আমার কোনো জাত, শ্রেণি বা ধর্ম ছিল না
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০১৬, ০০:২২
[যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ‘অল্টারনেটিভ রেডিও ইন বোল্ডার’-এর পরিচালক ডেভিড বার্সামিয়ান ২০০৭ সালে ভারতে আসেন। সে বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তিনি অরুন্ধতী রায়ের একটি সাক্ষাতৎকার গ্রহণ করেন। এটি ‘দ্য প্রগ্রেসিভ’ ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ১৬ জুলাই, ২০০৭-এ। সেই সাক্ষাৎকারটিই অনুবাদ করেছেন মোস্তফা জামান অপু।]
আপনি কেরালায় জন্মগ্রহণ করেছেন। সেখানকার নারীদের অবস্থা কেমন?
কেরালার নারীরা ভারত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কর্মরত যারা তাদের অর্জিত অর্থ বাড়িতে পাঠিয়ে থাকে। এরপরও, বিয়ের সময় তারা তাদের স্বামীকে যৌতুক দিতে বাধ্য হয় এবং বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে এক বিচ্ছিরি রকমের সম্পর্ক বজায় রাখতে হয় যেখানে তারা তাদের স্বামীর আজ্ঞাধীন। আমি কেরালার এক ছোট্ট গ্রামে জন্মেছিলাম। সেটা আমার জন্য ছিল দুঃস্বপ্ন। আমি এই বাস্তবতা থেকে পালাতে, বেরিয়ে আসতে চাইতাম, চাইতাম কখনোই যেনো বিয়ে করতে না হয়। তারা অবশ্য আমাকে বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছিল না (হাসি)।
একটি মেয়ে যতটা খারাপ হতে পারে আমি ঠিক ততটাই ছিলাম—শীর্ণ, কালো এবং ধূর্ত।
আপনার মা তো একজন প্রথাবিরোধী নারী ছিলেন..
তিনি এক বাঙালি হিন্দুকে বিয়ে করেছিলেন, তার চাইতেও খারাপ ব্যপার হলো তিনি তাকে ডিভোর্স দেন। ফলত, সবাই এ ব্যপারে নিশ্চিত হয়েছিল যে প্রথম কর্মটিই একটি ভয়ানক ঘটনা ছিল। কেরালায় সবারই বংশপরিচয় আছে, এই ব্যপারটাকে ‘থারাওয়াদ’ বলে। আপনার বাবা না থাকার অর্থ হলো আপনার কোনো ‘থারাওয়াদ’ নেই। আপনি একজন ঠিকানাহীন মানুষ। তারা এভাবেই আপনাকে সম্বোধন করবে। আমি আয়মানাম গ্রামে বড় হয়ে উঠেছিলাম। এই গ্রামের প্রেক্ষাপটেই “দ্য গড অব স্মল থিংস” রচিত হয়েছে। আমার ক্ষেত্রে সবকিছু যেভাবে ঘটেছে তাতে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানোটাই সহজ। কারণ একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত ভারতীয় মেয়েকে যে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয় আমার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। আমাদের দেখাশোনা করার কথা বলে বিনিময়ে মাঝে মাঝে আমাদেরকে পেটানোর জন্য আমার কোনো পিতা ছিল না। আমার ছিল না কোনো জাত, শ্রেণি বা ধর্ম, চোখে ছিল না ঐতিহ্যের ঠুলি, চশমায় ছিল না ঐতিহ্যের কাচ, যেগুলি গা থেকে ঝেড়ে ফেলা সত্যিই কঠিন। সম্ভবত আমিই ভারতের একমাত্র মেয়ে, মা যাকে বলতো, “আর যাই করো না কেনো কখনো বিয়ে করো না” (হাসি)। বিয়ের আনুষ্ঠানে কনে দেখলে আমার গায়ে যেনো ফুসকুড়ি উঠতো। এদেরকে আমার প্রায় পৈশাচিক মনে হতো। অলংকারসজ্জিত এই প্রাণিটিকে আমার জ্বলন্ত কাঠের মতো ভয়াবহ লাগতো যেমনটা আমি আমার উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’-এ লিখেছিলাম।
আপনার মায়ের সম্পর্কে আরও কিছু বলুন।
তিনি ছিলেন ‘ফেলিনি’র সিনেমার বিপথগামী কোনো চরিত্রের মতো। পুরোপুরিই একরোখা ছিলেন। কখনও একজন পুরুষ মানুষের প্রয়োজন হয়নি এমন একজন নারীকে দেখা, এটাও যে সম্ভব তা জানা এক অসাধারণ ব্যাপার। এভাবে যন্ত্রণা না পেয়ে বেঁচে থাকাটা সত্যিই আশ্চর্যের। আমরা অনেক উড়ো চিঠি পেতাম। আমার মা একটি স্কুল চালাতো যা ছিল দৃশ্যত সফল। লোকজন তাদের সন্তান জন্মাবার আগেই এই স্কুলে তাদের সন্তানদের নাম লিখিয়ে নিতো। তারা বুঝতে পারতো না আমার মা’কে বা আমাকে নিয়ে কি করা যায়। আমরা দুজনই নারী এবং তাদের ভাষায় প্রথাবিরোধী যা ছিল প্রধান সমস্যা। আমরা অন্তত পক্ষে অসুখী হতে পারতাম। কিন্তু আমরা তাও হতে পারিনি যা তাদের জন্য পীড়াদায়ক।
