এসো পা বাড়াই (৮ম পর্ব)
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:৪০
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
আমার মা এবং তার দুই ভাইয়ের জন্মের পর নানি তার সব সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়েছিল। আমার মা পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিল, যেখানে সহশিক্ষা প্রচলিত ছিল। ১৯৬৫ সালে ফরাসী সাহিত্যে ডিগ্রী অর্জন করার পর আমার মা কর্মক্ষেত্র নিয়ে একটি জরিপ করেছিল যা থেকে তার বিশ্বাস জন্মেছিল যে কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য শুধুমাত্র দুইটি পথই খোলা আছে - শিক্ষকতা অথবা নার্সিং। সে শিক্ষকতা বেছে নিয়েছিল। সে পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করেছিল, বিয়ের পর যখন আমি তার গর্ভে এলাম তখন সে তার পিএইচডি পড়া ছেড়ে দেয়। সংসারের আয়ে যদি স্বামীকে তার স্ত্রীর সাহায্য নিতে হয়, এটাকে দুর্বলতার লক্ষণ বলে মনে করা হতো তখন, তাই আমার মা ঘরে থাকা মা হয়ে গেল এবং সেইসাথে একজন সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবক। তবে এভাবে শতাব্দী প্রাচীন শ্রমবিভাজনই টিকে থাকলো।
যদিও আমি বেড়ে উঠেছি একটি গতানুগতিক পরিবারে তবুও আমি, আমার বোন এবং আমার ভাইয়ের প্রতি আমার বাবা-মায়ের একইরকম প্রত্যাশা ছিল। আমাদের তিনজনকেই উৎসাহ দেয়া হতো স্কুলে ভালো করার জন্য, সমানভাবে ঘরের কাজ করার জন্য এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কাজে নিয়োজিত হতে। আমাদের সবারই ক্রীড়াবিদ হওয়ার কথা ছিল। আমার ভাই আর বোন ক্রীড়াদলে যোগও দিয়েছিল, কিন্তু আমি ছিলাম সেরকম শিশু যাকে জিমে সব শেষে বাছাই করা হতো। আমার এই ক্রীড়াবিষয়ক ত্রুটি সত্ত্বেও আমাকে এ বিশ্বাস দিয়ে বড় করা হয়েছিল যে, ছেলেরা যা করতে পারে মেয়েরাও তার সব কিছুই করতে পারে এবং আমার জন্য সকল পেশার পথই খোলা আছে।
১৯৮৭ সালের হেমন্তে আমি যখন কলেজ শুরু করেছিলাম, আমার মনে হয়েছে আমার সহপাঠিরা ছেলে মেয়ে উভয়ই পড়ালেখায় সমান মনযোগী। আমার মনে পড়ে না ভবিষ্যত পেশা নিয়ে একজন পুরুষ ছাত্রের চেয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করেছি বলে। কাজ এবং সন্তান এর ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে কোন আলোচনার কথাও আমার মনে পড়ে না। আমার বন্ধুরা এবং আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে আমাদের সবই হবে। নারী এবং পুরুষ একজন আরেকজনের সাথে খোলাখুলি আর দৃঢ়ভাবে প্রতিযোগিতা করবে শ্রেণীকক্ষে, বিভিন্ন কাজে এবং চাকুরীর ইন্টারভিউতে। আমার নানির মাত্র দুই প্রজন্ম পরেই খেলার মাঠকে সমতল বলে মনে হচ্ছিল।
কিন্তু আমার কলেজ পাশের বিশ বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পরও, আমি যেরকম বিশ্বাস করেছিলাম পৃথিবী তার কাছাকাছিও প্রতিপাদিত হচ্ছে না। আমার প্রায় সব পুরুষ সহপাঠীরাই পেশাদারী স্থাপনার পরিবেশে কাজ করে। আমার কিছু নারী সহপাঠী বাড়ির বাইরে পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন কাজ করে এবং অনেকেই আছে ঘরে থাকা মা আর আমার মায়ের মত স্বেচ্ছাসেবক। এটা জাতীয় প্রবণতা প্রতিফলিত করে। অনেক বেশী সংখ্যায় অতি উচ্চ শিক্ষিত নারীরা পেছনে পড়ে আছে এবং বাদ পড়ে যাচ্ছে কর্মক্ষেত্র থেকে, একইরকম যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষের তুলনায়। পালাক্রমে এই বিচ্যুতি মেনটোর এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেখাচ্ছে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি বিনিয়োগ করতে, পরিসংখ্যানগতভাবে যাদের কর্মক্ষেত্রে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
(চলবে...)