শিশুর চিকুনগুনিয়া হলে যা করবেন
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৭, ১৬:৫১
চিকুনগুনিয়া রোগটির কথা আমরা এখন অনেকেই জানি, বড়দের মতো শিশুদেরও কিন্তু এ রোগ হতে পারে। তাই এ রোগ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জানাচ্ছেন মগবাজার ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. আবু সাঈদ শিমুল।
খুব ছোট শিশু এমনকি দুই বছরের কম বয়সী শিশুদেরও হতে পারে চিকুনগুনিয়া। অন্যদিকে মা এ রোগে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশুর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও শিশুর জন্মানোর আগে এক সপ্তাহের মধ্যে যদি মা আক্রান্ত হন তবে নবজাতকও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্রেইনের বিভিন্ন অসুবিধা যা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
চিকুনগুনিয়ার ইতিহাস
চিকুনগুনিয়া শব্দটি এসেছে আফ্রিকান মারুন্ডি ভাষা থেকে। এর অর্থ ভেঙে যাওয়া বা বাঁকা হওয়া। ১৯৫২-৫৩ সালে তানজানিয়ায় এ রোগের আবির্ভাব হয়। পরে ১৯৬০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৬০ সালে ব্যাংককে এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। কলকাতা, ভেলোর ও মহারাষ্ট্রে ১৯৬৪ সালে, শ্রীলংকায় ১৯৬৯ সালে এ রোগ দেখা দেয়। ২০০৫-০৬ সালে ভারতে আবার চিকুনগুনিয়া রোগ দেখা দেয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাজশাহীতে চিকুনগুনিয়া দেখা দেয়।
রোগের লক্ষণ
এ রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, হাড় ব্যথা, চোখের কোটরে ব্যথা প্রভৃতি। ৩ থেকে ৫ দিনে যখন জ্বর কমতে শুরু করে তখন চুলকানি এবং লাল লাল দানা দেখা যেতে থাকে। এই র্যা শ ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকের দানা থাকে না। এর পরিবর্তে কালচে বাদামি বা ধূসর রঙের দানা থাকে। আবার বড়দের মতো হাড়ে ব্যথা কম সংখ্যক শিশুরই থাকে। তবে যেসব শিশুর হাড়ে ব্যথা হয় তাদের ক্ষেত্রে ব্যথার মাত্রা তীব্র হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যতিক্রম হলো মগজ বা স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যা, যাকে আমরা নিউরোলজিকাল লক্ষণ বলে থাকি সেগুলো শিশুদের বেশি হয়। যেমন খিচুনি, এনকেফালাইটিস। সাধারণত যে কোনো ভাইরাস জ্বর ধীরে ধীরে বাড়ে; কিন্তু চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত অনেক শিশুর হঠাৎ তীব্র জ্বর নিয়ে আসতে পারে।
ডেঙ্গুর মতো এ রোগটিও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ালেও ডেঙ্গুর সঙ্গে এর কিছুটা পার্থক্য আছে। ডেঙ্গুতে যেমন হাড়ে ব্যথা হলেও প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হয় না, কিন্তু এ রোগে হাড়ে প্রদাহ হয়। তাই চিকুনগুনিয়ায় হাড় ও গিরায় তীব্র ব্যথা হয়। আবার ডেঙ্গুতে যেমন রক্তের অণুচক্রিকা বা পল্গাটিলেট কমে গিয়ে রক্ত পড়ার আশঙ্কা থাকে; কিন্তু চিকুনগুনিয়ায় সেই আশঙ্ক কম থাকে। আবার ডেঙ্গুতে রক্তনালির অভ্যন্তরীণ তরল বা ইন্ট্রা ভাস্কুলার ফ্লুয়িড কমে গিয়ে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, এমনকি শিশু শকেও চলে যেতে পারে; কিন্তু চিকুনগুনিয়াতে পল্গাজমা লিকেজ ও শকের আশঙ্কা কম ।
রোগ নির্ণয়
লক্ষণ দেখে এবং কিছু পরীক্ষার সাহায্যে চিকুনগুনিয়া মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। তবে অবশ্যই ডেঙ্গুর জন্য টেস্ট দিয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, এটা ডেঙ্গু নয়। এ ছাড়া এ রোগের অ্যান্টি বডি টেস্টও আছে, কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না।
চিকিৎসা
সাধারণত পর্যাপ্ত পানি, তরল, ডাবের পানি, ফলের জুস ইত্যাদির সঙ্গে বয়স অনুযায়ী প্যারাসিটামল খেলে এ রোগ সপ্তাহখানেকের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। হাড় বা জয়েন্টে ব্যথা হলে বরফ লাগিয়ে দিলে ব্যথা কমবে। ব্যথা একটু কমে এলে ফিজিওথেরাপি দেওয়া যাবে। চিকুনগুনিয়া রোগে হাড়ে ব্যথা ১ থেকে ২ মাসও থাকতে পারে। তবে ১০ দিনের বেশি হাড়ে ব্যথা স্থায়ী হলে এবং টেস্ট দ্বারা যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি ডেঙ্গু নয়, সে ক্ষেত্রে ব্যথানাশক দেওয়া যেতে পারে। এ রোগে বেশিরভাগ শিশু ৭ থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায় এবং বাসায় রেখেই চিকিৎসা করানো যায়। তবে ব্যথা তীব্র হলে, রক্তপাত হলে, শিশু খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে গেলে, শিশুর বয়স ১ বছরের কম হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
সূত্র: সমকাল