কেরালায় কিন্তু আমার মায়ের বেশ একটা পরিচিতি আছে। কারণ ১৯৮৬ সালে তিনি ভারতে প্রচলিত সিরিয়ান খ্রিষ্টান উত্তরাধিকার আইন সংশ্লিষ্ট জনগুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা জিতেন। এই আইন আনুযায়ী নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাবেন পিতার সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ অথবা ৫০০০ রুপি (এ দুটির মধ্যে যেটির পরিমাণ কম সেটি)। বস্তুত ১৯৫৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে এই আইন বাতিল করে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীর জন্য সমধিকার নিশ্চিত করে। কিন্তু খুব অল্প নারীই এই রায়ের সুবিধা নিতে পারে। চার্চগুলি এ বিষয়ে এতটাই তৎপরছিল যে তারা পিতাদেরকে সম্পত্তি উইল করতে প্ররোচনা দিত যাতে তারা তাদের কন্যাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্ছিত করতে পারে। এ এক অদ্ভুত ধরনের জুলুম যা সেখানে হয়ে আসছে।
আপনার উপন্যাসটি লেখার পর থেকে আপনি উল্লেখযোগ্যভাবে রাজনৈতিক প্রবন্ধই লিখে যাচ্ছেন। এই রূপান্তরটি কেমন ছিল?
দেশের বাইরের লোকেদের কাছেই কেবল এটিকে একটি রূপান্তরের মতো মনে হয়, কারণ ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ লেখার পর থেকেই তারা আমাকে চিনতে শুরু করেছে। আসলে উপন্যাস লেখার আগে থেকেই আমি রাজনৈতিক প্রবন্ধ লিখে আসছি। ফুলন দেবী নামের এক নারীকে নিয়ে আমি লিখেছিলাম ধারাবাহিক প্রবন্ধ ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান রেইপ ট্রিক’। ‘ব্যান্ডিট কুইন’ নামের সিনেমায় তাকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং অনুমতি ছাড়া জীবিত ধর্ষিত এক নারীর ধর্ষণের ঘটনা যেভাবে পুনরায় দৃশ্যায়ন করা হলো তেমনটা করার অধিকার কারো আছে কিনা এই বিষয়গুলি নিয়েই ছিল আমার এই প্রবন্ধ।
‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ এবং আমার প্রবন্ধগুলির মাঝে আমি তেমন কোনো পার্থক্য দেখি না। আমি সবসময়ই বলে এসেছি, আখ্যানই হলো সত্য। আখ্যানের মতো সত্য আর কিছু কখনোই ছিল না। এই পার্থক্যকে দূর করাই আমার প্রচেষ্টার লক্ষ্য। লেখক কোন কিছুকে বোধগম্য করার ক্ষেত্রে ধাত্রী হিশেবে কাজ করে। রাজনীতিকে গল্পের আঙ্গিকে তুলে ধরা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে এটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। একজন ব্যক্তি ও তার সন্তানের মধ্যে সম্পর্ক, গ্রাম থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে গ্রামে কি ফলসে পেতো তার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের মিস্টার ওলফেনসন কীভাবে জড়িত এসব আমি দেখাতে চাই। এটাই আমি করতে চাই। ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ এমনই এক বই যেখানে আপনি সবচাইতে ছোট জিনিসগুলির সঙ্গে সবচাইতে বড় জিনিসগুলিকে সংযুক্ত করতে পারবেন : হতে পারে জলের ওপরে এক মাকড়শার বাচ্চার ক্ষীণ আলোড়ন অথবা নদীর জলে চাঁদের আলোর বিচ্ছুরণ অথবা আপনার জীবনে, ঘরে, শয়নকক্ষে রাজনীতির অনধিকার প্রবেশ।
আপনার উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এস্থা’কে বিশ্ব ব্যাংকের লোনের টাকায় আনা মল এবং কীটনাশকের দুর্গন্ধপূর্ণ নদীর পাড়ে হাঁটতে দেখা যায়। নর্মদা নদী সংশ্লিষ্ট উপত্যকা অঞ্চল নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ হাজারটিরও বেশি বাঁধ বানানোর কথা। ব্যাংক যখন এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ালো তখন ভারত সরকার এই প্রকল্প নিজেদের হাতে তুলে নিল। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন সম্পর্কে কিছু বলুন।
