কবিতা

প্রতিবিধান

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০১৭, ১৬:০৪

তাহমিনা শাম্মী

যামিনীর অন্ধকারে,
মল বাজিয়ে কুয়োর ধারে-
গহিন কুয়োর ধারে...
খুঁজে বেরাই আমার করোটি কঙ্কাল,
আমায় অত্যাচারের পর
যেথায় ফেলেছিলে করে আমার ধর্মনাশ।

করে ছিলে মুখ বন্ধ, দিয়ে আমারই অন্তর্বাস
যাতে করে আমার আর্ত চিৎকার শুনে
ছুটে না আসতে পারে আমার কুকুর ছানাটিও
বেঁধেছিলে হাত, দিয়ে তোমাদেরই কারো এক জনের কোমরবন্ধ
তাই যে পথ দিয়ে আমায় টানতে টানতে নিয়ে এসেছিলে
সে পথের একটা ডালও ভেঙ্গে রেখে আসতে পারিনি
রেখে আসতে পারিনি এমন কোন স্মৃতি চিহ্ন
যাতে আমার দেহের শেষ অংশটিও খুঁজে পায় স্বজনেরা,
তোমাদের কার্য শেষে পা দুটিকেও বেঁধেছিলে উল্টো করে।

বস্তায় ভরার ঠিক আগ মুহুর্তে যখন এসিড ঢাললে মুখে
তখনও আমার প্রাণ ছিল দেহে
কি যন্ত্রণা, কি বীভৎস যন্ত্রণা,
আমার যখন শব্দহীন শেষ চিৎকার দেবার চেষ্টা
তখন তোমাদের উচ্ছ্বাসিত হাসিতে ফেটে যাচ্ছিল চারিদিক,

তোমাদের অবহেলায় ঠিক করে বাঁধা হয়নি বস্তার মুখ
তাই ফেলে দেবার পরেও ভেসে উঠেছিলাম,
হয়তো বাঁচার আশায়, বেঁচে থাকার আশায়!
তোমাদের দৃষ্টি বড় তীক্ষ্ণ, এরাইনি চোখ
তাই মাথায় ঠিক মাঝখানটায় ফেলেছিলে পাথরের টুকরোটি।

কি দোষ ছিল আমার?
কলেজের পথে তোমরাই তো প্রতিদিন আমার বান্ধবীর
পথ রোধ করতে, নোংরা ইঙ্গিত করতে,
স্কুলে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মেয়টার
আর তাই তোমাদের বিরুধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম, এটাই?

এখানেই এই শুকনো গহীন কূপেই কোথাও আছে আমার কঙ্কাল,
অন্তর্বাসের হুক, কোমরবন্ধ, আর সেই পাথর খন্ড,
তোমারা খুঁজে দেখ, একবার খুঁজে দেখ!
এইতো এখানেই পড়েছিল আমার দুল,
খুরো, মাটি খুরো, এখানে এই গহীন কূপের গহনে
আমি এখনো আছি,

ভাঙো, ভেঙ্গে ফেলো কূপের দেয়াল
একবার তুলে আনো তোমাদের মাঝে
একবার খুঁজে দাও, একবার খুঁজে দাও আমার কঙ্কাল
একবার প্রাণ দাও, নতুন মাংস দাও, একবার দেহ দাও,
দেখ কীভাবে খুঁজে বের করি একটা একটা নরপশু
কিভাবে নারীর বাস যোগ্য করি এই মলিন পৃথিবী। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত