চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৬শ’ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৪১
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় খাল খনন ও সম্প্রসারণ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। এতে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হবে।
এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৯ আগস্ট (বুধবার) ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পসহ মোট ১১ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে নয় হাজার ৭৬১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আট হাজার ২৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৭০৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ৭৯০ কোটি টাকা।
রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি সমন্বিত ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তবে এ কাজে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া তিনি জামালপুরের যমুনা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু করে ২ বছরের মধ্যে শেষ করার অনুশাসন দিয়েছেন।
প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়েছে, আশি লাখ মানুষের চট্টগ্রাম শহরে পানি ও বর্জ্য নিস্কাশন হয় ৫৭টি খাল দিয়ে। কিন্তু অবৈধ দখল, ভরাট আর বর্জ্যে বোঝাই এসব খাল বৃষ্টি হলেই আর পানি সরাতে পারে না। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর এই জলাবদ্ধতা এবং নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো ও যানজট দূর করতে শহরের জলাবদ্ধতা কমানো জরুরী। এছাড়া পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বন্দর নগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন দরকার।
‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় শহরে ভেতর ও বাইরের ৩৬টি খাল খনন করা হবে। একইসঙ্গে এসব খালের চার লাখ ২০ হাজার ঘন মিটার কাদা অপসারণ করা হবে। ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার সাইড ড্রেন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এক লাখ ৭৬ হাজার মিটার রেটেইনিং ওয়াল করা হবে। ৮৬ কিমি রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ৪৮টি পিসি ব্রীজ ও ৬টি কালভার্ট তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে প্রকল্পে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জুলাই, ২০১৭ থেকে জুন, ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হচ্ছে-ফেরি ও পল্টুন নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
রাজাপুর-কাঠলিয়া-আমুয়া-বামনা-পাথঘাটা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
‘কেরানীহাট-সাতকানিয়া-গুনাগরী জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগারগাঁওস্থ শেরেবাংলা নগরে ‘পর্যটন ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এছাড়া পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-২য় পর্যায়, এতে ব্যয় ৫৬৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন বেলগাছা ইউনিয়নের কুলকান্দি ও গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের মধ্যবর্তী যমুনা নদীর বাম তীর রক্ষা প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮৪ কোটি ৪ লাখ টাকা।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন যমুনা নদীর বামতীর সংরক্ষণের মাধ্যমে ভুয়াপুর-তারকান্দি সড়ক রক্ষা প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সৌর শক্তি ও পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
মহেশখালী পাওয়ার হাব এর ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪১ কোটি টাকা।