চর্যাপদ প্রকাশের শতবছর

শিল্পকলায় চর্যানৃত্য এবং বাংলার শাস্ত্রীয়-গৌড়ীয় নৃত্য পরিবেশনা

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০০:৩১

জাগরণীয়া ডেস্ক

চর্যাপদ প্রকাশের শতবছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় নেপাল থেকে আগত প্রখ্যাত নৃত্যগুরু চন্দ্রমান মুনিকরের পরিচালনায় মাসব্যাপী চর্যানৃত্য কর্মশালার সমাপনীতে ৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে চন্দ্রমান মুনিকরের পরিচালনায় ‘চর্যানৃত্য’ এবং ভারতের গৌড়ীয় নৃত্যের প্রখ্যাত গবেষক প্রফেসর ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় বাংলার ‘শাস্ত্রীয় নৃত্য গৌড়ীয় নৃত্য’ পরিবেশনার আয়োজন করা হয়।

একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর, এম.পি।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব আক্তারী মমতাজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক জনাব সোহরাব উদ্দিন। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন নেপাল থেকে আগত নৃত্যগুরু চন্দ্রমান মনিকর ও ভারতের গৌড়ীয় নৃত্যের প্রখ্যাত গবেষক প্রফেসর ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও বরেণ্য নৃত্যশিল্পী ও পরিচালকবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা শেষে কর্মশালার প্রশিক্ষণার্থীদের অংশগ্রহণে চন্দ্রমান মুনিকরের পরিচালনায় ‘চর্যানৃত্য’ এবং প্রফেসর ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় বাংলার ‘শাস্ত্রীয় নৃত্য গৌড়ীয় নৃত্য’ পরিবেশিত হয়।

উল্লেখ্য মাসব্যাপী চর্যানৃত্য কর্মশালায় ঢাকার বিভিন্ন নৃত্য সংগঠনের এবং ঢাকার বাইরের ১১৮জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে থেকে ৮১ জনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।

চর্যাপদ
প্রাচীন বাংলার চর্যাকর্তাদের আবির্ভাব ও চর্যাপদ রচনার সময়কাল নিয় গবেষকদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ আছে। তবে তারা তিব্বতী ভাষার নানা গ্রন্থকে অবলম্বন করে চর্যাপদকর্তাদের অবির্ভাবকাল নির্নয়ের চেষ্টা করেছেন। এতদ্ব্যতীত, চর্যার পদসমূহের বিষয়বস্তু ও সাধনপদ্ধতির ঐতিহাসিকতা এবং তাতে বিবৃত সমাজ ও ধর্মচারকে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকগণ অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন যে, চর্যাপদগুলো অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত।

চর্যাপদ বা চর্যাগীতি বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। এতে মূলত তান্ত্রিক বৌদ্ধদের সাধনপদ্ধতির কথা গান বা পদ্যাকারে লিপিবদ্ধ আছে। চর্যাপদগলো যে গান এ-সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতে পারে গবেষকগণ আরোধিক বিস্তৃত ব্যাখার অবতারনা করেছেন। তারা তাদের ব্যাখায় বলেছেন, বস্তুত আমাদের সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ থেকেও দুশ’বছর আগে পর্যন্ত রচিত কবিতাপাঠ বা আবৃত্তি করা কোনদিনই প্রচলিত ছিলনা। বৈদিক সূত্রগুলি ত্রিষ্টুভ, গায়ত্রী জগতী, অনস্টুপ, বিরাজ ইত্যাদি নানা ছন্দে রচিত হলেও সেগুলো কখনো পাঠ করে শোনানো হতোনা, গান করে শোনানো হতো। উদাত্ত, অনুদাত্ত স্বরিত-নানা পাঠভঙ্গি অর্থাৎ গীতিভঙ্গি সেখানে ব্যবহৃত হতো। সংস্কৃত কাব্যগুলিও গান গেয়ে শোনানো হতো, কিংবা নাটক আকারে অভিনিত হতো। এই ভারতীয় ধারাটি বিশেষভাবে বাংলাদেশে অভিব্যক্ত হয়েছে অতিপ্রাচীনকাল থেকে। মধ্যযুগের বাংলায় প্রচলিত কৃষ্ণ-রাধার লীলারসময় পদবন্ধ, কিংবা ভক্তিরসময় আত্মনিবেদনের গভীরতাময় পদাবলী-সবই গীত হতো। প্রেমে, নামে, শ্রমে, ধর্মে সর্বত্রই বাঙালিগীত প্রেমিক। এই গীতধর্মী মন সবচেয়ে বিকশিত হয়েছে মধ্যযুগের বাঙালি কবি রচিত বৈষ্ণব পদাবলীতে। ভাব এবং বাহ্যিক রূপ দুই দিক দিয়েই চর্যাপদেও সেই আদি লক্ষন সুস্পষ্ট। তাই মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন, চর্যাপদের গানগুলি বৈষ্ণবদের কীর্তনের মতো, গানের নাম চর্যাপদ। সেকালেও সংকীর্তন ছিল এবং কীর্তনের গানগুলিকে পদই বলিত। তবে এখনকার কীর্তনের পদকে শুধু পদ বলে, তখন চর্যাপদ বলিত। কীর্তনের সঙ্গে গীতিবাদ্য-নৃত্যের সমন্বয়দৃষ্টে সব মিলিয়ে গবেষকগণ বলেন, কীর্তন সততই একটি গীতধর্মী নাট্যরীতি, সে মধ্যযুগের হোক বা বর্তমানের। সেই সূত্রে প্রাচীনতম কীর্তনের নিদর্শন যদি হয় চর্যাগীতি বা চর্যাপদ, তবে সেতো চর্যাপদকেই বাংলার প্রাচীনতম নাট্যের নিদর্শনও বলা যেতে পারে।

