জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শিল্পকলায় ‘বাউলগান’
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০১৬, ১৯:৩৪
![](https://bangla.jagoroniya.com/templates/jagoroniya-v1/images/jagoronia.png)
![](/assets/news_photos/2016/08/14/image-1924.jpg)
উগ্রবাদ– জঙ্গিবাদ ও হিংসার বিরুদ্ধে শান্তির বাণী ছড়াতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে শান্তির অনুসারী বাউলরা জড়ো হয়েছেন রাজধানীতে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মুখর হয়েছে বাউলসাধক ও ফকিরের পদচারণায়। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী আয়োজনটির তৃতীয় দিন ছিল গতকাল শনিবার (১৩ আগস্ট)।
এদিন সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাউলসংগীত সংরক্ষণ’–বিষয়ক আলোচনা। আর সন্ধ্যায় মরমি গানের আসর। একাডেমি আয়োজিত ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল সকালের আলোচনায় উঠে আসে জঙ্গিবাদের উত্থান রোধে সারা দেশে বাউলসংগীত ছড়িয়ে দেওয়া, লালনের দর্শন প্রচারে দেশব্যাপী উদ্যোগ নেওয়া, বাউলদের নিগৃহীত হওয়ার বিষয়টিসহ নানা বিষয়। আলোচকরা বলেন ‘একজন বাউলসাধকের কোনো জাগতিক চাওয়া-পাওয়া নেই। নেই কোনো ঘরবাড়ি বা বিষয়-সম্পত্তি। সৃষ্টির মাঝেই তারা স্রষ্টার সান্নিধ্য কামনা করে। পালন করে মানুষ ভজনের ধর্ম। লালনের গান ও দর্শনে প্রচার করে মানবতার বাণী। গুরুভক্তির মাধ্যমে সত্যকে ধারণ করে খুঁজে নেয় শান্তির পথ। অথচ সেই শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোকে শুধু গান গাওয়ার অপরাধে প্রায়শই অহেতুক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আমাদের শব্দ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বাউলগান গাইতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হয়। এভাবেই মানুষরূপী অমানুষদের অপতৎপরতায় রুদ্ধ হয় লালনের গান তথা মানবতা ও শান্তির দর্শন।
সারা দেশের জেলা শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে মানবতাবাদী দর্শনের এই গান। কর্মশালাসহ নানা আয়োজনে নতুন প্রজন্মের মাঝে এই সুস্থ ধারার বীজটি বুনে দিতে হবে। তাহলেই এই দেশ মৌলবাদের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে খুঁজে পাবে আলোর পথ। কারণ, এখানে নেই কোনো জাতপাত বা ধর্মের বিভাজন। দেশে বাউলসাধকের ৪৫০ থেকে ৫০০টি আখড়াবাড়ি আছে। আমরা ভক্তদের নিয়ে বছরে একটি উৎসবের আয়োজন করি। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেই অনেক সময় এই উৎসব করতে পারি না। দুস্থ কোনো বাউল কখনো পায় না কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা।’
সভাপতির বক্তব্যে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্বে দেবেন বাউলরা। লালনের দর্শনই বাঁচাতে পারে উগ্রবাদে আক্রান্ত বিশ্বকে। কারণ, সর্ব ধর্মের সম্মিলনই হচ্ছে লালনের দর্শন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে সুপারিশ করা হবে যেন বাউলদের সংস্কৃতিচর্চায় কোনো বাধা না আসে। এ ছাড়া আমরা কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন একাডেমিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এই সাজানোটা যেন বাউলদের চর্চা ও সাধনার উপযোগী হয়, সেদিকেও লক্ষ থাকবে। এ ছাড়া আমরা প্রতিটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বাউলসংগীত কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে এই কর্মশালা শুরুও হয়েছে। এ ছাড়া একাডেমির উদ্যোগে প্রতিটি জেলায় পৃথকভাবে ফোকলোর সেল গঠন করা হবে।’
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিসচিব আক্তারী মমতাজ। এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন ইউনেসকো জাতীয় কমিশনের সচিব মো. মনজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা নাহির শাহ, লোকসংগীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
সকালের আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ শীর্ষক মরমি গানের আসর। সুরে সুরে মানবতা ও শান্তির বাণী উচ্চারিত হয়।