এসো পা বাড়াই (২৪ তম পর্ব)
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০১৭, ০৩:০৭
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
যখন আমার আত্মবিশ্বাস কাজ করে না, সে সময়ের জন্য একটা কৌশল আমি শিখেছি, তা হলো, মাঝে মাঝে নকল আত্মবিশ্বাস এর ভাব ধরলেও কাজে লাগে। আমি এটা আবিষ্কার করেছিলাম ১৯৮০ সালে যখন আমি একজন অ্যারোবিক্স প্রশিক্ষক ছিলাম (এর মানে, একটি রূপালী ব্যালে পোশাক, লেগ ওয়ার্মার এবং একটি চকচকে মাথায় বাঁধার ফিতা যার সবকিছু আমার লম্বা চুলের সাথে নিখুঁতভাবে মানিয়ে যেতো।) জেইন ফন্ডা (Jane Fonda) এর বেদবাক্য দ্বারা প্রভাবিত অ্যারোবিক্স মানে এও বোঝায় যে একটি পূর্ণ ঘন্টা দৃঢ়ভাবে হাসা। কোন কোন দিন হাসি স্বাভাবিকভাবেই আসে, আবার কোন দিন হয়তো মেজাজ বিশ্রী হয়ে থাকে, তখন নকল হাসি হাসতে হয়। যদিও জোরপূর্বক হাসির একটি ঘন্টা পরে, আমি প্রায়ই আনন্দ অনুভব করতাম।
আমাদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা আছে যে কারো সঙ্গে রাগ করেছি কিন্ত সবার সামনে ভান করছি যে সবকিছু একেবারে স্বাভাবিক। কখনো কখনো আমার হাজব্যান্ড ডেভ এবং আমার মধ্যে ঝামেলা হয় এবং হয়তো তার পরপরই কোন বন্ধুর বাসায় দাওয়াত আছে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে এরকম হাসি মুখ নিয়ে আমরা রওনা দেই এবং আশ্চর্যজনকভাবে কয়েক ঘন্টা পরে প্রায়ই তা ঠিক হয়ে যায়।
“অনুভব করার আগ পর্যন্ত নকল কর (fake it till you feel it)”, গবেষণা এই কৌশলকে সমর্থন করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যখন মানুষ নিজেকে উচ্চ ক্ষমতাধর মনে করে সেরকম অঙ্গভঙ্গি (যেমন হাত পা ছড়িয়ে জায়গা দখল করে বসা) করে বসে, মাত্র দুই মিনিটের জন্য; তখন তাদের আধিপত্য বিস্তারকারী হরমোন (টেস্টোস্টেরোন) এর স্তর উপরে উঠে যায় এবং তাদের স্ট্রেস বা চাপ তৈরীর হরমোন (করটিসল) এর স্তর নিচে নেমে যায়। ফলশ্রুতিতে, তারা বেশি ক্ষমতা অনুভব করে, দায়িত্ব নেয় এবং ঝুঁকি নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহনশীলতা দেখায়। অঙ্গভঙ্গির একটি সহজ পরিবর্তন, আচরণকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এর দিকে পরিচালিত করে।
আমি এই পরামর্শ দিচ্ছি না যে, কেউ আত্মবিশ্বাসী বোধ ছাড়িয়ে দাম্ভিকতা আর আত্মপ্রশংসায় ডুবে যাক। নারী বা পুরুষের মধ্যে এগুলো থাকলে কেউই তা পছন্দ করে না। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী বোধ- অথবা ভান করা যে আত্মবিশ্বাস অনুভব করছো- সম্ভাব্য সুযোগ পেতে প্রয়োজনীয়। এটি একটি মামুলি উক্তি, আসলে সুযোগ কখনো দেয়া হয় না, সুযোগ কেড়ে নিতে হয়।
গুগলে আমার সাড়ে ছয় বছরের কাজের সময়ে আমি প্রায় চার হাজার কর্মচারীর দল নিয়োগ করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের সবাইকে চিনতাম না, কিন্তু প্রথম প্রায় একশ জন বা এর কাছাকাছি চিনতাম। ওই কয় বছরে আমি যেটা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করেছি তা হলো, পুরুষগণ নারীদের চেয়ে অনেক দ্রুত বিভিন্ন সুযোগ ধরতে পেরেছেন। যখন আমরা একটা নতুন অফিস খোলার ঘোষণা দিতাম অথবা নতুন প্রকল্প চালু করতাম, পুরুষরা কেন তাদেরই এ দায়িত্বের নেতৃত্ব দেয়া উচিত তা ব্যাখ্যা করতে আমার দরজায় কষাঘাত করতো। পুরুষরাই সাধারণত উন্নতির সুযোগের পেছনে ছুটে বেড়ায়, এমনকি নতুন কিছু বিকাশ এর ঘোষণার আগেই। তারা নিজস্ব উন্নয়ন নিয়ে অধৈর্য থাকে এবং বিশ্বাস করে যে তারা আরো বেশী করার যোগ্য। এবং তারা আসলে প্রায়ই সঠিক থাকে- একদম আমার ভাই এর মতো। যাই হোক, নারীরা অনেক বেশী সতর্ক থাকে ভূমিকার পরিবর্তনে এবং নতুন ঝুঁকি খুঁজে নিতে। আমি প্রায়ই নিজেকে খুঁজে পেয়েছি, নতুন এলাকায় কাজ করার জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করতে। এরকম অগণিত কথোপকথন আছে আমার সাথে যেখানে নারীরা এই অনুপ্রেরণায় জবাব দিয়েছে এই বলে যে, “আমি ঠিক নিশ্চিত নই, আমি ওটা ভালো পারবো কিনা” অথবা “বেশ উদ্দীপক শোনাচ্ছে, কিন্তু আমি আগে কখনো এরকম কিছু করিনি” অথবা, “আমার বর্তমান ভুমিকায় এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি”। আমি কদাচিৎ, কখনো এরকম মন্তব্য পুরুষদের কাছ থেকে শুনিনি।
(চলবে...)