পাঠ্যপুস্তকে কুসুমকুমারী দাশ এর কবিতা বিকৃতি
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৮
২০১৭ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ৩য় শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য বইয়ে নন্দিত কবি কুসুমকুমারী দাশ এর বিখ্যাত কবিতা 'আদর্শ ছেলে' এর বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। আর এ নিয়ে ফেসবুকে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
কুসুমকুমারী দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’র মূল লাইন ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’র শব্দ উল্টে দিয়ে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?' লেখা হয়েছে এমন তৃতীয় শ্রেণির বাংলা পাঠ্য ‘আমার বই’য়ে।
কুসুমকুমারী দাশের রচনায় ‘আমাদের দেশে’র পর ‘হবে’ লেখা হলেও বিকৃত লাইনটিতে এসেছে ‘সেই’। আর ‘হবে’ শব্দটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে একেবারে শেষে। ফলে কবি যে ‘ছন্দ’ ‘অন্ত্যমিল’ মাথায় রেখে কবিতার লাইনটি লিখেছেন, তা দৃশ্যতই গড়বড়ে হয়ে গেছে।
তবে এখানেই শেষ নয়, কবিতার চতুর্থ লাইনে কুসুমকুমারী লিখেছেন, ‘মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে বিকৃত কবিতায় ‘হইতে’ শব্দটিকে ‘হতেই’ লিখেছেন পাঠ্য রচয়িতারা।
নবম লাইনে মূল কবিতায় লেখা আছে, ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়’। এই লাইনের ‘চায়’ শব্দটিকে বিকৃত করে পাঠ্য রচয়িতারা লিখেছেন ‘চাই’, অর্থাৎ ‘সে ছেলে কে চাই বল কথায় কথায়’!
এছাড়া একাদশ থেকে চতুর্দশ লাইন পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে দেখাই গেলো না। সে চারটি লাইন হলো, ‘সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ—/‘মানুষ’ হইতে হবে মানুষ যখন।/কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার/সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,/’
মূল কবিতার পঞ্চদশ লাইনে লেখা ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’। এই লাইনের ‘খাট’ শব্দটিকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে ‘খাটো’।
এর পাশাপাশি যতি চিহ্নের ব্যবহারেও বিকৃতি চোখে পড়ে। কবিতাটিতে ড্যাশ-কমা-ঊর্ধ্বকমা ইচ্ছেমতো ব্যবহার বা বর্জন করা হয়েছে।
কবি জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশের প্রসিদ্ধ এই কবিতার এমন বিকৃতিতে সমালোচনার ঝড় চলছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এই ঘটনায় বিদ্রূপ করে সনাতন উল্লাস লিখেন,
বাঁচিয়া যদি থাকিতেন আজও
কুসুম কুমারী দাশ
ভাতের বদলা রুটির সাথে
খাইতেন বোধহয় ঘাস।।
অভিভাবকদের অনেকেও এসব ভুলে ভরা কবিতার ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন করছেন ছেলেমেয়েদের আমরা কি শেখাবো?