় অকুতভয় তরুণ যুবারা। তৎকালীন মুক্তিচেতা জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল পটুয়াখালী পুলিশ লাইন অস্ত্রাগার থেকে ৬৫টি রাইফেল তুলে দেয় মুক্তি সেনাদের হাতে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সোমবার। আকাশের উত্তরদিক থেকে গগণবিদারী আওয়াজ তুলে ধেয়ে আসে বেশক’টি পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান। বৃষ্টির মত গোলাবর্ষণ, শেলিং ও মেশিনগানের গুলি ছুড়ে ধবংস করে দেয় ছোট্ট শান্তিময় পটুয়াখালী শহর। কাপুরোষিত এ হামলা থেকে নিজকে রক্ষা করতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ওই সময় শহর সংলগ্ন লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদীতে ঝাঁপ দেয়। পাকসেনারা পটুয়াখালী খাদ্য গুদাম ঘাটে চাল, গম ও চিনি বোঝাই চারটি বার্জও ডুবিয়ে দেয়। পটুয়াখালীর পুরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ঘর-বাড়ি। চাঁদমারী, কালিকাপুর, মাতবর বাড়ি, ও ডিসি বাংলোর দক্ষিণ পাশে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে হাজার হাজার মানুষ।
তিনি জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা বন্দিদের বর্তমান পুরাতন জেলখানার পশ্চিম-দক্ষিণ কোনে গুলি করে হত্যা করা হতো। সেখানকার গণকবর গুলো এখনো ওই বিভীষিকাময় দিনগুলি মনে করিয়ে দেয়। পিশাচদের লোমহর্ষক পৈশাচিকতায় আদিম বর্বরতাও লজ্জা পায়। ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর। গলাচিপা উপজেলার পানপট্টিতে সংঘঠিত হয় জেলার সব চেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ।
মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা, সেকেন্ড ইন কমান্ড হাবিবুর রহমান শওকতের নেতৃতে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পাক জান্তাদের আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে থাকে। টানা ৮ ঘণ্টা উভয়পক্ষের গুলিবর্ষণে অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয়। পরে ৩৮৫ জন পাক সেনা নিয়ে মেজর ইয়ামিন খান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পানপট্টির এ যুদ্ধ পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পটুয়াখালী দখল করতে অনুপ্রাণিত করেছে বলেও তিনি জানান।
পটুয়াখালীতে প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আলতাফ হায়দার জানান, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। মুক্তি সেনারা পটুয়াখালী শহরের চতুর্দিকে অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নেয়। তিনি জানান, পরের দিন ৭ ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধাদের শহর দখলের খবর পেয়ে পাকবাহিনী আচমকা পটুয়াখালী শহরে কারফিউ জারি করে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে রাতের আঁধারে খান সেনারা একটি দোতলা লঞ্চ ও একটি একতলা লঞ্চে করে পটুয়াখালী শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর খুব ভোরে পটুয়াখালী শত্রুমুক্ত হয়।