২৫ আগস্ট: নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৫৬
নারীবাদ ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে খ্যাত লেখক ও চিকিৎসক তসলিমা নাসরিনের ৫৭তম জন্মদিন আজ। ১৯৬২ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
তার পিতা রজব আলী পেশায় চিকিৎসক ছিলেন এবং মা ঈদুল ওয়ারা একজন গৃহিণী। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ১৯৭৬ সালে তিনি ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং ১৯৭৮ সালে তিনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পাস করেন। ১৯৮৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল তিনি সরকারি গ্রামীণ হাসপাতালে এবং ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তেরো বছর বয়স থেকে কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে সাহিত্যের জগতে তার আগমন। ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তসলিমার কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি সেঁজুতি নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন।
১৯৮৬ সালে শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা নামক তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেন। ১৯৯২ সালে নির্বাচিত কলাম নামক প্রবন্ধসঙ্কলন এর জন্য তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের মুসলিমদের দ্বারা একটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের ওপর অত্যাচারের পটভূমিতে লজ্জা নামক তার পঞ্চম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি প্রকাশের পরপরই মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক নিষিদ্ধের দাবি উঠে। সে বছর তাকে বইমেলায় প্রবেশ করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। একই বছর অক্টোবর মাসে কাউন্সিল অব ইসলামিক সোলজার্স নামক এক সংগঠন তসলিমার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করলে তসলিমা নাসরিনের সাতটি আত্মজীবনী গ্রন্থের অধিকাংশ বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি ১৯৯৪ সালে সুইডেনে ও ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে বসবাস করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি সুইডেন ফিরে যান। সেখানে রাজনৈতিক নির্বাসিত হিসেবে তিনি জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি লাভ করেন। সুইডিশ কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা এই সময় তিনি সুইডেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই সময় মায়ের অসুস্থতার কারণে তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিকট দেশে ফেরার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি ত্যাগ করে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ থেকে তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পান ও বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি পুনরায় দেশ ত্যাগ করেন এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন।
১৯৯৯ সালে তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'আমার মেয়েবেলা' বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। তবে ২০০০ সালে এই বইয়ের জন্য তসলিমা দ্বিতীয়বার আনন্দ পুরস্কার জয় করেন।
২০০০ সালে তিনি ভারতে প্রবেশ করার অনুমতি পেলে তিনি কলকাতা যাত্রা করেন। ২০০২ সালে তসলিমার পিতা মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলে তিনি পুনরায় বাংলাদেশ প্রবেশের জন্য আবেদন করে ব্যর্থ হন।
২০০২ সালে তার দ্বিতীয় আত্মজীবনী 'উতাল হাওয়া', ২০০৩ সালে তার তৃতীয় আত্মজীবনী 'ক' এবং ২০০৪ সালে 'সেই সব অন্ধকার' নামক তার চতুর্থ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
বর্তমানে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থান করছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় লেখালেখির পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সাময়িকী এবং পত্রপত্রিকায়ও নিয়মিত লেখালেখি করছেন।