যখন আমি প্রথম নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষের সংস্পর্শে আসি তারা আমাকে বলে, ‘আপনার ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ পড়েই আমরা বুঝেছি যে আপনি বিশ্ব ব্যাংক এবং বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন।’ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এতে সর্ব স্তরের ভারতীয়দের সম্মেলন ঘটে। এটি ছিল আদিবাসী, উচ্চ বর্ণের বড় কৃষক, দলিত (অস্পৃশ্য) এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যকার জোট। শহরের সঙ্গে গ্রামের, কৃষকের সঙ্গে জেলের, লেখকের এবং চিত্রকরের সংযোগ ঘটিয়েছিল এই আন্দোলন। এই বিষয়টিই এই আন্দোলনকে দিয়েছিল বিস্ময়কর শক্তি। আবার একই কারণেই এই আন্দোলনকে অনেকে সমালোচনা করেছিল এই বলে যে এটা তো মধ্যবিত্তদের আন্দোলন। এ সব শুনলে রাগ লাগে। মধ্যবিত্ত শহুরে ইঞ্জিনিয়াররা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। আপনি এটা আশা করতে পারেন না যে শুধু আদিবাসীরাই সমালোচনা করবে। আপনারাই তাদেরকে এভাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন যাতে তাদেরকে সহজেই কাবু করা যায়। বিভিন্নভাবে এই আন্দোলনে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণকে অন্যায্য হিশেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি করে এই মানুষগুলির পক্ষে কথা বলো?’ কেউই কারো পক্ষে কথা বলছে না। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন একটি অসাধারণ উদাহরণ যেখানে বর্ণ ও শ্রেণি চেতনার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ একে অপরের দিকে হাত বাড়িয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের পর এটি সবচাইতে বড়, সুন্দর, চমৎকার আন্দোলন।
নর্মদার পাড়ে একটি গ্রামে প্রতিরোধ সমাবেশে আপনি অংশ নিয়েছিলেন যেখানে প্রস্তাবিত বাঁধগুলির একটি হওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া অনেকের মধ্যে আপনিও ছিলেন। এই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সত্যিই অসাধারণ। আমি ছিলাম শালগাঁও নামের এক গ্রামে। সারারাত ট্রাকটরে, মোটরকারে, পায়ে হেঁটে উপত্যকা জুড়ে মানুষ জড়ো হতে লাগলো। রাত তিনটার দিকে আমরা প্রায় পাঁচ হাজার জন হলাম। আমরা অন্ধকারে বাঁধের দিকে চলতে শুরু করলাম। পুলিশ আগেভাগেই জেনে গিয়েছিল যে বাঁধ দখল করা হবে কিন্তু লোকজন কোথা থেকে আসছিল তা তারা বুঝতে পারেনি। সেখানে ছিল বিশাল বিপর্যস্ত এলাকা। তাই আমরা অন্ধকারেই হাঁটছিলাম। এটা ছিল ভারী অদ্ভুত। পাঁচ হাজার লোকের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল গ্রামবাসী। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল শহুরে উকিল, স্থপতি, সাংবাদিক যারা সবাই নিরবে পথ পাড়ি দিচ্ছিল এবং পেরিয়ে যাচ্ছিল ঝর্ণা। কেউ বিড়ি ধরাচ্ছিল না, কাঁশছিল না এমনকি গলা পরিস্কার পর্যন্ত করছিল না। মাঝে মাঝে মহিলাদের একটা দল একযোগে প্রস্রাব করতে বসে যাচ্ছিল এবং আবার উঠে হাঁটছিল। অবশেষে খুব ভোরে আমরা পৌঁছালাম এবং বাঁধ দখল করে নিলাম। চার ঘন্টা পুলিশ আমাদেরকে ঘেরাও করে রেখেছিল। এরপর লাঠি-চার্জ করা হলো। আমাকে সহ হাজারখানেক লোককে তারা গ্রেপ্তার করলো। হাজত পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো।
আপনি বলেছিলেন যে ভারত সরকার এই প্রকল্প শেষ করার ব্যাপারে নাছোড়বান্দা। কী তাদেরকে চালিত করছিল?