নৃত্যগীতের উল্লেখ চর্যাপদে আরো অনেক স্থানে আছে। ডোম, কাপালিক, নট ইত্যাদি জীবীকার এবং জাতির লোকদের মধ্যে নৃত্য করা কিংবা গীত-বাদ্যের সমাদর করা খুবই প্রচলিত ছিল মনে হয়। সেই সময়ে বাঙালি সমাজের নিন্মস্তরে এমন এক শ্রেণির লোকবোধ ছিল, যারা নাচ-গান করেই জীবীকা নির্বাহ করত।

১০ সংখ্যক চর্যায় নড়পেড়া শব্দের অর্থ যদি নটপেটিকা হয় তবে দেখা যায় যে, সেকালে ছোট পেটিকা বা পেটরায় নটনটীর সকল সাজপোশাক থাকতো। এক্ষেত্রে গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে-পেটরায় সাজ পোশাক রক্ষণাবেক্ষণ পেশাজীবীদের পক্ষেই সঙ্গত। উক্ত ১০ সংখ্যক চর্যায় বিভিন্ন স্থানে নৌকায় করে ডোমনির আসা-যাওয়া-প্রসঙ্গ দৃষ্ট হয়। যে পদের সূচনায় চর্যাপদকর্তা কাহ্নুপাদ তাঁর আত্মজীবনীতে ডোম্বীর বাসস্থানের কথা উল্লেখ করে ডোম্বীর যাওয়া আসার পথের পাশে তাঁর রূপমুগ্ধ ও নৃত্যগুনমুগ্ধ হয়ে ডোম্বীকে প্রেমনিবেদনে প্রশ্ন করেছেন, ‘ওগো ডোম্বী তোমাকে সৎভাবে জিজ্ঞাসা করছি, ডোম্বী কার নৌকায় তুমি আসা যাওয়া করো। মূল চর্যাপদে এ কথাটি যেভাবে আছে, তা হচ্ছে-

আলো ডোম্বী তু পুছমি সদভাবে
আসসসি যাসি ডোম্বী কাহেরী নাবে।।

চর্যার এ পদটির পাঠ থেকে গবেষকগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেকালে নিম্নবর্ণের নারী-পুরুষরা নৃত্যগীতাভিনয় প্রদর্শনের জন্য নানা স্থানে আসা-যাওয়া করতো। এই পদের অন্য দুটি চরণে নৃত্য-পটিয়সী ডোম্বীর সুষম নৃত্যকলার কথাও বিবৃত হয়েছে বেশ স্পষ্টভাবে-

এক সো পদমা চটুসট্ঠী পাখুড়ী।
তাঁহি চড়ি নাচা ডোম্বী বাপুড়ি।।

অর্থাৎ, একটি সে পদ্মের চৌষট্টিটি পাপড়ী। তাতে চড়ে নাচে ডোম্বী বেচারি।। অত্র পদে যেভাবে প্রাচীন বাংলার নৃত্য প্রসঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়, তেমনি চর্যার অন্য একটি পদ ১১ সংখ্যক চর্যায় নৃত্যের বা নাট্যাভিনয়ে আহার্যের অনুসঙ্গ হিসেবে ‘নেউর’ বা নুপুর ‘ডমরু’ এবং নৃত্যকালিন অঙ্গ-আভরণ হিসেবে ‘কু-ল’ ও ‘মুত্তিহার’ বা মুক্তাহারের উল্লেখ পাওয়া যায় এতদ্বতীত চর্যার ১৭ ও ১৯ সংখ্যক পদে ‘হেরু বীণা’ বা হেরুক বীণা, ‘পড়হ’ বা পটই ‘মাদলা’ বা মাদল, ‘কর-’ বা ঢোল, ‘কশালা’ বা কাঁশি ‘দুন্দহি’ বা দুন্দভি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ আছে।

