এসো পা বাড়াই (৬ষ্ঠ পর্ব)
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:২৪
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
এই বই এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে, যেকোন সাধনায় উচ্চাভিলাষী হওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখায়। আমি বিশ্বাস করি সত্যিকারের সমতার জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে ক্ষমতায় থাকা নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, একইসাথে আমি এও বিশ্বাস করি যে, সাফল্য ও সুখের সংজ্ঞা কেবল একটি নয়। সব নারী সফল কর্মজীবন চায় না। সব নারী সন্তান চায় না, আবার সব নারীই দুটো একসাথে চায় না। আমি কখনোই এটা প্রচার করতে চাচ্ছি না যে, আমাদের সবার একই রকম লক্ষ্য থাকা উচিত। অনেক মানুষই ক্ষমতা অর্জনে আগ্রহী নয়, এটার কারণ এই না যে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব বরং এটাই কারণ যে তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করছে।
একবারে মাত্র একজনের পরিচর্যা করেও পৃথিবীর জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবদান প্রণীত হয়েছে। আমাদের প্রত্যেককে নিজেদের পথ বেছে নিতে হবে এবং নিজেদের জীবন, মূল্যবোধ আর স্বপ্নের সাথে মানানসই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
আমি এ বিষয়েও তীব্র সচেতন যে বেশীরভাগ নারীরাই পরিবারের যত্ন এবং তাদের নুন্যতম চাহিদা মেটাতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই বইয়ের কিছু অংশ সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক, সেসব ভাগ্যবান নারীদের সঙ্গে যারা কখন, কোথায় কতটুকু কাজ করবে তা বেছে নিতে পারে। অন্য অংশগুলো প্রযোজ্য সে সব পরিস্থিতিতে যার মুখোমুখি নারীদের হতে হয় প্রত্যকটা কর্মক্ষেত্রে, প্রত্যেক সমাজে এবং প্রত্যেক বাড়িতে। আমরা যদি সফল হতে পারি সর্বোচ্চ স্তরে আরো বেশী নারী মতামতকে যুক্ত করতে তাহলে সবার জন্যই সুযোগ সুবিধা প্রসারিত হবে এবং আমরা সবার জন্য ন্যায্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবো।
কেউ কেউ বিশেষ করে অন্য ব্যবসায়ী নারীরা এই বিষয়ে প্রকাশ্য কথনে আমাকে সতর্ক করেছে। যাই হোক, তারপরও যখন আমি সোচ্চার হয়েছি তখন আমার বিভিন্ন মন্তব্য নারী-পুরুষ উভয় পক্ষকেই মর্মাহত করেছে। আমি জানি কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, নারীরা কিসে নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে সেটাতে গুরুত্ব দিলে, তাদেরকে এগিয়ে যাওয়া শিখতে জোর দিলে- এটা অনেকটা মনে হয় আমি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঝামেলা মুক্ত করছি, তাদের কাজ আমিই করে দিচ্ছি। অথবা আরো খারাপ যেটা তা হলো ক্ষতিগ্রস্থকে দোষ দেয়ার দায়ে আমাকে অভিযুক্ত করছে তারা। ক্ষতিগ্রস্থকে দোষ দেয়া মোটেই নয় বরং আমি বিশ্বাস করি যে নারী নেতৃবৃন্দ-ই সমাধানের চাবিকাঠি। কিছু সমালোচক আবার দেখাবে যে এগিয়ে যাওয়া আমার জন্য অনেক সহজ যেহেতু যে কোন প্রয়োজন পূরণের আর্থিক সামর্থ্য আমার আছে। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই পরামর্শ প্রদান যা আমার নিজেরও দরকারী ছিল সেই অনেক আগে যখন আমি গুগল অথবা ফেসবুক এর নামও শুনিনি। এবং যা অনুরণিত হবে নারীদের সাথে ব্যাপক পরিসরের পরিস্থিতিতে।
আমি এইসব সমালোচনা অতীতে শুনেছি এবং আমি জানি ভবিষ্যতেও শুনবো- অন্যরাও শুনবে। আমি আশা করছি আমার বক্তব্যের যথার্থতা বিচার করা হবে। আমরা এই কথোপকথন এড়াতে পারি না। এই সমস্যা এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেছে, এখনই আরো বেশী নারীদের উৎসাহিত করতে হবে সম্ভাবনাপূর্ণ স্বপ্ন দেখতে। এবং আরো বেশী পুরুষকে উৎসাহিত করতে হবে কর্মক্ষেত্রে এবং বাড়িতে নারীদেরকে সাহায্য করতে।
আমরা এই আমূল পরিবর্তনকে পুনরায় প্রজ্বলিত করতে পারি, আমাদের ভেতরে এই বিপ্লবকে ধারণ করে, এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। একেকজনের অংশগ্রহণেই পৃথিবী আরো সমতার বিশ্বে স্থানান্তরিত হবে। প্রতিটি নারীর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা সত্যিকারের সমতার বৃহত্তর লক্ষ্যের আরো কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবো।
(চলবে...)