এখানে অনেকগুলি বিষয় আছে। প্রথমত আপনাকে বুঝতে হবে যে বাঁধ সম্পর্কিত মিথ আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল আমাদেরই পাঠ্য বইতে যখন আমাদের বয়স তিন বছর। নেহেরু বলেছিলেন, ‘বাঁধ হলো আধুনিক ভারতের মন্দির।’ ফলে সেগুলি যেন হয়েওঠে বিশাল ভেজা ভেজা ভারতীয় পতাকা। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের আগে মনে হচ্ছিল যেন বাঁধ আমাদেরকে বিছানায় সকালের নাস্তা এনে দিবে, এটা আপনার মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করবে এবং জন্ডিস হলেও তা সারিয়ে দিবে। জনগণকে বুঝতে হবে যে রাজনৈতিক দুর্নীতির কাছে তারা মূর্তির মতো, এবং খুবই অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হতেই তাদের উৎপত্তি। আপনি প্রাকৃতিক সম্পদকে মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে কেন্দ্রে মজুত করছেন এবং সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কাকে এ সম্পদ দান করবেন।
নর্মদার ওপর নির্মিত প্রথম বাঁধ ‘বার্গি’ যার নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯০ সালে। জানা যায় এটি ৭০,০০০ মানুষকে গৃহহীন করেছিল ডুবিয়ে দিয়েছিল ১০১টি গ্রাম। একদিন হঠাৎ কোন ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সরকার জলাধার পূর্ণ করে দেয় যার ফলে ১,১৪,০০০ লোক উচ্ছেদ হয় এবং ১৬২টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানি উপচে উঠলে লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। তারা তাদের সন্তান ও গবাদী পশু নিয়ে পাহাড়ে উঠে পড়েছিল। ১০ বছর পর দেখা গেল বাঁধ নির্মাণের ফলে যে পরিমাণ জমিতে পানি সর্বরাহ করার কথা তার মাত্র ৫ শতাংশেই কেবল সেঁচের মাধ্যমে পানি সর্বরাহ সম্ভব হয়। যে পরিমাণ জমি এই বাঁধের ফলে তলিয়ে যায় তার চেয়েও কম জমিতে পানি সর্বরাহ করা সম্ভব হয়। তারা কোন খাল খনন করেনি। কারণ কন্ট্রাক্টর এবং রাজনীতিবিদদের জন্য শুধু বাঁধ নির্মাণ করাটাই আনেক টাকার ব্যাপার।
যাদেরকে উচ্ছেদ করা হলো তাদের কী হলো?
