পিল-এ পিলে চমকায় না
প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৬, ১৭:৪৩
গর্ভনিরোধক পিল নিয়ে অনেকেরই ঘোরতর সন্দেহ। অচেনা-অজানা হরমোন নিত্যদিন শরীরে ঢুকে কী জানি কী অঘটন ঘটায়! তার উপর মা-ঠাকুমার সাবধানবানী, ওজন বাড়বে, বাচ্চা আসতে চাইবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে নববধূরা যদিও বা খান, ক্যাজুয়াল সেক্সে আগ্রহী তাকে বর্জন করে দেদার খাচ্ছেন ইমার্জেন্সি পিল। বাড়ছে বিপদ।
ইমার্জেন্সি পিলের বিপদ
এই ওষুধ ওভুলেশনকে পিছিয়ে দিয়ে গর্ভ সঞ্চার হওয়া আটকায়। ১৫০ মিগ্রা লিভোনরজেস্টিল ট্যাবলেট খেতে হয় অসুরক্ষিত সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলে সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ, ২৫-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খেলে ৮৫ শতাংশ, ৪৯-৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলে তা নেমে আসে ৫৮ শতাংশে। ১২০ ঘণ্টার মধ্যে খেলেও কিছুটা কাজ হয়। তবে সাফল্যের হার অনেক কমে যায়।
কাজেই বুঝতেই পারছেন, এই পিল খেলেই যে প্রেগন্যান্সি হওয়া পুরোপুরি আটকাতে পারবেন এমন নয়। তার উপর নিয়মিত খেলে, ভবিষ্যতে ডায়াবিটিস, গলব্লাডারে পাথর বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের চান্স যে একটু হলেও বাড়ে, তা আজ প্রমাণিত। কয়েকটি ক্ষেত্রে তো খাওয়া পুরোপুরি বারণ। যেমন-
কখনও হার্টঅ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে থাকলে।
মাইগ্রেনের সঙ্গে নিউরোলজিক্যাল কিছু উপসর্গ থাকলে।
জন্ডিস বা বড় ধরণের লিভারের অসুখ থাকলে।
পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিজিজের রোগী। কাজেই মাঝে মধ্যে সহবাসের চান্স থাকলে, এই সব ভুলভাল পথে না গিয়ে সাধারণ ওপিসি খান।
ওয়ান্ডার ড্রাগ আর ওপিসি
আধুনিক লো ডোজ ইস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরণ পিল হল ওয়ান্ডার ড্রাগ। দীর্ঘ দিন ধরে খেলেও
শরীরে জল জমে না বলে ওজন খুব একটা বাড়ে না।
পিরিয়ডের ব্যথা বা বেশি পিরিয়ডের সমস্যা থাকলে তা কমে যায়।
শরীরে পুরুষ হরমোনের পরিমাণ কমে বলে ত্বকের চাকচিক্য বাড়ে।
বার্থ কন্ট্রোলের গ্যারান্টি তো আছেই
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজের সমস্যাও আয়ত্ত্বে থাকে।
বাচ্চা আসতে ২-৪ মাস দেরি হতে পারে, এটুকুই যা।
পিল খাওয়ার নিয়ম
পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে পঞ্চম দিনের মধ্যে যে কোনও দিন খাওয়া শুরু করুন। সব চেয়ে ভালো হয় দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে শুরু করলে। প্রতিদিন রাত্রে খাবার খাওয়ার পর নির্দিষ্ট পিল খান। পর পর ২১ দিন খাবেন। তারপর এক সপ্তাহ বন্ধ রেখে আবার নতুন প্যাকেট শুরু করবেন। একদিন খেতে ভুলে গেলে পরদিন দুটো খেয়ে নেবেন। তবে ঘন ঘন এ রকম না হওয়াই ভালো। এরপর যখন বাচ্চা চাইবেন, তার ৩-৪ মাস আগে থেকে পিল খাওয়া বন্ধ করে দেবেন।
আজকাল ২১ প্লাস ৭ ও ২৪ প্লাস ৪টি পিলেরও প্যাকেট পাওয়া যায়। এতে সুবিধে এই যে মনে রাখার বা ভুলে যাওয়ার ব্যাপার কিছু নেই। ২৮ দিন পর পর নতুন প্যাকেট শুরু করলেই হল। তবে কার কোন ধরণের পিল খাওয়া দরকার তা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঠিক নেওয়াই ভালো।
সন্তান না এলে?
অনেক সময় দেখা যায় পিল বন্ধ করার মাস ছয়েক পরেও গর্ভসঞ্চার হচ্ছে না। এর কারণ কিন্তু প্রায় সময়ই পিল নয়। এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড ইত্যাদি সমস্যা আগে থেকে থাকলে, পিল যত দিন খাওয়া হয়, উপসর্গ তত দিন চাপা পড়ে থাকে। পিল বন্ধ করার পর এই সব রোগের কারণেই হয়তো গর্ভসঞ্চারে অসুবিধে হয়। সেক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চিকিত্সা শুরু করা জরুরি।
ব্রেস্ট ফিডিং ও ওরাল পিল
বুকের দুধ খাওয়ালে ওরাল পিল খাওয়ানো চলে না, এ হল ভ্রান্ত ধারণা। অনেকে ভাবেন ব্রেস্ট ফিডিং করালে আর আলাদা করে কন্ট্রাসেপশনের প্রয়োজন নেই। সে ধারণাও সম্পূর্ণ ঠিক নয়। পুরোপুরি বুকের দুধের উপর রাখলে, অর্থাত্ বাচ্চাকে জল, মধু, রাত্রে এক-আধবার বোতলে দুধ খাওয়ানো, এ সব কিছু না করলে ৩-৪ মাস গর্ভসঞ্চার হওয়ার চান্স কম। তবে একে ফুল প্রুফ বলা যায় না। এক-আধবার বাচ্চা এসেও যায়। সে পিরিয়ড বন্ধ থাকলেও হতে পারে। আর মাঝে মধ্যে বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ালে বাচ্চা এসে যেতে পারে দেড় মাস পর থেকে। এই সমস্যা সামলাতে প্রতি সাইকলে টানা ২৮ দিন প্রজেস্টেরণ ওনলি পিল খান। ভয় নেই, এতে বুকের দুধের পরিমাণ ও তার গুণগতমানে কোনও পরিবর্তন হবে না।