চন্দনা’র গল্প
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০১৬, ০১:০২
রাতের ২য় প্রহর। অন্ধকার গহ্বরের পৃথিবী, ভূখন্ড, আকাশ, অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে বাম দিকের রুমের দরোজার সামনে দাঁড়ায় রাজন সরকার। কয়েক সেকেন্ড কি যেনো ভেবে ধাক্কাতে থাকে ঠক ঠক করে।
এলাকায় নতুন পতিতা এসেছে। ভিড়ের চোটে একরাত ফাঁকা পাওয়াই মুশকিল। আমোদ ফূর্তির রেশ আসলে শরীরে আর ঘরে মন বসে না। নিত্য নতুন শরীরের গন্ধ নেয়ার স্বভাব যেনো তার যৌবনটাকেই বাড়িয়ে দিচ্ছে- এইসব ভাবতে ভাবতে খুঁট শব্দে দরোজা খুলে যায় রাজন সরকারের সামনে। ভেতরে ঢুকেই সে তাড়াহুড়ো করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
ছোটখাটো একটা রুম। কিশোরী একটা মেয়ে প্রায় হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে বসে আছে। তার ফর্সা পা দুটোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেয় রাজন সরকার। মেয়েটা উঠে দাঁড়াতেই পায়ের কমদামী মলটা ঝমঝম করে উঠলো।
নাম কি তোর ছেমড়ি?
চন্দনা
সত্যি নাম না বানোয়াট নাম
বানোয়াট নাম আমি কই না, কাছিমের শরীর; লজ্জ্বা লাগলে মাথাডা ঢুকায়ে ফেলি খোলসের ভিত্রে। বাপেই নাম দিছিলো চন্দনা বসাক।
তর বাপে কি তরে দেখে না?
না। মায়ে আছিলো বাইজী। শহরের নামকরা বাইজী আছিলো। তারো আগে বাপে আমারে আর মায়েরে ফেলাইয়্যা চইল্যা যায়। হেরপর মায়েও আমারে থুয়া চইল্যা যায় তার এক পিসির লগে। স্টেশনে ভিক্ষা করতাম। বুড়োরাম নিয়া আইছে আমারে। একদিন হাত ধইরা কইলো স্টেশনে মাগনা চোদন খাওয়ার চাইতে বেশ্যাগিরি করতে। ভিক্ষার চে এইডা আর কি এমুন মন্দকাম!
কাহিনী মন্দ বানাস নাই।
কাহিনী হইবো ক্যান? জীবনডা তো ছিনেমা না, ছিনেমার থিকাও কডিন।
তর বয়স কত, দেখতে তো ছোটই লাগতাছে।
কইতে পারি না। তয় কড়ি গুনলে এইবার পুনেরো হইবার কতা।
আপনে প্রশ্ন করতে আইছেন নি? যা কাম কইরা যান গা, ঘুমামু। শইলডা তো দলাই-মলাই কম অয় না বেবাক দিন। বেশ্যার শরীর, টাকা দিয়া সরকারী মালের মতো চাবাইতে থাকে সবডি। আমার এই অসআয় বেডাগো দেখলে পরে বুকের ভিত্রে সুখ হয়। হিহিহি...
বেশি পাকনা কথা কইয়া ফেলছোস। পুরুষের কিসের অসহায়ত্ব রে, টাকা দিবো, ফূর্তি করবো; বাড়ি চইলা যাইবো।
বেবাক ব্যাডারা নারীরে ক্যান টেঁকাটুকা দিয়া কিনা নেয় কন দেহি? তারা পত্যেকেই সুখী হইবার চায়, চায় হেরো দুর্বলতাডা ঢাকতে। নাইলে কি আর ঘরে বৌ ফালায়া রাইত-দুপুরে মারা খাওয়েন লাইগ্যা আহে!