কেউই তা জানে না। আমি যখন ‘দ্য গ্রেটার কমন গুড’ লিখতে শুরু করলাম তখন হারিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এবং টিকে থাকা মানুষের সংখ্যা জেনে আমি আতঙ্কিত হই। বড় বাঁধগুলির কারণে ঠিক কত লোক স্থানচ্যুত হয়েছিল তার কোন সঠিক হিসেব ভারত সরকারের কাছে নেই। আমার মতে এটা শুধু মাত্র রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয় এটা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়েরও ব্যর্থতা। অনুপস্থিত লোকের এই সংখ্যার পিছনে কারণ হলো তারা ছিল অ-জনগণ, আদিবাসী এবং দলিত। আমি ভারতীয় জনপ্রশাসন সংস্থা কর্তৃক নির্মিত ৫৪টি বাঁধের বৈধতা যাচাই করি। এই নীরিক্ষায় জানতে পারলাম বাঁধ নির্মাণের কারণে উচ্ছেদের ফলে গড়ে প্রতি বাঁধে ৪৪,০০০ লোক বাস্তুহারা হয়েছে যা কিনা অনেক রকমের উচ্ছেদের মধ্যে একটি। ধরা যাক এই ৫৪টি বাঁধ বড় সড় বাঁধগুলির মধ্যে সবচাইতে বড়। যে গড় আমরা পেলাম তার চার ভাগের এক ভাগ আমরা গ্রহণ করি। গত ৫০ বছরে ভারতে এমন ৩,৬০০টি বড় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে বাঁধ নির্মাণের ফলে ৩৩ মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা সবাই শহরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেও তারা নাগরিকের মর্যাদা পায়নি, বাস করছে বস্তিতে। যেকোন মুহূর্তে তাদেরকে বিতাড়িত করা হতে পারে যদি নতুন দিল্লির উচ্চবিত্ত গৃহিনীরা মনে করে যে এই বস্তিবাসীরা বিপদজনক।
আপনি এই উচ্ছেদকে ময়লা পরিষ্কার করার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এটা সত্যই তাই। অহিংস প্রতিরোধের ধারণাটি ভারত সরকার তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। অহিংস প্রতিরোধ এবং অহিংস শাসন। চীন, তুরস্ক বা ইন্দোনেশিয়ার মতো ভারত তার জনগণকে দমিয়ে রাখে না। যারা সরতে চায়না তাদেরকে ভারত সরকার মেরে ফেলে না। এই সরকার ধৈর্যের সঙ্গে তাদেরকে বের করে দেয়। তাদের যা করার তা তারা করেই যায় এবং এর ফলাফলকে অগ্রাহ্য করে। এই সমাজে বর্ণপ্রথা রয়েছে, সমাজের রীতিটাই এমন যে যারা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের সঙ্গে যারা সিদ্ধান্তের কারণে ভোগান্তি পোহায় তাদের কোন সম্পর্ক নেই। ফলে এভাবেই সবকিছু চলতে থাকে এবং রাষ্ট্র যা চায় তাই করে। মানুষ মনেকরে এটাই তাদের কপালের লেখন। উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এটা একটি ঝামেলাহীন প্রক্রিয়া। তাই, বিশ্বব্যাপী ভারতের সুখ্যাতি রয়েছে যত্নশীল গণতান্ত্রিক দেশ হিশেবে যার হাতে রয়েছে অনেক কিছু। অথচ, এই সরকার সমস্যাই সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
আপনি আপনার নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন যে আপনি উন্নয়ন বিরোধী উন্মাদ নন অথবা আপনি সব ঐতিহ্য ও আচারের জন্য ঝাণ্ডাধারী কোনো ধর্ম প্রচারক নন।
কীভাবে আমি তেমনটা হবো? আমি এমন একজন নারী যে কিনা গ্রামে বড় হয়েছে এবং সারা জীবন প্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছ। আমার পক্ষে প্রথামাফিক ভারতীয় গৃহিণী হওয়া সম্ভব ছিল না। সুতরাং আমি উন্নয়ন বিরোধী কোন কিছুর কথা বলছি না। আমি বলছি উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতির কথা। আমি বলছি কিভাবে এই সম্পূর্ণ এক কেন্দ্রিক, অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে ভেঙে ফেলা যায় তার কথা। কিভাবে বিকেন্দ্রিকরণকে সম্ভব করা