কাউন্টার ফটোতে প্রদর্শিত হবে ‘শুনতে কি পাও’
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:৩৩
নয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননাপ্রাপ্ত সিনেমা ‘শুনতে কি পাও’ সিনেমাটি ৭ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টায় কাউন্টার ফটো’র উত্তরা ক্যাম্পাসে প্রদর্শিত হবে। সিনেমাটির পরিচালনায় ছিলেন রচনা, পরিচালনা ও চিত্রগ্রহণ কামার আহমাদ সাইমন।
২০০৯ সালে দেশের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বিধ্বস্ত একটি গ্রাম ও তার বাসিন্দা একটি পরিবারের জীবনযাপনের ঘটনা নিয়েই শুনতে কি পাও। ঝুঁকি থাকে দুর্যোগপীড়িত জনপদকে নিয়ে তৈরি ছবি দুর্গত মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্দশার একটি সেন্টিমেন্টাল ক্লিশে বয়ান হয়ে উঠতে পারে, হতে পারে নেহাতই শুষ্ক এক প্রতিবেদন। কামার আহমাদ সাইমন সেই ঝুঁকি এড়িয়েছেন। চলচ্চিত্রকার তার নিপুণ মুন্সিয়ানার সঙ্গে একটি প্রামাণ্য দলিল কাহিনীচিত্রে রূপ দিয়েছেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
ভদ্রা নদীর পারে, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটি গ্রাম... নাম তার ‘সুতারখালি’। জলে জঙ্গলে লড়াই করে চার পুরুষের আবাদে প্রায় ১০০ পরিবারের বাস এই সুতারখালি গ্রামে। এখানেই ঘর বেঁধেছিলো রাখী আর সৌমেন, জন্ম হয়েছিলো তাদের ভালোবাসার সন্তান... রাহুলের। ২০০৯ সালের ২৫শে মে, রাহুলের বয়স যখন মাত্র চার... ‘আইলা’ নামের এক প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছাস ভাসিয়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। আর সেই দিন থেকে শুরু হয় রাখী, সৌমেন এবং রাহুলের এক অন্য জীবন… দিন যায়, ঋতু বদলায়... সেইসাথে সর্ম্পকও বদলায়। তারপরও বৃষ্টি শেষে, কোদাল হাতে বেরিয়ে আসে ওরা… জীবনেরই ডাকে, জীবনকে ভালোবেসে।
সেই বদলানোর দিন থেকে ছবিটির গল্প আরম্ভ হয় এবং প্রায় দু’বছরের একটি যাত্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনে আরেকটি পরিবর্তন তারা সামগ্রিকভাবে নিয়ে আসে। এই দু’বছরের যাত্রায় তাদের ব্যক্তিমানুষের সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে শুরু করে ঐ গ্রামের মানুষের সামষ্টিক যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রূপকার্থে সমগ্র বাংলাদেশেরই একটি গল্প।
প্রসঙ্গত, মুক্তির পরপরই আলোচিত এই চলচ্চিত্রটি একাধারে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। ২০১২ সালের ২৯ অক্টোবরে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন প্রামাণ্য উৎসব জার্মানীর ডক-লাইপজিগের ৫৫তম আসরের ‘উদ্বোধনী ছবির’ আমন্ত্রণ পেয়ে ছবিটি প্রথম আলোচনায় আসে। এরপর অন্যতম প্রামাণ্য উৎসব ইডফা’র ২৫তম আসরে, এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ প্রামাণ্য উৎসব জাপানের ইমায়াগাতায় ‘নিউ এশিয়ান কারেন্ট’ প্রতিযোগিতাসহ প্রায় পঁচিশটি আন্তর্জাতিক উৎসবে আমন্ত্রিত হয় ছবিটি। ২০১৩ এর মার্চে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউরোপের অন্যতম প্রামাণ্য উৎসব সিনেমা দু্য রিলে’র ৩৫তম আসরে ছবিটি জিতে শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘গ্রাঁপ্রি’। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রামাণ্য উৎসব মুম্বাই আন্তর্জাতিক উৎসবে জিতে নেয় শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘স্বর্ণশঙ্খ’। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আইলা নামক যে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়, এর পরবর্তী সমাজব্যবস্থার উপর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি। এ যাবৎ মোট নয়টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরষ্কৃত ছবিটি ‘শুনতে কি পাও’ ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালে এটি বাংলাদেশে মুক্তি পায় এবং দর্শকনন্দিত হয়ে চার সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যছবির সিনেমা হলে বাণিজ্যিক মুক্তির এটা ছিলো এক বিরল ঘটনা।
সিনেমার টিকেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। প্রদর্শনস্থলেই টিকেট ক্রয় করা যাবে। এছাড়া অগ্রিম টিকেটের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭১৭২৪৪৩৪৪, ০১৬৭১৬৮২০০০।
প্রদর্শনী স্থান: সেক্টর-১৩, ২৯ গরীবে নেওয়াজ এভিনিউ, উত্তরা, ঢাকা।
কাউন্টার ফটো’র স্টুডেন্ট ফোরাম ‘কালো’ ও ‘উই আওয়ার সিনেমা’র যৌথ উদ্দ্যেগে শুনতে কি পাও সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।