পানি সংকটের মুখে বিশ্বের ৬০ কোটি শিশু
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০১৭, ১২:৩৯
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে আগামী ২৩ বছরে তীব্র পানি সংকটে পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের ৬০ কোটি শিশু। ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবসে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুদ্ধ-সংঘাতে পানির উৎস কমে যাওয়াকেই সংকটের প্রধান কারণ মনে করছে ইউনিসেফ।
বুধবার বিশ্ব পানি দিবসে ‘থার্স্টিং ফর আ ফিউচার: ওয়াটার অ্যান্ড চিলড্রেন ইন আ চ্যাঞ্জিং ক্লাইমেট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০৪০ সাল এর মধ্যে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৬০ কোটি শিশু তীব্র পানি সংকটে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হবে। দরিদ্রদের অবস্থা হবে আরও শোচনীয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের দেওয়া তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষ দূষিত উৎসের পানি ব্যবহার করে থাকে। আর বিশুদ্ধ পানির অভাব ও স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশনের ফলে প্রতিবছর আট লাখ ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রকম বিশুদ্ধ পানির উৎস প্রতিনিয়ত কমে আসছে। আর এর ফলে বিশ্বব্যাপী শিশুদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। খরা এবং সংঘাতের ফলে ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেন বর্তমানে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। শুধু ইথিওপিয়াতেই ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন। দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া এবং ইয়েমেনে প্রায় ১৪ লাখ শিশু অপুষ্টির ফলে জীবন সংকটে রয়েছে।
সুদানে ৬৮ শতাংশ মানুষের কাছে অতিপ্রয়োজনীয় দরকারে পানি ব্যবহারের সামর্থ্য রয়েছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে এর পার্থক্য ৬৪ ও ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সুদানের মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশই দূষিত পানি পান করছে। এসব পানীয় উৎসের মধ্যে রয়েছে পুকুর, ডোবার পানি। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ও দূষিত রাসায়নিক দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিশ্বের ৩৬টি দেশ তীব্র পানি সংকটের মধ্যে রয়েছে। ভারতে প্রায় ছয় কোটি ৩০ লাখ শিশু বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত।
বর্তমানে বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৭০ শতাংশে। বিশ্বব্যাপী ৮০ শতাংশেরও বেশি বর্জ্য পানি পুনরায় ব্যবহার না করেই বাস্তুতন্ত্রে ফিরে যায়।
অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকহারে পানি দূষিত হচ্ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পানি শোধন করে ব্যবহার করার মতো পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় পানির যথযথ ব্যবহারও নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইউনিসেফের ওই প্রতিবেদনের লেখক নিকোলাস রিস বলেন, ‘যেখানে চাহিদা প্রচণ্ড বেশি, সেখানে পানির কথা না ভেবেই নগরায়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। আমরা আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল এবং এশিয়ার কথা উল্লেখ করতে পারি।’
এ প্রসঙ্গে রিস বলেন, ‘আমরা শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সংকটের কথা না উল্লেখ করে ওই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়'।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রিলিফ ওয়েব।