যেতে পারে যাতে করে জনগণ তাদের নিজের জীবনের ওপর এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব ফিরে পাবে? এখন সরকার ব্যক্তি মালিকানাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিকল্প হিশেবে জনগণের কাছে উপস্থাপন করছে। কিন্তু বেসরকারিকরণ হলো এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্রের বিবর্তিত রূপ যেখানে রাষ্ট্র বলতে পারে যে মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব এনরনের (Enron) হাতে তুলে দেয়ার অধিকার তাদের আছে। তাদের সেই অধিকার নেই। ভারতে গত ৫০বছরে সরকারি খাতে যতো অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়েছে তার সবই জনগণের টাকায়। এনরনের কাছে এটা বিক্রি করার অধিকার তাদের নেই। তারা এটা করতে পারে না। আমাদের দেশে ৪ ভাগের ৩ ভাগ লোক বাজার অর্থনীতির প্রান্তে বসবাস করছে। আপনি তাদেরকে বলতে পারেন না যে যাদের কেনার সামর্থ্য আছে তারাই শুধু পানি পাবে।
আমার এখনও মনে হয় বিশ্বায়নের জোয়ারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে আপনি যাকে বলেন “সহজাত নৈরাজ্য (Inherent Anarchy)” তার ওপরই আশা রাখেন।
আশা করার মতো কিছু আছে কি নেই তা জানি না। শুধু জানি বিশ্বায়নের উপযুক্ত জবাব হলো বিরোধিতা করা। আমি যখন শহরের বাইরে থাকি তখন আশান্বিত হই। ভারতের রয়েছে এমনই বিশালতা ও সৌন্দর্য। আমি ভাবতে ভালোবাসি যে তারা কখনোই একে গ্রাস করতে পারবে না। আমার মনে হয় না শাড়ির মতো সুন্দর কোন কিছু পৃথিবীতে আছে। আপনি একে ধ্বংস করতে পারবেন? আপনি কি শাড়িকে কর্পোরেট রূপ দিতে পারেন? কেন এই বহুজাতিকেরা এসে বাসমতি চালের প্যাটেন্ট নিতে চাইবে? ম্যাকডোনাল্ডের বার্গারের চাইতে মানুষ রুটি, ইদলিস ও দোসা খেতে পছন্দ করে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার ঠিক আগে আগে আমি দিল্লির এক বাজারে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছিলাম থালা ভর্তি বিভিন্ন ধরনের ডাল। আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। এখন এভাবেই কান্না আসে, থালাভর্তি ডাল ভাত দেখে এবং এই ভেবে যে তারা চায় না এগুলির অস্তিত্ব থাকুক।
উপমহাদেশে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা সম্পর্কে আপনার লেখা ‘দ্য এন্ড অফ ইমাজিনেশন’-এ আপনি যে সব বিষয় রেখেছেন সেগুলি সম্পর্কে কিছু বলুন।
এটা ছিল ভীতিকর, বাতাসে ভাসছিল জাতীয়তাবাদ। আমি আতংকিত হয়েছিলাম। একে কাজে লাগিয়ে যে কোন কিছু করা সম্ভব। আমি জানি এটা একটা বিপদজনক পৃথিবী যেখানে ভারত, পাকিস্তান এবং আমেরিকার মতো দেশগুলি অন্যদের দমন করতে পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ করছে এবং নিজেদের লোককে ধোঁকা দিচ্ছে। পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা ছিল উড়ন্ত আত্মাভিমানকে বাঁচিয়ে রাখার একটি পন্থা। ভারত এখনও সাংস্কৃতিক আপমানে জর্জরিত, এখনও আত্মপরিচয় খুঁজছে। বিষয়টা এমনই।
আপনি একবার বলেছিলেন, পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা উদযাপনকারী উৎফুল্ল হিন্দুদের সঙ্গে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলায় রোমাঞ্চ অনুভব করা হিন্দুদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