চর্যার উক্ত নৃত্যগীত প্রসঙ্গে নতুনভাবে দৃষ্টিপাত করেন অপেক্ষাকৃত আধুনিককালের চর্যার সংগ্রাহক ড: শশিভূষণ দাশ গুপ্ত (১৯১১-৬৪)। তিনি ১৯৬৩ খ্রি: নেপাল থেকে ১০০টি নতুন চর্যাপদ সংগ্রহ করে আনেন এবং জানান তাঁর নাচ-গানের সময় হাতে লেখা পুঁথি ব্যবহার হতো। এই রকম ব্যবহারের কোন পুঁথি নষ্ট হয়ে গেলে আবার নকল করে নেয়া হতো। গবেষকদের অত্র বক্তব্য হতে প্রতিয়মান যে, চর্যাপদ বা গানগুলো মূলত নৃত্য ও গীত পরিবেশনার পাণ্ডুলিপি।

গৌড়ীয় নৃত্য
‘গৌড়ীয় নৃত্য’ নামটি অর্বাচীন শোনালেও মোটেও নবীন নয়। এটি অতিপ্রাচীন অবিভক্ত বঙ্গের শাস্ত্রীয় নৃত্য। সংস্কৃতি জগতে সুদীর্ঘ এর পথ পরিক্রমা। দু’হাজার বছরেরও প্রাচীন শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং নাটকের আকর শাস্ত্রগ্রন্থ ভরতনাট্যশাস্ত্রে এর বিস্তারিত উল্লেখ আছে।

নানাকারণে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে দেশবিভাজনে বিশেষত ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যগুলির মতই এই শাস্ত্রীয় নৃত্যধারাটিও ধূলি ধূসরিত কালের আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছিল। পুনরায় দীর্ঘকালব্যাপী গবেষণার ফলে নৃত্যধারাটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং স্বমহিমায় ভাস্বর ও বিরাজিত। প্রাচীন বৃহত্তর বঙ্গ অঞ্চলের নাম ছিল ‘গৌড়’। পণ্ডিতরা বলেন ‘গুড়’ থেকে গৌড় শব্দটির উৎপত্তি। গৌড় থেকে গৌড়ীয়। গৌড়ীয় নৃত্যের নাম উপমহাদেশের বিভিন্ন শাস্ত্রে যুগ যুগ ধরে উল্লেখিত। এই নৃত্যের গরিমা সুপরিস্ফুট, প্রত্যয়ের সঙ্গে বিন্যস্ত-খৃঃ পূঃ কাল থেকে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে যথা-চন্দ্রকেতুগড়, তাম্রলিপ্ত, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতীপুর, কান্তজীমন্দির, বিষ্ণুপুরের মন্দির ইত্যাদিতে খোদিত ভাস্কর্যসমূহে। বাংলার টেরাকোটা অর্থাৎ পোড়ামাটির ফলক, প্রস্তর, ধাতব, দারু বা কাঠ, হাতির দাঁত বিভিন্ন বস্তু দিয়ে শিল্পীরা চলমান নৃত্যশৈলীকে স্থিরীকৃত করে রেখেছে ভাস্কর্যে। আছে বাংলার চিত্রকলার পাল যুগ থেকে এই নৃত্যের স্বাক্ষর, বাংলার সাহিত্যে চর্যাপদ গীতগোবিন্দ থেকে মঙ্গলকাব্যের ছত্রে ছত্রে এর সজীব নিদর্শন। আছে গৌড়ীয় নৃত্যের শাস্ত্রগ্রন্থ উত্তরবঙ্গের পণ্ডিত শুভঙ্কর লাহিড়ী (চক্রবর্তী)র লেখা-সংগীতদামোদর এবং শ্রীহস্তমুক্তাবলী, আছে সাহিত্য। যা বর্তমানে প্রচলিত অনেক শাস্ত্রীয় নৃত্য সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলার সাহিত্য, বাংলার শাস্ত্র, বাংলাধর্ম-দর্শন ইত্যাদি দ্বারা। বাংলার গ্রামীন গুরুপরম্পরা ধারা প্রাণিত করেছে গৌড়ীয় নৃত্যকে। শাশ্বত তার এই পথ পরিক্রমা। গৌড়ীয় নৃত্য ভাব-রস সাহিত্য সম্পৃক্ত বাংলার শাস্ত্রীয় নৃত্য।