ভাগ্যসংসারে এই যে ব্যাডাগুলান, হেগো আমার বড্ড মায়া করে! কিছু পারুক না পারুক তৃপ্তি নিয়া ঘর থিকা বার কইরা হাসিমুখে তাগো ঘরে ঠিকই পাঠাইয়্যা দিই আমরা।
মাগীরে তোর কথার খৈ তো ভালোই ফুটছে। কামের বেলায় দেখবানি কি করস। ট্যাঁকাও নিবি আবার কখাও শুনাইবি?
কতা তো শুনি আমরা, আমাগো চামড়া শক্ত তবুও গায়ে বিঁধানি কতা মাইনস্যে কম কয় না। মসজিদের ইমাম থিকা শুরু কইরা মন্ত্রির পোলা কার পা পড়ে নাই চন্দনার ঘরে? দিনের বেলায় তো হেরায় কইবো এই ঘর উচ্ছেদ করার। অথচ রাইতটা এই ঘরেই কাট্যায়া গেছে। হিহিহি...
তোগো ঘর কিরে, ভাইস্যা আসা মাইয়্যাগো ঘর থাকতে নাই। ঘর থাকে আমাগো।
আপনের ঘরডা কি পতিতালয় না? বিয়া কইরা এইঘরে আইছেন, বৌ আর আমার মদ্দি ফারাক ডা কুনে? একখান বৈদ আরেকখান অবৈদ এইডাই? মনের টান থাকলে কি আর এইহানে আইতেন।
রাজন সরকার আর কথা বাড়ায় না, দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। ধীরে সে চন্দনার কাপড় খুলতে থাকে তার অভিজ্ঞ হাতে। তার চোখের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে প্রখর একটি সূর্য, কিছুক্ষণের জন্য অন্ধ হয়ে যায় সে সূর্যের তীব্র আলোয়।
রাত নামতে থাকে, বাড়তে থাকে পরিকল্পিত শিৎকার। অচিরেই মিলিয়ে যায় চারকোনা রুমের ভেতর। একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্বলে ওঠে। কামনার জোয়ারে কেউ ভাসে, কেউ ভাসায়। অন্ধকার যোনীর গর্ত চিড়ে ফেলতে থাকে নামজাদা ক্ষমতাশালীরা। তথাকথিত ঈশ্বর কাউকে দেয়, কারো থেকে শুষে নেয় জীবনী। বিনিময় মাত্র টাকা।
বুড়োরামের মুখে হাসি। চন্দনার ঘরে কাস্টমারদের ভিড় লেগেই আছে। গতরাতে চন্দনার মতোই নতুন একটা মেয়ের সন্ধান পেয়েছে সে। তারে রুম ধরায়ে দিতে পারলেই ব্যবসা হৈ হৈ করে বাড়তে থাকবে। নিজের বড় মেয়েটার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। ভালো যায়গায় বিয়ে দিতে গেলে টাকাপয়সার ব্যপার থাকে। এই সুযোগে টাকা গুছিয়ে নিতে পারলেই হয়।
রাজন সরকার তৃপ্তি নিয়ে বেরিয়ে আসে চন্দনার ঘর থেকে। ক্রমেই ভোর হয়ে যাচ্ছে। দিনের আলো ফোঁটার আগেই এই এলাকা পাড়ি দিতে হবে বলে দ্রুত পা চালায় সে।
বুকের ভেতরে টাকা গুজে শেষে তৃপ্তির হাসি হাসে বোধহয় চন্দনাই। তার ভাবনাহীন জীবন। যৌবন যতদিন আছে টাকা ততোদিন থাকবে। স্বপ্ন, আশা, ভালোবাসা এইসব চন্দনার কাছে ভ্রম। বাস্তবতা মেনে নিতে তার লজ্জ্বাবোধ নেই। পৃথিবীর কাছ থেকে সে শিখে নিয়েছে- 'পাপমুক্তি শরীরে না মনে ঘটে'। প্রতিদিনের শারীরিক ও মানসিক কষ্টটাকে উৎসর্গ করে শুদ্ধ হয়ে ওঠে চন্দনা। ছোটকালে তার মাসি তাকে বলেছিলো- ঈশ্বরের কাছে বেদনা উৎসর্গ করলেই কেবল মুক্তি ঘটে।