ফার্নিচার শিল্পের বিকাশে এটুআই’র এ্যাপ্রেনটিচশীপ প্রোগ্রাম
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৫৬
[একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এর উদ্যোগে ফার্নিচার শিল্প-প্রতিষ্ঠানে চালু করা এ্যাপ্রেনটিচশীপ প্রোগ্রামে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন একজন প্রশিক্ষণার্থী]
ফার্নিচার শিল্প (আসবাবপত্র) এখন দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত। ক্রমেই দেশীয় ফার্নিচার শিল্প সমৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে। একসময় আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হলেও এখন ঘটছে তার উল্টো। বর্তমানে দেশে তৈরী ফার্নিচার দেশীয় চাহিদা পূরণের পর রপ্তানি করা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
বর্তমানে এই সেক্টরে প্রায় পচিঁশ লাখ লোক কর্মরত আছে। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে আধুনিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না ও উৎপাদন প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না।
বর্তমানে বিশ্বে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফার্নিচারের বাজারে চীন ৫২ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। এখন চীনে ফার্নিচার উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সংগত কারণে চীন অনেক শিল্প কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের চিন্তা করছে। কারণ, বাংলাদেশে এখনও অনেক কম পারিশ্রমিকে এ খাতে দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এদিকে এ শিল্পের রপ্তানি বাড়াতে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সময়োপযোগী ডিজাইন ও উন্নত মান নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছে ফার্নিচার সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্যোগ। ফার্নিচার শিল্প-প্রতিষ্ঠানে চালু করা হয়েছে এ্যাপ্রেনটিচশীপ প্রোগ্রাম। এ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে একজন এ্যাপ্রেনটিচ (শিক্ষানবিশ) শিল্প-প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে পাঁচদিন হাতেকলমে প্রশিক্ষণ ও সপ্তাহে একদিন তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
জানাগেছে, বর্তমানে আখতার ফার্নিচার, হাতিল, আরএফএল- রিগ্যালফার্নিচার, নাদিয়াফার্নিচার ও ব্রাদার্সফার্নিচারে এটুআই প্রোগ্রামের এ্যাপ্রেনটিচশীপ প্রোগ্রাম চলছে। ২০০০-এরও বেশি বেকার যুবক-যুবমহিলা এ্যাপ্রেনটিচ হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। যেসব ট্রেডে তারা এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন, তাহলো কাঠের কাজ মেশিন অপারেটর, আপহোল স্টেরী ওয়ার্কার, লাসার পলিশার, গৃহ আসবাবপত্র প্রস্তুতকারক, অফিস আসবাবপত্র প্রস্তুতকারক, কাঠ খোদাইকারক ও ব্রাস খোদাইকারক।
ফার্নিচার শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ্যাপ্রেনটিচশীপের মাধ্যমে ৬ মাসব্যাপী কারখানাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিলে প্রশিক্ষণার্থীরা আধুনিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার জানবে। এ সকল দক্ষ কর্মীকে পরবর্তীতে নিয়োগ দিলে প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল নষ্ট হয়না ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় বাজার ও রপ্তানি বাণিজ্যের মাধ্যমে ফার্নিচার শিল্প আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২টি দেশে সরাসরি ফার্নিচার রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ফার্নিচার রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববাজারের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ অত্যন্ত কম। এ্যাপ্রেনটিচশীপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে যদি পরিকল্পনামাফিক ফার্নিচারশিল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে উৎপাদনশীলতা বাড়বে ও রপ্তানি আয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ফলে গার্মেন্টসের মতো ফার্নিচার শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে। চীন ও মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশও বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাজার দখল করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ফার্নিচার রপ্তানি করেছে ৩৮.৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬.২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৮০ শতাংশ হারে।