সুখের পায়রায় সুখী উত্তমা রায়
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০১৭, ২০:০৯
আবহমান কালে চিঠি পত্র আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম ছিল সুখের পায়রা কবুতর। সেই কবুতরের বাকুম বাকুম শব্দে মুখর ছিল গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়ি। এ যান্ত্রীক যুগে সকালে সুখের পায়রার গানে ঘুম ভাঙ্গবে এমনটাই ভেবে সৌখিনতায় দুই জোড়া দিয়ে কবুতর পালন শুরু করেন উত্তমা রায়। উত্তমা রায় লালমনিরহাট পৌরসভার মাঝাপাড়া এলাকার অরুন কুমার রায়ের স্ত্রী।
উত্তমা রায় জানান, স্বামী-সন্তানরা বাসার বাহিরে গেলে বড় একা হয়ে পড়েন তিনি। সারা দিন সময় কাটানোই ছিল তার বড় কাজ। এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে কবুতর পালন ও কবুতরের বাকুম বাকুম শব্দ তাকে আকৃষ্ট করে। সেই থেকে কবুতর পালনে শখ হয় উত্তমা রায়ের।
ভোরে বাকুম বাকুম শব্দ শুনতে দুই জোরা কবুতর ৪ শত টাকা কিনে নেন উত্তমা। সারা দিনের সময় কাটানোর একটা মাধ্যম পেয়ে মাতৃস্নেহে লালন পালন করেন কবুতর। একটি ঘরের ভিতর খোপ খোপ করা লোহা বা বাঁশের খাচায় কবুতরের বাসা করে দেন উত্তমা। একটু খাদ্য পানি দিয়ে পরিচর্যা করলেই কবুতরে অনেক লাভ করা যায়। প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে তার শখে কেনা সুখের পায়রা কবুতরের সংখ্যা। মাত্র ৩ বছরের মাথায় তার খামারে কবুতরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ শতাধিক। মোট ২৮ প্রজাতির কবুতর রয়েছে তার খামারে। সবগুলোই উন্নত জাতের। সময় কাটানোর পথ খুঁজতে গিয়ে এখন আর সময়ই মিলে না বিশ্রামের। একা সামলানো দায় তাই তার খামার দেখতে ২ জন নারী শ্রমিক নিয়োগও দিয়েছেন তিনি। দেশি প্রজাতি দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় সবগুলো উন্নত জাতের। এইচ এনজেল, পারভীন, এক্সার, করমনা, গোল্ড সুইচ নামে কিছু দুর্লভ প্রজাতির কবুতরও রয়েছে এ খামারে। এসব কবুতর খাঁচাতেই ডিম দিয়ে প্রকৃতিক উপায়ে প্রতি মাসে এক জোড়া করে বাচ্চা দিয়ে আসছে। তার এ খামারে ৩ শত থেকে বার হাজার টাকা দামেরও কবুতর রয়েছে। দেশী কবুতর ৩ শত টাকা জোড়া বিক্রি হলেও উন্নত জাতের কবুতর ১ হাজার থেকে বার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন তিনি।
এ খামারের আয় দিয়ে চলছে এক ছেলের ও এক মেয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছোট মেয়ের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়-এ ফার্মাসিস্ট পড়ার খরচ। সময় কাটানোর পাশাপাশি এখন সংসারে বাড়তি আয় করছেন এ কবুতর বিক্রি করে। কবুতরের মাংসে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করতে কোন ঝামেলা নেই। পাইকাররা খামারে এসে নগদ অর্থে কবুতর কিনে নেয়। তার দেখে স্থানীয় বেশ কিছু বেকার নারী বাসাতে খাঁচায়, ছাদে খুড়পি দিয়ে কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজছে। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন হরেক প্রজাতির এসব কবুতর দেখতে। যারা দেখতে আসেন তাদেরকে কবুতর পালনে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন দিক নির্দশনাও প্রদান করেন উত্তমা রায়।
উত্তমা রায় বলেন, সময় কাটানো আর সৌখিনতায় শুরু হলেও এখন আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তার এ খামার। নিজের চেষ্টায় শুরু হলেও খামার বড় হলে প্রাণি সম্পদ বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে চলেছেন তিনি। নিজের প্রচেষ্টা আর প্রাণি সম্পদ বিভাগের পরামর্শেই তার এ সাফল্য। অল্প খরচে অধিক মুনাফা পেতে কবুতর পালনের বিকল্প নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম নাছির উদ্দিন জানান, বাণিজ্যিকভাবে খুব বেশি না হলেও চাহিদা বুঝে ইদানিং অনেকেই ঝুকছেন কবুতর পালনে। ৩ জোড়া কবুতরই একটি সন্তানের স্কুলের পড়া লেখার খরচ যোগান দিবে। তাই গ্রামীণ নারীদের কবুতর পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।