এই সময়ে ভারতের বুদ্ধিজীবীরা যখন মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তখন উগ্রভাবেই বলে, কিন্তু, খুব কমই আছেন যারা বিশ্বায়ন, বেসরকারীকরণ এবং মৌলবাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। ভারতের সম্ভ্রান্ত লোকেদের সঙ্গে বিশ্বায়নের ধারণা মিলে কিন্তু মৌলবাদ মিলে না। এটা একটা শ্রেণি সমস্যাও বটে। মানুষ অনেক সময় চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়নে বাধা দেয় অথবা বই পুড়িয়ে ফেলে। ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থি এই অভিযোগে এ কাজ করা হলেও এটিই একমাত্র কারণ নয়। তারা আরও বলে, আপনি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত, বলে, সম্ভ্রান্ত ইংরেজি বলা লোকেরা বেশি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। এটা খুবই কৌতূহলোদ্দিপক ব্যপার। আমার মনেহয় এ দুটো বিষয় একই সঙ্গেই বলা উচিৎ, আলাদাভাবে নয়। ধর্মীয় দক্ষিণপন্থা সরাসরি বিশ্বায়ন এবং বেসরকারিকরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যখন ভারত তার বিদ্যুৎ খাত বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলে, যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি উষ্ণ ও অস্বস্তিকর হয়ে উঠে, তখন বিলম্ব না করে সরকার বলতে শুরু করে, বাবরি মসজিদের পাশে একটি হিন্দু মন্দির নির্মাণ করা কি আমাদের উচিৎ হবে? সবাই তখন একইভাবে চিৎকার জুড়ে দেয়। এটা একটা খেলা। এই খেলা আমাদেরকে বুঝতে হবে। একদিকে আপনি দেশটাকে বহুজাতিক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন অপরদিকে আপনি পারমাণবিক বোমা দিয়ে আপনার সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে চাইছেন। এটা সত্যিই এক বিদ্রুপ! আপনি বলছেন যে পৃথিবী একটি বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হচ্ছে। আবার আপনি পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে কোটি কোটি রূপি খরচ করতে চান।
আপনি একটি রূপক ব্যবহার করেছিলেন দুটো ট্রাক নিয়ে। একটি ছিল বেশ বড় যা অনেক লোকজন নিয়ে অন্ধকারের দিকে যাচ্ছিল। অপরটি অপেক্ষাকৃত ছোট এবং তা প্রতিশ্রুত আলোর দেশে যাচ্ছিল। আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা ব্যাখ্যা করুন।
ভারত একই সঙ্গে বিভিন্ন শতাব্দীতে বসবাস করছে। প্রতিরাতে আমি আমার বাসার কাছে রাস্তার ধারে ক্ষীণকায় একদল মজুরকে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের জন্য পরিখা খনন করতে দেখি যাতে আমাদের ডিজিটাল বিপ্লব তরান্বিত হয়। তারা অল্প কিছু মোমবাতির আলোতে কাজ করে। ভারতে এমনটাই ঘটছে। যে ট্রাকটি অন্ধকারে মিশে গেলো তার কোন কণ্ঠস্বর নেই। টেলিভিশনের পর্দায় একে দেখা যায় না। জাতীয় দৈনিকের পাতায় এর স্থান নেই। সুতরাং এটার কোন অস্তিত্বই নেই। ছোট ট্রাকে যারা পৃথিবীর উচ্চ স্থানে উজ্জ্বল গন্তব্যের দিকে চলেছে তারা অন্যটিকে দেখার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে।ফলে দিল্লির গাড়িগুলি আরও বড় এবং মসৃণ হয়ে উঠছে, হোটেলগুলি জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে, ফটকগুলি হচ্ছে আরও উঁচু এবং দ্বরোয়ানরা আর সেই পুরনো চৌকিদার নেই, তারা হয়ে উঠেছে অস্ত্রধারী “ওয়াচম্যান”। আর গরিবদেরকে উকুনের মতো শহরের ফাঁক-ফোকড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জনগণ আর তা দেখতে পাচ্ছে না। এটা অনেকটা এরকম, আপনি এক জায়গায় উজ্জ্বল আলো জ্বেলে রেখেছেন যার ফলে এর চারদিক অন্ধকার আরও গভীর হয়ে উঠেছে। তারা জানতে চায় না কি ঘটছে। যে লোকগুলি ধনী হচ্ছে তারা কখনো কল্পনাও করতে পারবে না এই অন্ধকার জগত কোন ভালো জায়গা নয়।
আপনি সেই বড় ট্রাকের একজন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অথবা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে আপনি সেই ট্রাকেরই একজন হবেন।
আমি সেই বড় ট্রাকের অংশ হতে পারি না কারণ এটা এমন কোন বিষয় না যা আপনি বেছে নিতে পারেন। আমি যে একজন শিক্ষিত ব্যক্তি এটাই আমাকে সেই ট্রাকের একজন হতে দিচ্ছে না। আমি সেটায় চড়তেও চাই না। আমি শিকারে পরিণত হতে চাই না। আমি চাই না অন্ধকারে হারিয়ে যেতে। আমি একজন শিল্পী এবং লেখক। আমি ভাবি ব্যক্তি নিজেকে ছবির মধ্যে দেখে বুঝতে চায় তাকে কোথায় মানাবে। আমার যখন ষোল বছর বয়স তখন ঘর ছাড়ি। আমি এমন সব জায়গায় বসবাস করেছি যেখানে খুব সহজেই আমি পতিত হতে পারতাম। আমি বড় ট্রাকটির একজন হতে পারতাম কারণ আমি ছিলাম নারী এবং একা। ভারতে এটা কোন ছেলেখেলার বিষয় নয়। খুবই বাজেভাবে আমার শেষ হতে পারতো। আমি ভাগ্যবান যে আমার তা হয়নি।
আমার মনে হয় আমার চোখ বন্ধ হয় না, সর্বক্ষণের জন্য খোলা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় চোখ বন্ধ করি এবং অন্যদিকে ফিরি। সবসময় এধরনের কাজ করে যেতে চাই না আমি। আমি কাজ দ্বারা তাড়িত হতে চাই না। আজকে আমি যা হয়ে উঠেছি এবং ভারতে আমি যে অবস্থানে আছি তা আমাকে বার বার জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে। এটা ক্লান্তিকর। “দেখ আমি একজন মাত্র ব্যক্তি। আমার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়।”... একথা বলাটা খুবই কঠিন। আমি চাই না আমার হাড়-মাংস শুকিয়ে যাক এবং আমার কৌতুকবোধ লোপ পাক। কিন্তু, যখন আপনি কিছু দেখে ফেলেন তখন কোনোভাবেই তাকে অদেখা বানাতে পারবেন না। কোনকিছু না দেখা একটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যা কিছু দেখে ফেলারই মতো।
আপনি কি নতুন কোনো ফিকশন লেখার কথা ভাবছেন?
ফিকশন আমার জন্য খুবই জরুরী যেমনটা আপনার জন্য খাদ্য গ্রহণ বা ব্যায়াম জরুরী। কিন্তু, এখন এটা সত্যিই কঠিন। এ মুহূর্তে আমি জানি না আমার জীবনটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো। আমি জানি না কীভাবে আমি সেই অবস্থানে পৌঁছাবো যখন বলতে পারবো, ‘আমি এখন একটা বই লিখছি, আমি এখন অমুক-তমুক করতে পারবো না।’ আমি তেমনটাই চাইতাম।
এইসব ভিতরকার নীরব তাড়নার প্রতি আপনি কি এক ধরনের দায় বোধ করেন যা আপনাকে ডেকে নেয়?
না, করি না, কারণ দায়বোধ একটি বিরক্তিকর শব্দ।
আপনি একজন সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ভারতে এবং ভারতের বাইরে আপনি একজন সেলিব্রেটি।
কিন্তু, আমি সেলিব্রেটি হিসেবে কিছু করি না। আমি যা করি একজন নাগরিক হিসেবে করি। আমি যা লিখি তার পক্ষেই দাঁড়াই এবং আমার লেখাকেই অনুসরণ করি। আমার সম্বন্ধে প্রচারণাকে বিশ্বাস করতে শুরু করা আমার জন্য খুবই সহজ, তা আমার পক্ষেই হোক আর বিপক্ষে হোক। এটা আপনাকে আপনার সম্পর্কে অদ্ভুত ধারণা দেবে। আমি জানি যে আপনার নিজের ক্ষমতাকে প্রসন্ন চিত্তে গ্রহণ করা এবং তার অপব্যবহার করার মধ্যে রয়েছে সুন্দর ভারসাম্য। আমি কখনোই নিজেকে বাকহীনদের প্রতিনিধি হিসেবে কল্পনা করতে পারি না। আমি এটাকে ভয় পাই।
আমার একটা অবস্থান আছে যা আমার মতো চিন্তা করে এমন অনেকেরই নেই। এ কারণে অনেকেরই আমার ওপর ক্ষোভ আছে। “দ্য গড অফ স্মল থিংস” এর প্রতি উদারতা দেখানোটা অনেকের জন্যই ভুল ছিল। কারণ এর মাঝে ঢুকে গিয়েছিল অনেক বাঁধ এবং বোমা।
সূত্র: কথাবলি