বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৫০ বছরে পা দিলো উদীচী
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০১৭, ১২:০০
বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে পা দিলো শোষণহীন, মৌলবাদমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে অবিচল লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
উদীচী’র ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ উপলক্ষে সারাদেশে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা।
২৯ অক্টোবর (রবিবার) বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনের বাইরে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রবীণ কৃষকনেতা কাজী সোহরাব হোসেন।
“চলছি তো অবিরাম মানুষের মিছিলে, লড়ছি তো মুক্তির শপথে” স্লোগান নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উদ্বোধক কাজী সোহরাব হোসেন। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ। এরপর উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কাজী সোহরাব হোসেন।
উদ্বোধন ঘোষণার পর উদীচী’র সংগঠন সঙ্গীত “আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে” পরিবেশন করেন উদীচী’র শিল্পীরা। এর পরপরই ঢাকের তালে তালে নেচে ওঠেন প্রাঙ্গণে উপস্থিত উদীচী’র শিল্পী-কর্মীসহ সবাই।
বিকাল পাঁচটায় শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনের ভেতরে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান। এ পর্বের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় সদ্য প্রয়াত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী ও উদীচী’র উপদেষ্টা কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল এর জীবনীর উপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগ প্রযোজিত প্রামাণ্যচিত্র “ফায়ারম্যান”।
প্রমাণ্যচিত্রটির গবেষণা ও নির্দেশনা দিয়েছেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিষয়ক সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ।
এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা সভা। এ পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। এছাড়া, আলোচক হিসেবে অংশ নেন প্রখ্যাত শিল্পী আনোয়ার হোসেন, উদীচী’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু, উদীচী’র সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সভাপতি মাহফুজা খানম, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে ছিল বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম-এর সঞ্চালনায় এ পর্বের শুরুতে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীরা। এরপর একক সঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসেন গণসঙ্গীত শিল্পী সোহানা আহমেদ। অনন্য দলীয় পরিবেশনা দিয়ে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেন বহ্নিশিখা এবং ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। ছিল গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিনের একক পরিবেশনা। “হেই সামালো ধান হো, কাস্তেটা দাও শান হো” গানটির সাথে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের নৃত্যশিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের বাচিক শিল্পীরা। এছাড়াও, অনবদ্য একক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণসঙ্গীত শিল্পী অসীম গিরি। ঢাকা ছাড়া, দেশে ও বিদেশে উদীচী’র সাড়ে তিনশ’রও বেশি শাখায় ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় শোভাযাত্রা, পুনর্মিলনী, আলোচনা, সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটকসহ বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা।
দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় আগামী ২৯ অক্টোবর ২০১৭ উদীচী পদার্পণ করতে চলেছে ৫০তম বছরে। শ্রেণি চেতনার আদর্শে প্রতিষ্ঠিত উদীচী জন্মলগ্ন থেকে মানুষে মানুষে বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে গান, আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও চিত্রকলাকে হাতিয়ার করে। সাংস্কৃতিক গণজাগরণ ঘটাতে অতীতের যে কোনো জনগণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের পাশে থেকে রেখেছে সাহসী পদক্ষেপ। মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে উদীচী তাই আগামী দিনেও মানুষের ভালোবাসাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলার প্রত্যয়ে উদযাপন করলো সুবর্ণজয়ন্তী পদার্পণ অনুষ্ঠান।