চণ্ডীবন্দনা
যেকোন শাস্ত্রীয় নৃত্যই শুরু হয় বন্দনা নৃত্য দিয়ে, গৌড়ীয় নৃত্যও ব্যতিক্রম নয়। বহু ধরণের বন্দনা নৃত্য রয়েছে। তারমধ্যে চনণ্ডীবন্দনাও অন্যতম। আজকের পরিবেশিত চন্ডীবন্দনাটি নেওয়া হয়েছে ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম রচিত ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্য’ এবং মুণ্ডুমালা স্তোত্র থেকে। রাগ মিশ্র ও তাল-গুচ্ছ। 

আলাপচারী
আলাপ অর্থ রাগ সরগম এর সাথে পরিচিত হওয়া’ এবং চারী অর্থ ‘চলন’। এটি তাল সম্পৃক্ত বিশুদ্ধ নৃত্যপর্যায়ভুক্ত নৃত্য। এটি রাসনৃত্যের একটি অংশবিশেষ। চৈতনেগত্তর পর্বে বাংলার বৃহৎ বঙ্গের টেরাকোটা মন্দিরগুলোতে রাসনৃত্যের বহু ভাস্কর্য দেখা যায়। বিশেষত বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রসিদ্ধ মন্দির দিনাজপুরের কান্তজী মন্দির গাত্রে নৃত্যভাস্কর্য চলমান গৌড়ীয় নৃত্যের স্থিরচিত্র মূর্তি। অতিসম্প্রতি ২৫শে আগস্ট সাড়ম্বরে জন্মাষ্টমী উদ্যাপিত হয়েছে। সেজন্য আমাদের পরবর্তী নিবেদন কৃষ্ণের আলাপচারী। এটি ষোড়শ শতকের প্রসিদ্ধ গৌড়ীয় কবি শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত ‘শ্রীগোবিন্দলীলামৃতম’ থেকে উদ্ধৃত। রাগ-দেশ, তাল-আড়া-দাশপাহাড়ী। নৃত্য পরিকল্পনা ও পরিচালনা-অধ্যাপক মহুয়া মুখোপাধ্যায় এবং সঙ্গীত পরিচালনা ও পরিবেশনায়-শ্রী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়।

শিবনামাবলী
গৌড়ীয় নৃত্যের নামাবলী পর্যায়ভুক্ত নৃত্য শিবনামাবলী। ‘নামাবলী’ অর্থ বহু নামের সমাহার’। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত গৌড়ীয় নৃত্য কর্মশালায় যে নৃত্যটি শিক্ষাদান করা হয়েছিল সেই নৃত্যটি নিবেদিত হচ্ছে আজ ‘শিবনামাবলী’ নৃত্যটিগৃহীত হয়েছে অষ্টাদশ শতকের কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য থেকে। রাগ-শুদ্ধবঙ্গাল, তাল-দাশপাহাড়ী।

পুতনামোক্ষ
একজন নট বা নটী যখন একক অভিনয় প্রদর্শন করেন তখন তাকে একাহার্য নৃত্য বলে। নাট্য বা কাহিনী সম্বলিত ‘লীলাকীর্ত্তণ’ পর্যায়ভুক্ত নৃত্য ‘পুতনাবধ’। ছোট্ট কৃষ্ণকে মেরে ফেলার অভিপ্রায়ে রাজা কংস ‘পুতনা’ নামক রাক্ষসীকে নিযুক্ত করেন। পরন্তু ভগবান কৃষ্ণ রাক্ষসী পুতনাকেই বধ করে মোক্ষ লাভ করান। এই নৃত্যটির বাচিক গ্রহণ করা হয়েছে ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকের কবি মালাধর বসু রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ থেকে। কবি মালাধর বসু ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ রচনা করে বাংলার সুলতানের কাছ থেকে ‘গুণরাজ খাঁ’ উপাধি পেয়েছিলেন। পুতনাবধের ভাস্কর্য কান্তজী মন্দিরের খোদিত আছে। গৌড়ীয় নৃত্যের সমগ্র পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন অধ্যাপক মহুয়া মুখোপাধ্যায় এবং সঙ্গীত পরিকল্পনা, পরিচালনা ও পরিবেশনায় গৌড়ীয় সঙ্গীত গবেষক শ্রী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। এখন পরিবেশিত হচ্ছে আজকের গৌড়ীয় নৃত্যের সর্বশেষ নিবেদন ‘পুতনমোক্ষ’।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত