আজ ভালুকা-গৌরীপুর মুক্ত দিবস
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:০৬
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা ও গৌরীপুর হানাদার মুক্ত দিবস ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বস্তরের জনতা ও মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে ভালুকা ও গৌরীপুরের আকাশে উড়িয়েছিল লাল-সবুজ আর মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। রক্তঝরা ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছিল ভালুকা ও গৌরীপুরের মুক্তিযোদ্ধা-জনতা।
১৯৭১ সালের ৭মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে গৌরীপুরবাসী উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন। তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের স্থানীয় সদস্য মরহুম হাতেম আলীর নেতৃত্ব সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। গৌরীপুর কলেজ ও রাজবাড়ীতে স্থাপন করা হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ছাত্র যুবকরা ক্যাম্পে এসে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। দু’জন সাবেক সেনা সদস্য ক্যাম্প দুটিতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই শহীদ হারুন উদ্যানে ছাত্রলীগ কর্মীরা পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী বিমান থেকে গোলা বর্ষণ ও রেলপথে এসে ভারী অস্ত্রে হামলা চালিয়ে গৌরীপুর শহর দখল করে নেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার মুখে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যান। শহর দখলের সময় পাকিস্তানি সেনারা কালীপুর মোড়ে স্কুল শিক্ষক নরেন্দ্র বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে। তারা শহরে ঢুকে তাদের দোসরদের সহযোগিতায় অগ্নিসংযোগ করে ও লুটপাট চালায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গৌরীপুর ছিল ১১নং সেক্টরের অধীনে। এই সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়পুর, চারুয়াপাড়া বিওপি, কলমাকান্দা, ফুলপুর, গৌরীপুর, কলসিন্দুর, পূর্বধলা, ময়মনসিংহ, নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে। কোম্পানি কমান্ডার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি প্লাটুনে বিভক্ত হয়ে ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুরসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগুপ্তা হামলায় পাকিস্তানি বাহিনী তখন দিশেহারা। মুক্তিযোদ্ধারা গৌরীপুরকে হানাদারমুক্ত করতে চারদিকে থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থানের খবর পেয়ে হানাদাররা তাদের শহরের ক্যাম্প গুটিয়ে রাতের আঁধারে ময়মনসিংহ শহরে পালিয়ে যায়। রেখে যায় তাদের দোসর রাজাকার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। ৮ ডিসেম্বর রাজাকার ও পুলিশরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গৌরীপুর। মুক্তিযোদ্ধারা লাল-সবুজ আর মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন।
মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, আনোয়ারুল হক, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল হাই, হাতেম আলী, আফাজ উদ্দিন, জসীম উদ্দিন, আনোয়ারুল ইসলাম মঞ্জু, সিরাজুল হক, আব্দুল মতিন ও সুধীর বড়ুয়া মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে শহীদ হন।
৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্ত দিবস
৭১ এর ৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আফসার বাহিনীর চারটি কোম্পানির মুক্তিসেনারা তিনদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমন শুরু করলে ভোর রাতে ভালুকা ক্যাম্পের শতাধিক পাক সেনা ও ৮ শতাধিক রাজাকার-আলবদর ক্যাম্প ছেড়ে গফরগাঁওয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই দিন ভোরে আফসার বাহিনীর মুক্তিসেনারা ভালুকা সদরে প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তেলন করে ভালুকাকে পাক হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে।