হুমকির মুখে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৫৬
রামসার সাইট হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বিপন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে হাওরের পরিবেশ।
টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫২টি বিল ও ১২০টি কান্দা-জাঙ্গাল রয়েছে। ১৪১ প্রজাতির মাছ, ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২১৯ প্রজাতির পাখি, ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি, ১২১ প্রজাতির দেশি পাখি, ২২ প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী বৈচিত্র্যময় করেছে টাঙ্গুয়াকে। এখন হুমকিতে রয়েছে জলজ প্রাণী।
চৈত্র মাসে বোরো ফসল অসময়ে পানির নিচে তলিয়ে যায়। তলিয়ে যাওয়া ধান পচে পানি বিষাক্ত হয়ে জেলার জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও ছাতকের হাওরগুলোতে মাছ মারা যায়। মাছের সঙ্গে জোঁক, কুচিয়া, সাপ, শামুকসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণিও মারা গেছে। যার কারণে টাঙ্গুয়ার প্রাণিকূলের জীবন হুমকির মুখে।
হাওরটির প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এক যুগ ধরে নানা উদ্যোগ দেখা গেলেও বর্তমান দুর্যোগময় মুহূর্তে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকেও কোনো সুপারিশ নেই। ফলে টাঙ্গুয়ার জীববৈচিত্র্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য গবেষকরা।
১৯৯৯ সালে ৯৭.২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাওরটিকে সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সরকার। এর ফলে ২০০০ সালে ইরানের রামসার সম্মেলনে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় টাঙ্গুয়া। এর পরিবেশ ও প্রকৃতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ২০০৩ সালে সরকার বিশেষ ব্যবস্থাপনা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন আইইউসিএনও এর সঙ্গে যুক্ত হয়।
পরিবেশবিদরা জানান, সমাজ ভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনার আওতায় এনেও টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বরং টাঙ্গুয়ার ব্যবস্থাপনার নামে লুটপাট ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। সম্প্রতি ডুবে যাওয়া ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি এবং অক্সিজেন কমে যাওয়ায় জেলার সব হাওরের মাছ মরে যায়। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য প্রাণীর ওপরেও। এ হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় রামসার কনভেনশনে বিশ্ব রামসার কমিটি ও বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা নীরব।
হাওরবাসী ও পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, টাঙ্গুয়া হাওরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এক যুগ আগে থেকে সরকার প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করলেও তার কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন হাওরটি দুর্যোগকবলিত হওয়ায় তা রক্ষায় কোনো পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, এই দুর্যোগ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন আইইউসিএন, রামসার কমিটি ও সরকারিভাবে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়ার কথা। জাতিসংঘের পরিবেশ-প্রতিবেশসংশ্লিষ্টদেরও এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে বিবৃতি দেওয়া উচিত।